ঢাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম ও জনবহুল শহর। এমন শহরে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা কেমন হবে? এটি অনেকাংশে নির্ভর করে কোন ধরনের পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করা হবে তার উপর। এখনো পর্যন্ত হওয়া পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলাফল থেকে বুঝা যায় ঢাকার পরিণতি হবে অকল্পনীয়। তবে প্রথমে পারমাণবিক বোমা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক :--
পারমাণবিক বোমা দুই ধরনের হতে পারে, কিছু পারমাণবিক বোমায় ফিশন বিক্রিয়া ঘটে আবার কিছু বোমায় ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে। এই বিক্রিয়ার ফলে বিপুল পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয়। ফিশন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্লুটোনিয়াম বা ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। আর ফিউশন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হয়। ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ ফিশনের তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর "লিটল বয়" এবং নাগাসাকি শহরে "ফ্যাট ম্যান" নামক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুটো বোমাই ছিলো ফিশন বোমা। হিরোশিমায় বোমা বিস্ফোরণের ফলে তৎক্ষনাৎ ৮০,০০০ মানুষ মারা যায় এবং নাগাসাকিতে ৪০,০০০ মানুষ মারা যায়। পরবর্তীতে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে আরও কয়েক লক্ষ মানুষ মারা যায়।
ঢাকায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের সাথে সাথে প্রচন্ড শব্দ ও কয়েশত মিটার ব্যাসার্ধের আগুনের বলয় তৈরি হবে। এই বলয়ের ভিতর থাকা মানুষ, গাছপালা, পশু-পাখি, ঘর-বাড়ি সব বাষ্প হয়ে যাবে। বিস্ফোরণের প্রভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বের মাঝে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে যাবে, গ্যাসের সিলেন্ডার ফাটতে শুরু করবে। তারপর ঢাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্ফোরক কেমিক্যাল এর গুদামে আগুন লাগার সাথে সাথে ভয়াবহ মাত্রার আরও কিছু বিস্ফোরণ হবে। আশেপাশে শুধু ধোঁয়া আর আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাবে৷ বিস্ফোরণের ফলে আকাশে প্রায় কয়েক হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ধোঁয়া দেখা যাবে। science bee
নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরণের ফলে তৎক্ষনাৎ প্রচন্ড শক ওয়েভের সৃষ্টি হবে, ঢাকা শহরের বিলাসবহুল ঘর-বাড়ির কাচের জানালা ভেঙে যেতে শুরু করবে। থার্মাল ইফেক্টের প্রভাবে শরীরের চামড়া পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবে। আকাশে কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কালো মেঘ দেখা যাবে, শুরু হবে তেজস্ক্রিয়তার কালো বৃষ্টি। বৃষ্টির ফলে বিষাক্ত বাতাস ছড়িয়ে যাবে চারপাশে। ঢাকার আশেপাশের শহর এবং অঞ্চলেও ভয়াবহতা দেখা দিবে। সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিবে। কেউ বেঁচে থাকলেও তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়বে।
বিস্ফোরণের ফলে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে প্রাণীকুলের উপর। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে মানুষের শরীরের DNA পরিবর্তন হয়ে যাবে। মানুষ যুগের পর যুগ আক্রান্ত হবে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে। ক্যান্সার এর মতো ভয়াবহ রোগ দেখা দিবে৷ সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়েরিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, ডিপথেরিয়া, পোলিও, হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস এর মত রোগ দেখা দিবে। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব মানুষের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপরও দেখা দিবে: বিকলাঙ্গ, মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুর জন্ম হবে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই উন্নতমানের সব হাসপাতালের অবস্থান, কিন্তু হায়! বোমা বিস্ফোরণে যে সেগুলোও বিলীন হয়ে যাবে! তখন পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর কোন পথই বাকি থাকবেনা।