শরীরে রক্ত সরবরাহের জন্য সারা দেহে জালের মতো আছে রক্তনালি। এ রক্তনালি দুই ধরনের। ধমনি এবং শিরা। ইংরেজিতে বলে Artery & Vein। ধমনির কাজ হৃদপিণ্ড থেকে রক্তের মধ্যে অক্সিজেন মিশিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়া। আর শিরার কাজ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন রক্তকে সংগ্রহ করে হৃদপিণ্ডে পৌঁছানো।
একজন মানুষের শরীরে যা রক্তনালি আছে তার দৈর্ঘ্য হবে ৬০ হাজার মাইলের মতো, যা দিয়ে পৃথিবীতে আড়াইবার পেঁচানো যাবে। পৃথিবীর ব্যাস মাত্র ২৪ হাজার মাইল। হৃদপিণ্ড সারা শরীরে দৈনিক গড়ে ১৮০০ গ্যালন রক্ত পাম্প করে। অন্যদিকে শরীরে সব ধরনের সংবেদন সরবরাহ করতে রক্তের মতো নার্ভের নেটওয়ার্ক আছে। এ নার্ভ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভব স্পাইনাল কর্ড এবং ব্রেইনে পৌঁছায় এবং ব্রেইন থেকে নির্দেশ শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছায়। মানুষের শরীরে প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন নার্ভ আছে। রক্তনালিতেও নার্ভ আছে। এ নার্ভের কাজ রক্তনালির সংকোচন প্রসারণকে নিয়ন্ত্রণ করা।
আমরা যখন ব্যায়াম করি, আমাদের বেশি পরিমাণ অক্সিজেনের দরকার হয়, পেশিগুলোর বেশি কাজ করতে হয় বলে। তখন রক্তনালির নার্ভ রক্তনালিগুলোকে বেশি প্রসারিত করে। ফলে বেশি পরিমাণ রক্ত বেশি বেশি অক্সিজেনকে পৌঁছে দেয়।
এখন শরীরের কোথাও কিছুক্ষণ একনাগাড়ে চেপে বসলে সেখানকার নার্ভ এবং রক্তনালিতে বাধা পড়ে। একদিকে রক্তনালিগুলো ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না, অন্যদিকে রক্তনালিতে থাকা নার্ভ কিংবা ওই অংশে থাকা নার্ভগুলো তাদের সংবেদনগুলো পাঠাতে বাধা পায়। কিছুক্ষণ পর সেই চাপ সরে গেলে হঠাৎ সেই অংশের রক্তনালিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায়, নার্ভ তার সংবেদন বাধা থেকে বেরিয়ে ব্রেইনকে সংকেত পাঠায়। ব্রেইন হঠাৎ করে এমন থেমে গিয়ে আবার হঠাৎ ফিরে আসা সংবেদনকে ভুল করে পিনপিনের মতো ফিলিংস দেয়। আর তাতেই আমরা যা অনুভব করি-সেটাই pins and needles।
এটি কিছুক্ষণের জন্য থাকে, আবার নিজে নিজেই চলে যায়। তাই অনেকে একে temporary paraesthesia বলে।
এটি বার বার এবং বেশি ঘটতে থাকলে তা শরীরের মধ্যে কোনো সমস্যার লক্ষণ। অনেক সমস্যার কারণে এমন পিনস অ্যান্ড নিডলস হতে পারে। তিনটি প্রধান কারণ আলোচনা করব, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত।
Pins and needles সচরাচর হাতে পায়ে বেশি হয়। ঘাড়, মুখ, পিঠ, পশ্চাৎদেশ, এসব জায়গাতেও দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের শরীরে সুগার বেড়ে গেলে পায়ে এমন pins and needles অনুভব আসে। ট্রিটমেন্ট না করে এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে পায়ের বিভিন্ন জায়গায় সংবেদন ক্ষমতা কমে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পায়ের সেনসেশন কার্যক্ষমতা কমে যায়, পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, পায়ের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। সমস্যাটিকে বলে ডায়াবেটিস ফুট।
Carpal tunnel syndrome হাতের কব্জির মধ্যে এক ধরনের ঝিনঝিন, পিনপিন কিংবা অবশ ভাব চলে আসে অনেকের। এটি মূলত বেশি হয় যারা অনেকক্ষণ কম্পিউটারের কিবোর্ডে কাজ করেন। এমনকি যারা অনেকক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে টেপাটিপি করেন, তাদেরও এমন কব্জিতে ব্যথা করতে পারে। কব্জির মধ্যে মিডিয়ান নার্ভ নামের একটি নার্ভ আছে, এটিতে চাপ পড়ার কারণে এমন হয়। বেশিক্ষণ এমন কাজ না করে এবং এমন পিনপিন অনুভব এলে হাতকে কয়েকবার ঝাড়া দিলে অস্বস্তিটি চলে যাবে।
Tight jeans syndrome বিশেষ করে মেয়েরা টাইট জিনস পরে বেশি। দীর্ঘক্ষণ এমন পরে থাকলে উরু, কোমর এবং পশ্চাৎদেশে অবশ অবশ অস্বস্তি ভাব লাগে। আবার এমন টাইট প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন অনেকক্ষণ রাখলে সেটাও অনেক চাপ দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এমন সমস্যাকে বলে mergalgia paresthetica।