কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণ বিবর (ব্ল্যাক হোল নামেও পরিচিত) মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি বিষয়ক একটি বহুল প্রচলিত ধারণা।এই ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের এমন একটি বস্তু যা এত ঘন সন্নিবিষ্ট বা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে এর ভর এত বেশি যে এর মহাকর্ষীয় শক্তি কোন কিছুকেই তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও (যেমন: আলো) নয়। প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না।আবার সৌরজগৎ সহ সৌরজগতের মতো গ্যালাক্সিসহ আলোকীয় সকল বস্তুই কোনো না কোনো ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।কিন্তু ব্ল্যাক হোলে কিছুই ছিটকে পড়ছে না। যা ছিটকে পড়বে, তাই নিশ্চিহ্নহয়ে যাবে। আর প্রত্যেকটা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টিহয়, মূলত শেষ হয়ে যাওয়া বিপুল নক্ষত্রপিন্ড থেকে।
শ্বেত বিবর - কৃষ্ণ গহ্বরের ঠিক বিপরীতটা। এটি আলো বিকিরণ করে। এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি, পুরোই কল্পিত ধারণার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতবিবর। তবে এর থিওরিটিক্যাল প্রমাণ রয়েছে। ধারণা করা হয়, যেহেতু ব্ল্যাক হোলের ভেতরে কোনো বস্তু গেলে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, সেই নিশ্চিহ্ন হওয়া বস্তুগুলো ব্ল্যাক হোল নিষ্পন্ন হলে হোয়াইট হোলের মধ্যে পতিত হয় এবং বিজ্ঞানীদের ধারণা যতটুকু পজেটিভ গ্রাভিটির চাপে ব্লাক হোল সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং সব কিছুকে নিজের করে নিচ্ছে ঠিক তেমনি করে হোয়াইট হোল নেগেটিভ গ্রাভিটির চাপে হোয়াইট হোল সবকিছু বের করে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ব্লাক হোলের কোয়াসার গুলো হতে পারে হোয়াইট হোল। হোয়াইট হোল দেখা যায় না, এর কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এটি প্রতিনিয়ত আলো বিকিরণ করে। এবং ব্ল্যাক হোল যেমন তার অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য বা কোনোকিছুকেই বের হতে দেয় না, হোয়াইট হোল বিপরীতভাবেই কোনো তথ্য বা কিছুকেই তার অভ্যন্তরে ধরে রাখতে পারে না। সবকিছুই ছেড়ে দেয়। এজন্য এটি খুব উজ্জ্বল। সময়কে বিপরীত দিকে চালালে কৃষ্ণ বিবরকে শ্বেত বিবর বলে মনে হবে। এই প্রক্রিয়াটিকে "টাইম রিভার্সাল অফ ব্ল্যাক হোল" বলা হয়। একে একট উপপ্রমেয়মূলক তারা (Hypothetical star) হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। কৃষ্ণ বিবরের মত শ্বেত বিবরেরও ভর, চার্জ, কৌনিক ভরবেগ আছে।
"ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’র পদার্থবিজ্ঞানী সিন ক্যারল হোয়াইট হোলকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেনঃ ব্লাক হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ একবার গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না; হোয়াইট হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখান থেকে কেউ একবার বের হলে আর সেখানে ফিরে যেতে পারেনা। "৷ আপেক্ষিক তত্ত্বের সমীকরণ অনুসারে কিছু যদি এরকম একটি ব্লাক হোলে পড়ে তাহলে সে স্থান-কালের একটি পথে প্রবেশ করবে যাকে আমরা ওয়ার্ম হোল বা কীট বিবর হিসেবে চিনি এবং একটি হোয়াইট হোল দিয়ে সে বেরিয়ে যাবে। হোয়াইট হোল ঐ বস্তুর অংশগুলোকে মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিক্ষেপ করবে এমনকি বিভিন্ন সময়েও নিক্ষেপ করতে পারে।
স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী প্যারালাল মহাবিশ্বগুলো একে অপরের সাথে লেগে আছে। যদি একটি মহাবিশ্ব অন্যটির সাথে লেগে থাকে তবে মাঝে মাঝে দুটিতে ধাক্কা লাগে তবে এক সুরঙ্গ (ওয়ার্মহোল) সৃষ্টি হয় যা দ্বারা প্যারালাল মহাবিশ্ব পৌঁছানো সম্ভব। যে মহাবিশ্বে হয়তো আপনার অতীতকাল বা ভবিষ্যৎ কাল চলছে। যার দ্বারা চলে যেতে পারেন অতীত বা ভবিষ্যতে।
আবার তাপবিদ্যার দ্বিতীয় ল থেকে বলা যায় যে,
কোনো ঘটনার এনট্রপি যদি পুনরুদ্ধার থেকে ফিরিয়ে আনা যায় তবে আমরা সময়কে ভ্রমণ করতে পারবো। উপরে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হল তা সবই তাত্ত্বিক তাই এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না যে সময় পরিভ্রমণ করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা।
তাহলে সংক্ষেপ বলা যায়, ব্ল্যাক হোল একটি মহাবিশ্বের শক্তিবহুল স্থান যার মধ্যে সঞ্চিত শক্তিগুলোর কিছুই বের হতে পারে না, ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করেই সৌরজগতের মতো গ্যালাক্সিগুলো আবর্তিত হয়। হোয়াইট হোল তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে ঘনত্ব নেই বললেই চলে, সব শক্তি বিকিরিত হয়ে যায়, যা একটি কল্পিত সূত্র। আর ওয়ার্ম হোল হলো, ব্ল্যাক হোলে পতিত হয়া বস্তু যার অস্তিত্বপাওয়া যায় না, তারা একটা সুরঙ্গ পথে হোয়াইট হোলে প্রবেশ করে অন্য কোনো স্থানে ছিটকে যায়, এই ব্ল্যাক হোল থেকে হোয়াইট হোলে যাবার কল্পিত সুরঙ্গ পথটি হলো ওয়ার্ম হোল। এদুটোর তাত্ত্বিক প্রমাণ থাকলেও বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় নি।তাই বলা যায়, একটি অপরটির সাথে এভাবেই সম্পর্কযুক্ত।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও helplike.wordpress.com