যেসব আয়না আমরা নিত্যদিনের কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করি সেগুলো সোডালাইম সিলিকা হতে তৈরি স্বচ্ছ কাচের বস্তু, যার অপর পৃষ্ঠে রূপার প্রলেপ দেয়া থাকে। লেহম্যান টার্মে আয়নাকে বলা হয় সোডালাইম কাচের রূপালি পাত। তো এই সোডালাইম মিশ্রণের বর্ণ হলো সবুজ, যা আয়নাকে এত চমৎকার প্রতিফলন বৈশিষ্ট্য প্রদান করে! হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, এই রূপালি প্রতিফলক মাধ্যমটির রঙ আসলে আবছা সবুজ! ২০০৪ সালে স্পেনের গ্রেনাডায় রেমন্ড লি ও হাভিয়ের হারনান্দেস-আন্দ্রেস নামের দুই গবেষক একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান জাদুঘরের ঐতিহাসিক মিরর টানেলে একটি পরীক্ষা চালান। মিরর টানেল হলো একটি অদ্ভুতদর্শন যন্ত্র, যেখানে পরস্পরের দিকে মুখ করে দু’টি আয়না বসানো হয়। এ দু’প্রান্তের দুই আয়নায় তাকানোর জন্য যন্ত্রের দু’প্রান্তে দুটি আই হোল থাকে। হোল দু’টি দিয়ে দু’জন দর্শক পরস্পরের দিকে তাকাতে পারেন। গবেষকরা লক্ষ্য করেন টানেলটিতে ন্যূনতম ৫০ বার আলোক প্রতিফলনের পরপরই সেই আলোক রশ্মিটি সবুজ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ধারণ করে ( ৫৫২ ন্যানোমিটার)!
রঙ এর একটি ধর্ম বলতে গেলে সবাই জানেন, সাদা আলো সব রঙ এর আলোকে প্রতিফলিত করে ও কালো রঙ সব রঙের আলোকে শুষে নেয়, সুতরাং আয়নার রঙ হওয়া উচিত সাদা, তাই না? তবে উল্টো একটা প্রশ্ন করি, ঘরের মেঝের সাদা টাইলস কিংবা আপনার পরনের সাদা টিশার্টে কেন কিছুর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান না। উত্তরটা হলো- সাদা আলো সব রঙ এর আলোকে প্রতিফলিত করে বটে, তবে বিচ্ছিন্নভাবে, বিভিন্ন দিকে। এ ধরণের প্রতিফলনকে বলে ব্যপ্ত প্রতিফলন। অন্যদিকে, আয়নায় আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। তার মানে হলো, উৎস থেকে আলো এসে আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আলো সরাসরি সে উৎস বরাবর প্রতিফলিত হয়। এ কারণেই আমরা একটি বস্তুকে বাস্তবে যেমন দেখি আয়নাতেও অবিকল তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। এটিই ছিলো আয়নার গঠনের পেছনের প্রধান রহস্য। যেসব আয়না দেখি সেগুলো আসলে হালকা সবুজ বর্ণের সোডালাইমের চকচকে ব্লক। আর তা স্বচক্ষে অবলোকন করতে যেতে হবে গ্রেনাডার সেই মিরর টানেল দর্শনে।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ