বড় বড় বিজ্ঞানীরা এর ওপর কাজ করছেন, আমি এখানে শুধুমাত্র ধারনাটুকুই তুলে ধরার চেষ্টা করবো। অ্যান্টিম্যাটার হোল প্রতিকনা। কণার দ্বারা যেমন পদার্থ গঠিত হয় তেমনিভাবে প্রতিকণা দ্বারা প্রতিপদার্থ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটন মিলে যেমন করে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করে তেমনি একটি পজিট্রন ও একটি প্রতিপ্রোটন মিলিত হয়ে একটি প্রতি হাইড্রোজেন তৈরি করে। নীচের ছবিটি দেখুন-
কি দেখা যাচ্ছে? (বামে) একটি প্রোটনকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রন ঘুরলে তা মিলে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি হয়। (ডানে) একটি প্রতি প্রোটনকে কেন্দ্র করে একটি প্রতি ইলেকট্রন ঘুরলে তা মিলে একটি প্রতি হাইড্রোজেন তৈরি হয়। ১৯২৮ সালে বিজ্ঞানী পল ডিরাক এই ইলেকট্রনের গতির (কোয়ান্টাম মেকানিক্স) সাথে আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বের একটা গাণিতিক সম্পর্ক তৈরি করেন। পল ডিরাক আবিষ্কার করেছিলেন যে তার এই সমীকরণটি যেমন আমাদের পরিচিত অস্তিত্ব সম্পর্কে বলে তেমনি আমাদের পরিচিত ক্ণাগুলোর অনুরূপ কিন্তু ঠিক বিপরীত চার্জযুক্ত কণা সম্পর্কেও বলে। তিনি এই বিপরীত চার্জযুক্ত কণাগুলোকে বলেছিলেন ‘অ্যান্টিম্যাটার’ বা প্রতিপদার্থ। যদিও William Schuster 1898 সালে ‘অ্যান্টিম্যাটার’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।
মূলত প্রতিকণার ধারণা থেকে প্রতিপদার্থের ধারণা এসেছে। তাহলে এই প্রতিকণাই বা কি? আসলে প্রতিকণা হলো এমন কণা যার ভর ও স্পিন সংখ্যা অন্য সাধারণ কণার সমান কিন্তু যার আধান বা চার্জ বিপরীধর্মী। সকল কণারই প্রতিকণা রয়েছে। তবে যেসকল কণা চার্জের দিক দিয়ে নিরপেক্ষ (যেমন: ফোটন, মেসন ইত্যাদি) তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিকণা। প্রতিনিউট্রিনো হলো নিউট্রিনোর কণার প্রতিকণা, প্রতিপ্রোটন হলো প্রোটনের প্রতিকণা এবং ইলেকট্রনের প্রতিকণা হচ্ছে প্রতিইলেকট্রন বা এর অন্য একটি নাম হলো পজিট্রন।
একটি পদার্থ যখন একটি প্রতিপদার্থের সংস্পর্ষে আসে তখন এরা একে অপরকে বিনাশ (Annihilate) করে দেয়। একটি কণা এবং তার প্রতিকণার মধ্যকার সংঘর্ষ হলে তারা একে অপরকে বিনাশ করে দেয় ও ফোটন, নিউট্রিনো এবং এছাড়াও বহু কণা – প্রতিকণা জোড়ার জন্ম দেয়। তেমনিভাবে পদার্থ ও প্রতিপদার্থের সংঘর্ষ উচ্চ শক্তির ফোটন (গামা রশ্মি) ও বহু কণা-প্রতিকণা জোড়ার সৃষ্টি করে। এই সংঘর্ষের মোট শক্তির বেশিরভাগ অংশ ionizing radiation আকারে উদ্ভূত হয়। আশেপাশে পদার্থ উপস্থিত থাকলে এই বিকিরণের সামগ্রিক শক্তি, শক্তির অন্যান্য রূপে (যেমন – তাপ, আলো প্রভৃতিতে) রূপান্তরিত হয়। এই উদ্ভূত শক্তির পরিমান আইনস্টাইনের প্রদত্ত সাধারণ ভর-শক্তি সমতুল্য সমীকরণ অনুসারে নির্ণয় করা হয় যা সংঘর্ষকৃত পদার্থ ও প্রতিপদার্থের মোট ভরের সমানুপাতিক। আচ্ছা কী ছিলো সেই ভর শক্তির সমীকরণটা? হ্যাঁ, E=mc2।
আচ্ছা যদি পদার্থ ও প্রতিপদার্থ একে অপরের সংস্পর্শে এসে বিনাশ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই সৃষ্টির শুরুতে প্রতিপদার্থের চেয়ে পদার্থ অনেক বেশি পরিমাণে ছিলো। কারণ সমপরিমাণ থাকলে তা মহাবিশ্বে বিস্ফোরণের মাধ্যমে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ একে অপরকে বিনাশ করে দিত ও অদৃশ্য হয়ে যেত। আর সংরক্ষণ নীতি অনুসারে, বিগ ব্যাংয়ে সমপরিমান পদার্থ ও প্রতিপদার্থ তৈরি হওয়া উচিত ছিলো। এছাড়াও আইনস্টাইনের সেই সমীকরণ E=mc2 অনুসারে শক্তিকে সমান পরিমাণ পদার্থ ও প্রতিপদার্থে রূপান্তর করা যায় আর বিগ ব্যাংয়ের সময় প্রচুর শক্তি ছিলো। তাহলে সব প্রতিকণাগুলো গেলো কোথায়? এটি পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যতম একটি রহস্য। এই সমস্যার সমাধান করতে বিজ্ঞানীদেরকে আগে প্রতিকণার বৈশিষ্ট্যগুলো জানতে হবে। এ বৈশিষ্ট্য জানতে তারা প্রতিপদার্থকে একটি যন্ত্রে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।তবে এই প্রতিপদার্থকে ঠিকঠাকভাবে পরিমাপ করতে একে স্থির করতে হবে, কিন্তু প্রতিপদার্থ স্থির হয় না, অনেক অস্থিতিশীল হয়। ইউরোপের CERN এর পরীক্ষাগারে কর্মরত বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছিলেন যে তারা প্রতিপদার্থের গতি কমিয়ে দেওয়ার জন্য লেজার ব্যবহার করেছিলেন যা পরীক্ষাগারে অ্যান্টিমেটার গবেষণার এক অভূতপূর্ব সাফল্য। বিজ্ঞানীরা বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে প্রতিপদার্থের কণাগুলোকে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিপ্রোটনগুলোকে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংরক্ষন করা হয়েছে তবে পজিট্রনগুলোকে স্বল্পসময়ের জন্যই সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। ২০১১ সালে CERN এর গবেষকরা ঘোষণা করেছিলেন যে তারা এক হাজার সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে প্রতিহাইড্রোজেন সংরক্ষণ করতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানীরা যদিও অল্প পরিমাণে প্রতিপদার্থ সংরক্ষন করেছিলেন কিন্তু মহাবিশ্বে প্রতিপদার্থ কেন এত বিরল তার জবাব তারা পারেন নি।