একটা সুবিশাল লাইব্রেরিতে হাজার হাজার পাঠক আসেন। সারাদিন এটা ওটা খুঁজেন, বই বের করে পড়েন, আবার পড়া শেষে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে চলে যান।
পাঠক চলে যাবার পর সন্ধ্যায় কয়েকজন লাইব্রেরি কর্মী নেমে পড়েন তাদের কাজে। তাদের কাজ বইগুলোকে আবার সুন্দর করে যথাস্থানে তাকে তাকে রেখে দেন। পরদিন যাতে যে কেউ নিমিষেই খুঁজে নিতে পারে।
আমাদের ব্রেইনের ভেতরে একটি অতি ছোট একটি অংশ আছে যার নাম হিপ্পোক্যাম্পাস। তার কাজটি অনেকটা সেই লাইব্রেরি কর্মীদের মতো।
আমাদের সারা জীবনের ঘটে যাওয়া প্রতি মুহূর্তের ঘটনাগুলো হিপ্পোক্যাম্পাস ক্রমানুসারে স্মৃতির ফিতায় সাজিয়ে রাখে। আপনি যেই মুহূর্তেই কোনো ঘটনা মনে করতে চাইলেন, হিপ্পোক্যাম্পাসের কাজ হলো সেটা আপনার মানসপটে ছায়া ছবির মতো তুলে ধরা।
ধরুন ছেলে বেলায় একবার স্কুল পালিয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন। আপনি চোখটা বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করলেন। রঙিন হয়ে সেই মুহূর্তগুলো আপনার স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠতে থাকলো এক এক করে। পুরো সিকুয়েন্স মনে পড়লো। সকল সহপাঠীদের চেহারা, হাসি, হৈ-হুল্লোড়, এমনকি সেদিনের কথাবার্তাগুলো।
এটা কিভাবে সম্ভব হলো? এই অসম্ভব কাজটিই করে রাখে হিপ্পোক্যাম্পাস। সে নিজের মধ্যে সব স্মৃতিগুলো ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে সাজিয়ে রেখেছে ফলেই আমরা মনে করতে পারি।
হিপ্পোক্যাম্পাস এই কাজটি করে আমরা যখন দিনের সব কাজ শেষ করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি তখন। ঘুমের মধ্যে সারা দেহ ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে জেগে থাকে কেবল ব্রেইন। ফ্লাই করার পর অটোপাইলট যেভাবে উড়োজাহাজ কয়েক হাজার মাইল উড়িয়ে নিয়ে চলে যায় গন্তব্যে, ব্রেইন ঘুমের সময় পুরো শরীরকে সারারাত পাহারা দিয়ে নিয়ে যায় ভোর বেলায়।
কিছু কিছু রোগ আছে মানুষ অতীতের কথাবার্তা, ঘটনা ধীরে ধীরে ভুলে যায়। হিপ্পোক্যাম্পাস যেসব রোগে শুকিয়ে যায় সেসব রোগের রোগীরা তাদের জীবনের অতীতের সকল কিছু ধীরে ধীরে ভুলে যান। ডিমেনসিয়া, এলজিমারস, ডিপ্রেশন অন্যতম রোগ যাতে রোগীর ব্রেইন তথা হিপ্পোক্যাম্পাস শুকিয়ে যায়, রোগী ধীরে ধীরে তার অতীত ভুলে যেতে থাকে।
ডিপ্রেশন বা হতাশা, সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তা ভাবনায় মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
বয়সের প্রভাবেও এক সময় আমাদের ব্রেইনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় অর্থাৎ ব্রেইন শুকিয়ে যায়। সেজন্যে বুড়ো বয়সে আমাদের দাদা দাদী, নানা নানী অনেক সময় ঠিকমতো সব কিছু মনে করতে পারেন না।
লেখক: ডা. সাঈদ এনাম ওয়ালিদ