প্রথমে আলোচনা করা যাক, কি পরিমাণ ইলেক্ট্রিক্যাল শক খেলে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে????
SHOCK
কি পরিমাণ ইলেক্ট্রিক্যাল শক খেলে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে????
শুকনা জায়গায় ৫০ভোল্ট পর্যন্ত সেফ, ভেজা জায়গায় সেটা হয়ে যায় ২৫ ভোল্ট অবশ্যই এসির ক্ষেত্রে৷ ডিসির ক্ষেত্রে সেটা ১২০ভোল্ট, সরাসরি কিংবা আলাদা সংস্পর্শে আসলে।
ফ্রিকোয়েন্সী বাড়ার সাথে সাথে দেহের মধ্যে দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকাংশে কমে যায়।
৫০-৬০হার্জ এর এসি কারেন্ট, সমপরিমাণ ডিসি কারেন্ট অপেক্ষা অধিক ক্ষতিসাধন করে থাকে। ছবিতে শরীরের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট প্রবাহের তুলনা করা হয়েছে:
দেহের মধ্যে দিয়ে কি পরিমাণ কারেন্ট যাবে তা নির্ভর করে দেহের রোধ এর উপরে। দেহের রোধ আবার বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে:
- - আর্দ্র চামড়া
- - কনট্যাক্ট পয়েন্ট এ চামড়ার পুরুত্ব
- - ওজন
- - বয়স
- - লিঙ্গ
হার্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কারেন্ট সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে, কারণ হৃদপিন্ডের নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সী আছে, মিনিটে ৭২ বার, ৫০-৬০ হার্জের কারেন্ট গেলে মিনিটে হৃদপিন্ডের কম্পন্ন সংখ্যার তারতম্য ঘটে, ফলে হার্ট ফেইলার ঘটে।
ছবিতে দেখুন, শরীরে বিভিন্ন অংশের রোধ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ :
যেসকল সমস্যার দেখা দেয় তা হল:
ইলেক্ট্রিক্যাল শকের ফলে ঘটা ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন এর ফলে হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, ফলে কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট এবং ব্রেইনে সিগ্ল্যাল পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়, ফলে খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটে।
জুল ইফেক্ট এর ফলেই শরীরে জ্বালাপোড়া ঘটে, আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতই হয়.
•
এখন আসুন দেখি, বিদ্যুৎ প্রবাহ শরীরে কীভাবে ক্ষতি করে::
- মানুষের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো প্রভাবিত ও পরিবর্তিত হয়:বিদ্যুতের তার শরীরের যে স্থানের সংস্পর্শে আসে, সেখানে তাপ উৎপন্ন হয় এবং গরম হয়ে যায়, ফলে জায়গাটি গরম হয়ে পুড়ে/গলে যায়৷
- শরীরে ভিতরে কোথায় কেমন ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করবে শরীরের কোন অংশ দিয়ে কেমন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর৷
ছবিতে শরীরের কোনো দুইটি অংশ বৈদ্যুতিক তারের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অংশের সংস্পর্শে আসলে কোন বিদ্যুত কখন কোন অংশ দিয়ে প্রবাহিত হবে তা দেখানো হয়েছে৷
- মানুষের শরীরের ৭০% পানি, যা বিদ্যুৎ পরিবাহী৷ শরীরেের এই পানির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে পানির তড়িৎবিশ্লেষণ শুরু হয়৷ কিন্তু, শরীরের মূল ক্ষতির কারণ এটি নয়৷ মূলত, শরীরের পানি তড়িৎবিশ্লেষ হতে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন৷ তড়িৎ বিশ্লেষণ - উইকিপিডিয়া
- মানুষের শরীরে স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে৷ শরীরের পানি দ্রবীভূত সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়নের মাধ্যেমে নিউরণ হল সকল কোষ বৈদ্যুতিক সিগন্যাল উৎপন্ন করে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রক্ষা করে৷ শরীর বিদ্যুতায়িত হলে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হয়৷ ব্রেইন যদি সামান্য সময়ের জন্যও এই যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারে, তবে আপনি জ্ঞান হারাবেন৷ এছাড়া, স্নায়ুকোষগুলোর মধ্য দিয়ে অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে স্নায়ুকোষগুলো মারা যেতে পারে৷ ফলে আপনি স্মৃতী হারিয়ে ফেলতে পারেন, কিংবা প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারেন৷ শরীর অবশ (Paralysis) হয়ে যেতে পারে৷
- হৃদপিন্ডের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে হৃদপিন্ডের নিজস্ব বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে৷ যার ফলে হার্ট এটাক (Atrial/ventricular fibrillation, cardiac arrest, heart block) ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে৷ ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারেে এবং মানুস মারা যেতে পারে৷
ছবিতে হৃদপিন্ডের বিদ্যুত প্রবাহ দেখানো হয়েছে৷
- শরীরে রাসায়নিক পরিবর্তন: বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে পরিবাহী বস্তুর রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে৷ শরীরে এনজাইম, হরমোন, গাঠনিক প্রোটিনসহ অনেক রকম প্রোটিন রয়েছে৷ এছাড়াও রয়েছে DNA, RNA, আরো আছে নিউক্লিয় প্রোটিন৷ এসকল প্রোটিন অণুগোল নির্দিষ্ট গঠন ও কাজ রয়েছে৷
বিদ্যুৎপ্রবাহের ফলে এই অণুগুলোর (Protein, enzyme, hormone, DNA, RNA, etc) গঠন নষ্ট হয়ে যায়৷ ফলে এগুলো তাদের নিজস্ব কাজ করতে পারেনা৷
- এছাড়া রক্তের pH পরিবর্তন হয়ে যায়৷ এবং এর ফলেও উপরোক্ত প্রোটিন অণুগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
উপসংহার: বিদ্যুৎায়িত হলে নানান রকম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও তিনটি উপায়েে শরীর ক্ষতির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি৷ তা হল: শরীরের প্রোটিন অণুর গঠন নষ্ট হয়ে যাওয়া, হৃদযন্ত্রের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়া, স্নায়ুকোষের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়া৷ ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করে:
- - ভোল্টেজ
- - কারেন্ট প্রবাহের
- - কারেন্টের মান
- - ফ্রিকোয়েন্সী
- - কারেন্ট প্রবাহের পথ
- - মানুষটির রিয়্যাক্ট করার ক্ষমতার উপরে