তেজস্ক্রিয় মৌলসমূহ বিশেষ করে যেসকল পরমাণুর পারমাণবিক ভর খুব বেশি সেসব মৌলের নিউক্লিয়াসকে যদি শক্তিশালী নিউট্রন দ্বারা আঘাত করা হয় তাহলে সে মৌলের নিউক্লিয়াস ভেঙে কম পারমাণবিক ভর বিশিষ্ট নতুন মৌলের সৃষ্টি হয় এবং ক্রমাগত এই বিক্রিয়া চেইনের মতো চলতে থাকে। আর পারমাণবিক মৌলসমূহের এই ভাঙ্গনের ফলে প্রত্যেকবার নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি।
আর পরমাণুসমূহের এই ভাঙ্গনকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া।
তেজস্ক্রিয় মৌল সমূহের ক্ষেত্রে যেই মৌল যত বেশি আনস্টেবল তার নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়ার হার তত বেশি। পারমানবিক বোমা তৈরীর ক্ষেত্রে সাধারণত ইউরেনিয়াম 235 আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় যা অনেক বেশি আনস্টেবল। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে প্রকৃতিতে যে ইউরেনিয়ামের আকরিক পাওয়া যায় তারমধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে ইউরেনিয়াম 238 আইসোটোপ যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা গেলেও বোমা উৎপাদনে ব্যবহার করা যায় না। প্রকৃতিতে পাওয়া ইউরোনিয়াম আকরিকে মাত্র 0.7 শতাংশ ইউরোনিয়াম 235 আইসোটোপ থাকে।
এখন ইউরোনিয়াম আকরিকের মধ্যে থাকা 235 এবং 238 আইসোটোপ দুটিকে আলাদা করা আরো কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে সেন্ট্রিফিউজ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় অথবা ইউরোনিয়াম কে গ্যাসে রূপান্তরিত করে একমুখী ভ্যারিয়ারে প্রবেশ করানো হয় যাতে করে ইউরেনিয়াম 238 আইসোটোপ থাকে ইউরেনিয়াম 235 আইসোটোপ আলাদা করা যায়।
আপনি যদি এই ধাপ অতিক্রম করে ফেলেন তাহলে আপনার কাছ থেকে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এটমিক বোমার ভিতরে Suppercritacal mass তৈরি করা। খুব সহজভাবে বলতে গেলে "সুপার ক্রিটিক্যাল ম্যাস" এমন একটি অবস্থা যেখানে বিশাল বড় বিস্ফোরন ঘটার জন্য বিক্রিয়ার হার হ্রাস পাওয়া যাবেনা। অর্থাৎ চেইন রিএকশন এ প্রথমবার যতগুলো নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটবে পরবর্তীতে তার চাইতে বেশি নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া সংঘটিত হতে হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর পারমাণবিক বোমার ক্ষেত্রে এইখানেই মূল পার্থক্য বিদ্যমান। পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লিতে প্রথমবার যতগুলো নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া সংঘটিত হয় পরবর্তীতে তার চাইতে কম নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া সংঘটিত হয় আর এভাবে একটা সময় পর বিক্রিয়া থেমে যায়।
অন্যদিকে পারমাণবিক বোমার সুপার ক্রিটিক্যাল ম্যাসের ক্ষেত্রে বিক্রিয়ার হার কখনোই কমে না।
Supercritical mass অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে।যেমন ইউরেনিয়াম 235 বিশুদ্ধতা পারমাণবিক বোমার জন্য পারফেক্ট ভেসেল তৈরী করা, ভেসেল এর ভিতর সঠিক মাত্রায়, সঠিক তাপমাত্রায় এবং সঠিক পরিমানে ফিউশনেবল তেজস্ক্রিয় পদার্থ রাখা ইত্যাদি।।
আবার প্রচুর অর্থ, পর্যাপ্ত কাঁচামালএবং দক্ষ জনবল থাকার পরেও পারমাণবিক বোমা তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা দেশের সরকারকে খুব সতর্কতা এবং গোপনীয়তা অবলম্বন করতে হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিয়মাবলির কারনে। আর এই সবগুলো স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে একটি দেশের সরকারের পক্ষে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা কোন মুখের কথা নয়।