সহজ উত্তর- মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে প্রচুর লোহা বিদ্যমান, আর ওসব লোহায় মরিচা পড়ে বলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে৷ তবে এখানে একটা বড় “কিন্তু” রয়েছে৷ সে প্রসঙ্গে পরে যাব, আগে মঙ্গলে এত লোহা আসল কী করে, তার জবাব দেওয়া যাক। লোহার উৎস হচ্ছে নক্ষত্র। এই ধাতু তারার ভেতরকার ফিউশন বা একীভবনের মাধ্যমে তৈরি হয়। সুপারনোভায় বিস্ফারিত হয়ে যখন একেকটা বিশালাকৃতির তারা “মৃত্যবরণ” করে, তখন তাদের অভ্যন্তর থেকে প্রচুর লোহা বেরিয়ে যায়। এ লোহা পরে মহাশূন্যে ভাসতে থাকে। পৃথিবী ও সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ তাদের জন্মলগ্নে লোহার টুকরোগুলোকে মাধ্যাকর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের কাছে টেনে নেয়। পৃথিবীতে প্রচুর লোহা আছে, তবে বেশিরভাগই এর কেন্দ্রে অবস্থিত৷ এদিকে মঙ্গল আকারে ক্ষুদ্র হওয়ায় এর অভিকর্ষজ বল দুর্বল, যার কারণে অনেক লোহা পৃষ্ঠেই থেকে যায়।
এখন এ লোহায় কেন মরিচা ধরে লাল হয়ে যায়, সে প্রসঙ্গে আসি। আমরা জানি, মরিচা হচ্ছে ফেরিক অক্সাইড। অক্সিজেনের সাথে লোহা বিক্রিয়া করলেই এ যৌগ পাওয়া যাবে। আবার মঙ্গলগ্রহে অক্সিজেন নেই বললেই চলে, তাহলে বিক্রিয়া হলো কীভাবে?
বিজ্ঞানীদের কেউই নিশ্চিত নন। তবে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা বলাই যায়।
সম্ভাবনা ১: একটা সময়ে মঙ্গলে বৃষ্টি হত৷ হয়তো-বা কোনো এক সময় পানির অণু (H2O) থেকে অক্সিজেন পরমাণু (O) বেরিয়ে আসে। তাতেই লোহায় মরিচা ধরে৷
সম্ভাবনা ২: কোটি বছর ধরে চলমান প্রক্রিয়ায় সূর্যালোক কার্বন ডাই-অক্সাইড ভেঙে অক্সিডেন্ট বের করে আনে, যেমন হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড, ওজোন ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য, এসবও লোহার সাথে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। যেহেতু মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড অপ্রতুল নয়, ফলে এটা ঘটা খুব সম্ভব।
সম্ভাবনা ৩: মঙ্গলে যেসব ধূলিঝড় হয়, সেগুলো গ্রহটির পৃষ্ঠে থাকা স্ফটিকমণি (quartz crystal) টুকরো টুকরো করে ফেলে। ফলে এর ভেতরে থাকা অক্সিজেন অবমুক্ত হয়ে লোহায় মরিচা ধরিয়ে দেয়।
আর মরিচার রঙ লাল সে কথা কে না জানে৷