মাটির চুলায় রান্না করা খাবার বেশি মজা হয় কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
3,853 বার দেখা হয়েছে
"রসায়ন" বিভাগে করেছেন (7,950 পয়েন্ট)

2 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (7,950 পয়েন্ট)

গ্যাসের চুলার গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন, সালফার ডাই অক্সাইড, সামান্য ইথেন, অতিসামান্য পরিমান পেট্রোল জাত পদার্থ থাকে। যখন আগুনের সংস্পর্শে আসে তখন এগুলো পুড়তে থাকে। আর পরিবেশে অবশিষ্টাংশ ছড়াতে থাকে। এমন সময় পাতিলে থাকা খাবারেও কার্বনজাত পদার্থ, কার্বন ন্যানোপার্টিকেল, কার্বন ডাইঅক্সাইড অল্প পরিমানে মিশতে থাকে। ঢাকনা বিহীন রান্নাতে মিথেন মিশে গিয়ে ওয়াটার গ্যাস সৃষ্টি করে। যার কারনে খাবারের প্রকৃত স্বাদের হেরফের ঘটে। কিন্তু মাটির চুল্লীতে কাঠ/খড় পোড়ানো হয়। যাতে থাকে সেলুলোজ পদার্থ। এগুলো পরিবেশে সম্পূর্ন দহন হয়। কোনো প্রকার মিথেন বা গ্যাসীয় পদার্থ নির্গত হয় না। তবে যে ধোয়াটা বের হয় তা কম ক্ষতিকর কার্বনের ধোয়া। যা পরিবেশে উবে যায়। খাবারে কোনো ইফেক্ট ফেলে না। এই কারনে মাটির চুলায় খাবারের স্বাদ বজায় থাকে।

- সজীব চন্দ্র দাস

0 টি ভোট
করেছেন (43,930 পয়েন্ট)
আমরা যারা বেড়ে উঠেছি গ্রামীণ পরিবেশে, শৈশব-কৈশোরের পুরোটা আর যৌবনের কিছু সময় যাদের কেটেছে গ্রামে, যারা গ্রামের বড় বড় অনুষ্ঠান দেখেছি এবং খেয়েছি, তারা জানি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গ্রামে রান্নাটা এখনো হয় মাটির চুলা বা উনুনে। তবে এটা ঠিক যে পিতল, ইস্পাত (স্টেইনলেস স্টিল), অ্যালুমিনিয়াম, লোহা এবং প্লাস্টিকের তৈজসপত্রের ব্যাপক প্রসারের কারণে মাটির হাঁড়ি ও থালাবাসন উনিশ-বিশ শতক থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোয়ারেন্টিনে চলে গেছে। তবে হ্যাঁ, এই একুশ শতকের উত্তরাধুনিক জীবনযাপনের অংশ হিসেবে, হঠাৎ হঠাৎ মনের ভেতর চাগিয়ে ওঠা শিকড়ের টানে কখনো কখনো কোয়ারেন্টিন ভেঙে মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও থালাবাসন যে আমাদের খাবার টেবিলের শোভা বাড়ায় না, তা নয়। কিন্তু গ্রাম বা নগর কোথাও তা আর আমাদের মূল স্রোতে নেই। শহরে সুযোগ নেই বলে মাটির চুলা তৈরির উপায় নেই। তার ওপর আছে পরিবেশের চাপ। কারণ, মাটির চুলায় রান্নার প্রধান জ্বালানি উদ্ভিজ্জ (খড়ি বা লাকড়ি নামেই পরিচিত)।

আমাদের রান্নাবান্নার মূল ভিত্তি হলো মাটির চুলা এবং মাটির হাঁড়ি-পাতিল, থালাবাসন। রান্না ও খাবারের থালাবাসন প্রায় সবকিছু তৈরি হতো মাটি দিয়ে। প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তা–ই বলে।

চুলার আবিষ্কার মানবজাতির গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর অন্যতম। প্রাচীন মানুষের কাঠ ও খড়কুটো জ্বালিয়ে তাতে খাবার পুড়িয়ে খাওয়ার যে ঐতিহাসিক গল্প আমরা জানি, তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে যায় মানুষ চুলার আবিষ্কারের পর। প্রথম চুলার আবিষ্কারের পর শত শত বছরের পরিশীলন মানুষকে আজকের চুলা বানাতে সহায়তা করেছে।

কাঠ, বাঁশ, খড়কুটো, পাটকাঠি, শুকনো পাতা—এসবই মাটির চুলার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি কথা খুব শোনা যায় যে মাটির চুলায় রান্না করা খাবার সুস্বাদু। ব্যাপারটিতে অতিরঞ্জন কিছু নেই। চুলায় রান্নাবান্নার বিজ্ঞান জানলে স্বাদের ব্যাপারটি বোঝা সহজ হবে। খাবার সুস্বাদু করতে উপকরণ যেমন তাজা হতে হয়, রাঁধুনিকে যেমন পাকা হতে হয়, মসলার ব্যবহারে যেমন পটু হতে হয়, তেমনি জানতে হয় খাদ্যের কোন উপকরণ কোন ধরনের আগুনে রান্নার উপযোগী। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আমাদের নারীকুল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই বিজ্ঞানের চর্চা করে এসেছে। খড়ি বা লাকড়ি মাটির উনুনে রান্নার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘দমের খড়ি’ ব্যাপারটা বুঝতে হবে। যেসব লাকড়ি বা খড়ি দীর্ঘ সময় নিয়ে পোড়ে এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে সেগুলোকে দমের খড়ি বলে রংপুর অঞ্চলে। এগুলো দিয়ে মাংস রান্না করা হয়। সাধারণত বট, তেঁতুল বা বরইগাছের ডাল বা কাঠ এবং বাঁশের মুড়ো দমের খড়ি হিসেবে পরিচিত। এগুলোর আগুনের শিখার রং হবে নীলচে। এই দমযুক্ত লাকড়ির আগুনে দীর্ঘ সময় রান্না করা মাংসের যেকোনো খাবার সুস্বাদু হবে, সেটা বলাই বাহুল্য। মাংস সেদ্ধ হওয়ার জন্য যে তাপ প্রয়োজন, চুলার আকৃতি এবং অন্যান্য কারণে কম দমের কাঠের খড়ি বা লাকড়িতে তা উৎপন্ন না–ও হতে পারে। সে জন্য কম দমের কাঠের আগুনে রান্না করা হয় সাধারণত মাছ ও শাকসবজি। যেকোনো খড়ির আগুনে ভাত রান্না হয়। দুধ ঘন করতে হয় মাংস রান্নার পর থেকে যাওয়া দমের খড়ির কয়লায়, দীর্ঘ সময় নিয়ে। দুধ ঘন হয়ে তাতে গোলাপি আভা ছড়িয়ে পড়ে।

তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে মাংস কদম কাঠে রান্না করা যাবে না। কিংবা মাছ তেঁতুল কাঠের খড়িতে রান্না করা যাবে না। অবশ্যই যাবে। তবে পাকা রাঁধুনি সেটা না–ও করতে পারেন। হাজার হলেও হাতযশ বলে একটা ব্যাপার আছে বলে নানি, দাদি, ঠাকুরমাদের রান্নার কথা এখনো আমাদের স্মরণ আছে। রান্নাঘরের চুলা যত পুরোনো হবে, তার ভেতরের মাটি পুড়তে পুড়তে তত লাল হতে থাকবে। পুরোনো চুলা তাপ ছড়ায় দ্রুত। মাটির চুলার খাবার সুস্বাদু হওয়ার বিষয়টি কোনো একক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না। সে কারণে মাটির উনুনে রান্না করা সুস্বাদু খাবার শত শত বছর ধরে চর্চা করা এক ‘অপ্রকাশিত বিজ্ঞান’, আগুনের তাপ আর শিখার রং যে বিজ্ঞানের মূল উৎস।

মাটিতে বিশেষভাবে গর্ত করে চুলা বানানো হয়। গর্তের ওপরে থাকে মাটির তিনটি অনুচ্চ স্তম্ভ। এই স্তম্ভগুলোর ওপরেই হাঁড়ি বা পাতিল বসিয়ে রান্না করা হয়। একমুখো, দুমুখো ও তিনমুখো—এই তিন ধরনের চুলার ব্যবহার সর্বাধিক। প্রতিটি চুলায় সাধারণত একটি করে জ্বালানি প্রবেশের মুখ থাকে। যেসব চুলায় একটি হাঁড়ি বসানো যায়, সেটিই একমুখো চুলা। এর সঙ্গে আমাদের পরিচয় সবচেয়ে বেশি। কারণ, বাড়ির রান্নাঘরে এই চুলাই বেশি ব্যবহার করা হয়। এটিকে আপনারা অনায়াসে ওয়ান বার্নার গ্যাসের চুলার সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। যে চুলায় দুটি হাঁড়ি বসানো যায়, সেগুলো দুমুখো উনুন। এটি রান্নাঘরের চুলা নয়। সাধারণত বাড়িতে ধান সেদ্ধ বা অনুষ্ঠানের খাবার রান্নার জন্য এ ধরনের দুমুখো চুলা ব্যবহার করা হয়। এটিকে ডাবল বার্নার গ্যাসের চুলার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তিনমুখো চুলায় একই সঙ্গে পাশাপাশি তিনটি হাঁড়ি বা ডেকচি বসানো যায়। এ ধরনের চুলায় লাকড়ি প্রবেশের দুটি মুখেরও দেখা পাওয়া যায় কোনো কোনো বাড়িতে। তিনমুখো চুলার ব্যবহার খুব বেশি চোখে পড়ে না। মূলত ধান সেদ্ধর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া তোলা চুলা বলে একধরনের চুলা আছে। মূলত এটি একমুখো চুলা। তবে এটি তৈরি করা হয় পরিত্যক্ত গামলায় মাটি দিয়ে। সাধারণত হালকা খাবার রান্না, খাবার গরম করা, দুধ গরম করা, চা তৈরি ইত্যাদির কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ প্রয়োজনে এটিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অনায়াসে নিয়ে যাওয়া যায়।

 

বন্যাকবলিত অঞ্চলে এর ব্যাপক ব্যবহার চোখে পড়ে।

মাটির চুলায় সুস্বাদু রান্না আমাদের ঐতিহ্যগত বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞানের সূতিকাগার রান্নাঘর আর বিজ্ঞানী হলেন নারীরা। খুব অল্প ক্ষেত্রে পুরুষও এ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছেন। রান্নাঘরের এ বিজ্ঞান যিনি যত ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছেন, তিনি তত ভালো রাঁধুনি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 324 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 169 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 354 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
2 টি উত্তর 1,286 বার দেখা হয়েছে
13 মার্চ 2021 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,480 পয়েন্ট)
+9 টি ভোট
2 টি উত্তর 1,877 বার দেখা হয়েছে

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

272,554 জন সদস্য

68 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 66 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Shariar Rafi

    420 পয়েন্ট

  2. Tazriyan

    190 পয়েন্ট

  3. Shourov Viperr

    110 পয়েন্ট

  4. Khandoker Farhan

    110 পয়েন্ট

  5. Eyasin

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...