শিশুরা কেন জন্মের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে পারে না
হাটি হাটি পা পা, যেথা খুশি সেথা যা৷ ছোট্ট একটি মানব শিশু, যখন তার বয়স হয় এক বছরের খুব কাছে, তখনই সে কাঁপা কাঁপা পায়ে মা বাবার সঙ্গে এক কদম, দুই কদম করে হাটতে পারে৷
দুই পায়ের উপর ভর করে সারাটা জীবনের হেটে চলার শুরুটা সেখান থেকেই শুরু৷
কিন্তু ধরুন একটি চারপেয়ে প্রাণীর কথা৷ জম্ম থেকেই যেন তারা চলতে শুরু করছে৷ কিন্তু কি ভাবে ? সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ট মানুষের বেলায় তা হয় না কেন? এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নানা আলোচনা গবেষণা৷ বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে যে মেতে আছেন তাও আমরা জানি৷ আর এই বিষয়টি নিয়েই সদ্য করা একটি গবেষণার ফলাফল কিন্তু বেরুলো কিছু দিন আগে৷
সুইডেনের লন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মস্তিস্ক গবেষক মার্টিন গ্যাজভিক্স৷ তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছিলেন৷ সেই গবেষণার মূল বিষয় ছিল প্রাণীর হাটতে শেখা৷ আর এ কথাটি আপনারা তো সকলে জানেন যে হেটে চলা মানেই হলো এর সঙ্গে মস্তিষ্কের একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক৷ তাদের গবেষণার ফলাফলের উপর দেখা গেলো মানুষ বা অন্য প্রাণী যখন গুঁটি গুঁটি পায়ে হাটতে শেখে সেই সময়ে সবার মস্তিষ্কের আকার থাকে প্রায় একই সমান৷ আচ্ছা আরও সহজ করে বলি এ যেমন একটি হরিণ শাবক জন্মের একটু সময় বাদেই এধার ওধার নড়ে চড়ে হুট করে দাঁড়িয়ে যায়৷ তারপর দোদুল্য মনে ভারসাম্য রেখে দে ছুট৷ তখন থেকেই শুরু হলো এর ছুটে চলা৷ কিন্তু মানব শিশুর বেলায় কিন্তু তাকে দাঁড়ানো শিখতেই লাগে আট-নয় মাস৷ এরপর বছরের ঘরে পা দিলেই শুরু হয় হাটি হাটি পা৷ প্রফেসর মার্টিন গ্যাজভিক্স বলছেন, মানুষ এবং অন্য প্রাণী যখন চলতে শুরু করে তখন তাদের সকলের মস্তিস্কের আকার থাকে প্রায় একই সমান৷ তারা তাদের গবেষণায় ২৪ ধরণের প্রজাতির উপর এই গবেষণা চালান৷এরা সকলেই ম্যানামেল৷ অবশ্য এই গবেষণার ফলাফলে তারা বলেছেন, কেবল মানুষ ছাড়া সকল প্রাণীই হাটতে চলা শুরু সময় প্রায় একই৷ এতে বোঝা যাচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষের মস্তৃস্কের বৃদ্ধির গতিটা কিন্তু একটু ধীরেই৷ আর তাই হয়তো বলা হয় ধীরে চলো বৎস... কারণ শক্তিশালী বুদ্ধি জন্য প্রয়োজন একটু বেশি সময়!
যে বুদ্ধি নিয়ে আলোচনা করছি, সেই বুদ্ধিটা আসলে কি? অধিকাংশের সমস্যার সঠিক সমাধান করাই বুদ্ধিমত্তার আসল পরিচয়৷ তবে বারট্রান্ড রাসেলের মতে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিও বুদ্ধি যাচাই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ – বারবার প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান করা আর সমস্যার গভীরে গিয়ে মৌলিক সমাধান করার মধ্যে পার্থক্য অনেক৷ নিউরোলজিস্ট হোয়ার্স বার্লোর মতে, আপাতদৃষ্টিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু ঘটনার মধ্যে নির্দিষ্ট সূত্র খুঁজে বের করার মধ্যেই বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ৷ আর প্রাণী জগতে মানুষই কেবল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানবমস্তিষ্কের মূল গঠন-উপাদান হল নিউরোন৷ মস্তিষ্কে মোট ১১ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ বা নিউরোন থাকে৷ এই কোষগুলো বৈদ্যুতিক সঙ্কেতের আকারে অনুভূতি পরিবহন করতে পারে৷ এদের দুই প্রান্তে যে শাখাপ্রশাখার মত প্রবর্ধক থাকে তারা হল ডেন্ড্রাইট, আর মূল তন্তুর মত অংশের নাম অ্যাক্সন৷ ডেন্ড্রাইট হল সঙ্কেতগ্রাহক অ্যান্টেনার মত, যা অন্য নিউরোন থেকে সঙ্কেত গ্রহণ করে৷ অ্যাক্সন সেই সঙ্কেত পরিবহন করে অপরপ্রান্তের ডেন্ড্রাইটে নিয়ে যায়৷ দুটি বা ততোধিক নিউরোনের সংযোগস্থলকে বলে সাইন্যাপ্স, যেখানে এদের সঙ্কেত বিনিময় হয়৷ মানুষের করটেক্সে মোটামুটি ১০,০০০ এর মত সাইন্যাপ্স থাকে৷ সাইন্যাপসের ‘ওয়ারিং'-এর মাধ্যমেই আমাদের মস্তিষ্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে৷
পশুদের মানুষের উপরোক্ত তথ্য থেকে বিপরীত তাই হাঁটতে পারে।