উচ্চ রক্তচাপকে (হাই বিপি) হাইপারটেনশনও বলে। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদয়ের ধমনীতে রক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে প্রবাহিত হয়। যখন কোনো ব্যক্তির রক্তের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকে তখন সেটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় উচ্চরক্তচাপ।উভয় বাহুতে যদি কোন ব্যক্তির রক্তচাপ ১৪০/৯০ (চাপের একটি একক) কিংবা তার উপরে থাকে তাহলে তার ‘উচ্চ রক্তচাপ’ বলা যেতে পারে।
নিয়মিত রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশী হলে সেটাকেই উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। সাধারণত, এক সপ্তাহের বিরতিতে কমপক্ষে তিনবার মাপলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত কিনা?
সঠিক চাপ মাপার জন্য কয়েকটি নিয়ম মানা জরুরী। তাছাড়াও অন্যান্য যেসকল বিষয় রক্তচাপকে প্রভাবিত করে সেগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন, রক্তচাপ মাপার কমপক্ষে আধা ঘন্টা আগে থেকে ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ক্যাফেইন গ্রহণের কমপক্ষে একঘন্টা পর মাপতে হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় মাপা জরুরী। কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় বসা অবস্থায় থাকা উচিত।
অনেক সময় আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, আপনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। অন্য কারণে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে জানা যায়। মূলত এই কারণেই যতো মানুষ হাই প্রেশারে ভোগেন তার মধ্যে কম করেও ৫০ শতাংশ কোনোদিনই জানতে পারেন না যে তাদের সমস্যা আছে। স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগ পর্যন্ত রোগ ধরা পড়ে না। কিডনিও খারাপ হতে শুরু করে। তবে কারো কারো কিছু উপসর্গ হয় যা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কারণেও হতে পারে। যেমন, মাথাব্যথা। বিশেষ করে মাথার পিছনে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা শুরু হয়। দু-চার ঘণ্টা পর কমে। এছাড়াও আরো কয়েকটি উপসর্গ হচ্ছে, মাথাঘোরা। বুক ধড়ফড় করা। মনোযোগের অভাব। ক্লান্তি। হাঁপিয়ে ওঠা। মাংসপেশীর দুর্বলতা। পা ফোলা। বুকব্যথা। নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
অল্প বয়সে আপনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হলে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা যেমন বাড়তে পারে তেমনি বাড়বে মৃত্যুঝুঁকিও। নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু অভ্যাস পাল্টে ফেলুন আজই যেমন, ওজন ঠিক রাখা। হালকা ব্যায়াম করা। দুই-তিন কিলোমিটার টানা হাঁটলেও কাজ হয়। খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া রান্নায় কম লবণ ব্যবহার করা এবং যে খাবারে লবণ বেশি আছে যেন ফাস্টফুড, আচার, সসেজ, পাঁপড়ি, মুড়ি খাওয়া কমানো। যে খাবারে ওজন এবং কোলেস্টেরল বাড়ে যেমন মিষ্টি আলু, ঘি, মাখন, ডালডা, ডিমের কুসুম, ভাজাভুজি ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া। মানসিক চাপ, টানাপোড়েন এড়িয়ে চলা। তামাকের নেশা ছেড়ে দেওয়া। ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। মাসে অন্তত দুই বার রক্তচাপ মাপা। প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া। সাইড এফেক্ট হলে ডাক্তারকে জানানো। অন্য ওষুধ শুরু করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা। সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে, নিয়ম মানতে হবে সেই মানসিক প্রস্তুতি রাখা।
মৃদু উচ্চরক্তচাপ সাধারণত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম এবং শারিরীক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। ফল, শাক সব্জি, স্নেহবিহীন দুগ্ধজাত খাদ্য এবং নিম্নমাত্রার লবণ ও তেলের খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ বিশিষ্ট রোগীর রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম রক্ত চলাচলের উন্নতি করে। এবং রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পরিবেশগত চাপ যেমন উঁচু মাত্রার শব্দের পরিবেশ বা অতিরিক্ত আলো পরিহার করাও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী হতে পারে।
এছাড়াও, খুব বেশি রাগারাগি-চেঁচামেচি করা যাবে না। লবণ পুরোপুরি বন্ধ করবেন না। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- দুধ, ছানা, ছোট মাছ, পেঁয়াজ বেশি করে খেতে হতো। এখনও অনেকে সেই নিয়ম মেনে চলেন। এ সমস্ত খাবার খেতে পারেন। কিন্তু ওষুধের বদলে নয়। ব্যথা কমার ওষুধ, গর্ভনিরোধক বড়ি থেকে রক্তচাপ বাড়তে পারে। কাজেই হাইপ্রেশার থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ সব ওষুধ খাবেন না।
গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ মা-সন্তান দুজনের জন্যই বিপজ্জনক। কাজেই সমস্যা হলে ডাক্তার দেখান। সন্তান জন্মানোর পরও ফলোআপ চালিয়ে যাবেন। কারণ কিছু মহিলার ক্ষেত্রে পরবর্তীকালেও সমস্যা থেকে যায়। ডাক্তারি পরামর্শে ওষুধ খাবেন। তবে মাঝারি এবং মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হয় সঙ্গে জীবনযাত্রার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।