এ্যান্টি ম্যাটার কী কাজে ব্যবহার করা হয়?বাস্তববে কী কাজে লাগে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
562 বার দেখা হয়েছে
"পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (43,940 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (43,940 পয়েন্ট)

একটা সমীকরণ আছে যে, Matter+Anti-matter= Annihilation। এখানে ম্যাটার, অ্যান্টিম্যাটার এবং অ্যানিহিল্যাশন আসলে কি?

অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিকণা নাম হয়ত অনেকে শুনেছেন।সত্যিকারে আদৌ প্রতিকণা পাওয়া গেছে কিনা না বা আছে কিনা পরে আলোচনা করছি। তাহলে প্রতিকণা আদৌ কি আছে?তবে এ প্রশ্নের উত্তরে আগে প্রথমে কণা কি এই প্রশ্নের অবতারনা করতে চাই।এ মহাবিশ্বে যত বস্তু, গাছাপালা , পশুপাখি, গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি দেখি সবই কণা স্বরুপ পার্টিকেল দিয়ে তৈরি । আমরা জানি যে, তিনটি মৌলিক কণা সমন্বয়ে পরমানু গঠিত- ইলেক্ট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এখানে ইলেক্ট্রন ঋনাত্মক চার্জযুক্ত, প্রোটন ধনাত্মক চার্জযুক্ত আর নিউট্রন ব্যাটা একদম নিউট্রাল মানে চার্জবিহীন। এখানে প্রোটন আর নিউট্রন জমিদারে মত কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত আর ইলেক্ট্রন নর্তকীয় মত চারদিকে নিদির্ষ্ট কোয়ান্টাম নিয়মে ঘুরছে । এইটো এটাই সাধারণ “ম্যাটার তত্ত্ব”।

তাহলে অ্যান্টি-ম্যাটার কি?

অ্যান্টিম্যাটার হচ্ছে কণার প্রতিরুপী এক ধরনের বিপরীত কণা। সহজ ভাষায় বললে কণার বিপরীত চার্জযুক্ত মৌলিক কণিকা সমন্বয়ে গঠিত একধরনের পার্টিকেল। যার ভর এবং স্পিন অন্য একটি কণিকার সমান, কিন্তু যার তাড়িৎ আধান, ব্যারিয়ন সংখ্যা, লেপটন সংখ্যা প্রভৃতি অন্য কণিকাটির সমমানের অথচ বিপরীতধর্মী। যেমনঃ প্রতিপ্রোটন বা অ্যান্টিপ্রোটন হল প্রোটনের বিপরীত এবং পজিট্রন হলো অ্যান্টি ইলেক্ট্রন।

image

চিত্রঃ hydrogen এবং anti-hydrogen

আপনে জেনে বিস্মিত হবেন যে পবিত্র কুরআন আমাদের প্রতিবস্তুর অস্তিত্বের সম্ভাবনাকেও প্রস্তাব করেছে –

“ প্রশংসা তারই যিনি প্রত্যেক বস্তুরবিপরীত/যুগল সৃষ্টি করেছেন। তা মাটি হতে উৎপন্ন হোক, তাদেরমধ্যে (মানুষ/ প্রাণী) হোক কিংবা হোক সেসব যা তারা অবগত নয় (৩৬:৩৬)।”

এছাড়াও স্রষ্টা (৫১:৪৯) নং আয়াতে বলেছেন – “ আমরাসৃষ্ট সকল বস্তুকে অস্তিত্বে এনেছি পরস্পরের প্রতিপ্রতিক্রিয়াশীল প্রতিযুগলে (Anti) একনির্ধারিত পরিমাপের ভিত্তিতে। এ তথ্যটি তোমাদের জানানো হল যাতে তোমরা ভাবনার সূত্রপাও ।“

উপরোক্ত আয়াতের প্রস্তাবনা অনুসারে প্রত্যেকবস্তুরই প্রতি বস্তু অর্থাৎ Anti-Matterএর অস্তিত্ব বিদ্যমান- হোক সেটা কোনপ্রতি মানব কিংবা প্রতি-মহাবিশ্ব(Anti-Universe).

প্রতিবস্তু স্বাভাবিক বস্তুরই প্রতিরুপ। যেমনটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের হুবহুপ্রতিবিম্ব প্রত্যক্ষ করি। প্রতিবস্তু হল স্বাভাবিকবস্তুর সাব এটমিক পার্টিক্যাল এর উল্টো দিক মাত্র। কোন পরমাণুর ভিতরে ইলেক্ট্রন, প্রোটন যদি তাদের বিপরীত আধান ধারণ করে তাহলে তাদেরকে এন্টি পার্টিকেল বলে। এরকম এন্টি পার্টিকেল দিয়ে তৈরী পদার্থের নাম এন্টি ম্যাটার।সাধারণ অবস্থায় ইলেক্ট্রনের আধান হয় মাইনাস (-)। কিন্তু এন্টিম্যাটারে এটার আধান হবে (+) ।

আমরা জানি পদার্থ বা Matter হচ্ছে ইলেক্ট্রন(-ve), প্রোটন(+ve) ও নিউট্রন দিয়ে তৈরী [কেন্দ্রে (+ve) চারপাশে (-ve)]।প্রতিপদার্থ হচ্ছে এন্টিপ্রোটন(-ve),এন্টিনিউট্রন ও পজিট্রন(+ve), অর্থাৎ ভর একই কিন্তু চার্জ সম্পুর্ণ বিপরীত [কেন্দ্রে (-ve) চারপাশে (+ve)]।

এই কারণে বস্তুও প্রতিবস্তুর প্রকৃতি, স্বভাব, ধর্ম বা আইন-কানুন একে অপরের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী, যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছে। তাই বস্তু ও প্রতিবস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সংস্পর্শ মানেই তাদেরধ্বংস অনিবার্য।

তাই আপনের প্রতিবস্তুযদি আপনের সাথে একটি ছোট্টহ্যান্ডসেক করারও ইচ্ছা পোষণ করেন, তবেসেই একটি হ্যান্ডসেক এর প্রথম স্পর্শই আপনাদের উভয়কেই ধ্বংস করে দেবে চিরতরে। বস্তু ওপ্রতিবস্তুর মধ্যে পরস্পরের কোন রকম স্পর্শই তাদের মধ্যে এক প্রলয়ঙ্কারি বিস্ফোরণএর মাধ্যমে উভয়েরই অস্তিত্বই বিলীন করে দেবে। হয়তোবা, স্রষ্টা – সময়ওদূরত্বের মাপকাঠিতে আমাদের পরিচিত ডাইমেনশনেই প্রতি-মহাবিশ্ব (Anti-Matter Universe) সৃষ্টি করে রেখেছেন। যা আমাদের মহাবিশ্বের সামনে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায়রয়েছে।

আমাদের বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞান এ সম্বন্ধে নিশ্চিতরূপে কিছু বলার অনুমতি দেয় না। তবে প্রতি-যুগল সম্বন্ধে কুরআনিক তত্ত্ব আমাদের এই কথা বলার স্বীকৃতি দেয় যে- আমাদেরসৃষ্টিজগতে প্রতি মহাবিশ্বের অস্তিত্ব বিশ্বাসযোগ্য ।

পবিত্র কুরআনের ৫১:৪৯ নং আয়াতেরবাস্তবতা প্রমানিত হয় এইতো বিংশ শতাব্দীতে এসে,যখন ল্যাবরেটারিতে এসে Anti-Matterসৃষ্টিকরা সম্ভব হল।

১৮৯৮ সালে জার্মান বিজ্ঞানী আর্থার শুস্টার প্রথম এন্টিম্যাটারের ধারনা দেন এবং এন্টিএটম বা প্রতিপরমানুর অস্তিত্ব অনুমান করেন। তবে তাঁর অনুমান নির্ভর তত্ত্বের অনেকাংশই পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা পরিমার্জন করেন। ১৯২৮ সালে বিজ্ঞানী পল ডিরাক তাঁর একটিগবেষণাপত্রে এন্টিম্যাটারের আধুনিক তত্ত্ব ব্যখ্যা করেন। এর ধারাবাহিকতায় শ্রডিঞ্জারের তরঙ্গতত্ত্বের আলোকে ইলেক্ট্রনের বিপরীত পদার্থ পজিট্রন তৈরির সম্ভাবনা দেখা যায় এবং ১৯৩২সালে বিজ্ঞানী কার্ল ডি এন্ডারসন পজিট্রন আবিষ্কার করেন। পরবর্তিতে আরো কিছু পারমানবিক মূল কণিকা যেমন, এন্টিপ্রোটন, এন্টিনিউট্রন এবং এদের সমন্বয়ে এন্টি নিউক্লিয়াস তৈরি করা হয়। এন্টিনিউক্লিয়াসএবং পজিট্রনের সমন্বয়ে পরমানুর বিপরীত কণিকা এন্টিএটম বা প্রতিপরমানু তৈরি করা হয় ১৯৯৫ সালে। প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে গবেষণাগারে তুলনামূলক বড় আঙ্গিকে এন্টিম্যাটার তৈরি করা হয়।

ভাবতেই বিস্ময়ে অভিভুত হতে হয় যে আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে যখন মানুষ পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্ব নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল, যখন পরমানুর গঠন সম্বন্ধে অজ্ঞতারঅন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, ঠিক সেই সময় মরুভুমির এক নিরক্ষর মানুষ প্রতি পরমানুরকিনবা প্রতি-বস্তুর তত্ত্ব পেশ করে বসলো, যেই তত্ত্বের প্রমান মানব জাতি লাভ করলএই বিংশ শতাব্দীতে আসে। বিস্ময়…………!!!!

যাই হোক- এন্টিম্যাটার তৈরির পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এটাকে টিকিয়ে রাখা। কারন একে যে পাত্রে রাখা হবে সেটা কোন না কোন পদার্থ দ্বারা তৈরি করতে হবে। ফলে সেই পদার্থ প্রতিপদার্থের সাথে মিলে নিশ্চিন্থ করে ফেলবে। তবে গত আজ বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। তাঁরা বিশেষ স্থিতিশীল চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে তার ভিতরে এন্টিম্যাটার সংরক্ষণ করেন। যেহেতু চৌম্বকক্ষেত্র কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় না। এটা শুধুমাত্র একটি বলক্ষেত্র যেখানে প্রতিপদার্থ আকৃষ্ট হয়ে বিঁধে যায় এবং যার ফলে কোন পদার্থের সংস্পর্শে না আসতে পারবার কারনে সংরক্ষিত থাকে। বিগব্যাংক ফলশ্রুতিতে যেমন পদার্থ দিয়ে আমাদের আজকের এই মহাবিশ্ব অস্তিত্ব লাভ করেছে ঠিক অনুরূপভাবের এন্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থ দিয়েসৃষ্ট প্রতিমহাবিশ্বের অস্তিত্বওহয়তবা আমাদের চেনা মহাজগতের কোন বিপরীত প্রান্তে সম্প্রসারিত হচ্ছে আমাদের গ্যালাক্সিগুলোর অনুরূপ।

আমরা জানিনা, মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিমহাজগতের মাধ্যমেই আমাদের প্রিয় বিশ্বজগতের কবর রচনা করবেন কিনা…?!!

পবিত্র কুরআনের এই বাস্তবতা প্রমানিত হবারপর আজকের বিজ্ঞানীগণও কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে – শূন্যতারকোন না কোন সীমানায় একটি সমান্তরাল মহাবিশ্ব হিসেবে এক অ্যান্টি-ইউনিভার্স রয়েছে।যার আইন-কানুন আমাদের মহাবিশ্বেরই অনুরপ এবং আমাদের মতোই সেখানে সম্প্রসারণশীলঅবস্থা বিরাজমান। তবে সত্যটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিকভাবেই প্রমানযোগ্য। কারন এমনতরধারনার কাছাকাছি যাবার অর্থ হল একমহাধ্বংস……………!!!

যেহেতু ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার পরষ্পর সংস্পর্শে এলে Annihilation এর মাধ্যমে বিপুল পরিমান শক্তি উৎপন্ন হবার সাথে উভয়েই এক প্রকাণ্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।এই জন্য কোন একদিন অকস্মাৎ হুবহু আপনার মত দেখতে কেউ আপনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডসেক বা কর্মদন করবার তরে তার হাত আপনার নিকট বাড়িয়ে দিয়েছে, তবে ভুলেও আপনের ডুপ্লিকেট এর সাথে হাত মিলাতে যাবেননা। কারণ আপনের এই একটি হ্যান্ডসেকই হতে পারে আপনাদের উভয়কেই জীবনের শেষ হ্যান্ডসেক।

তথ্যসূত্র:

Light Spectrum Of Antimatter Observed For The First Time, And It Looks Like Regular Matter

 

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 379 বার দেখা হয়েছে
+4 টি ভোট
1 উত্তর 516 বার দেখা হয়েছে
24 ফেব্রুয়ারি 2021 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,490 পয়েন্ট)
+3 টি ভোট
1 উত্তর 255 বার দেখা হয়েছে
23 ফেব্রুয়ারি 2021 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,490 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 272 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 284 বার দেখা হয়েছে

10,807 টি প্রশ্ন

18,512 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

510,597 জন সদস্য

115 জন অনলাইনে রয়েছে
28 জন সদস্য এবং 87 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    1280 পয়েন্ট

  2. Dibbo_Nath

    370 পয়েন্ট

  3. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  4. _Polas

    160 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মাছ মশা শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা মস্তিষ্ক ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...