আতশবাজি আকাশ আলোকিত করে লাল নীল হলুদ আলোয়। আকাশে এই আলোর খেলার রহস্য কী? কীভাবে রং ছড়ায় আতশবাজি? অনেক সময় বড় বড় উৎসব আয়োজনে দেখা যায়, আতশবাজির মাধ্যমেই আকাশে ফুটে ওঠে কোনো লেখা বা ছবি। সেটাই বা কেমন করে হয়? আতশবাজির বাইরের অংশে থাকে শক্ত কাগজ। এই কাগজের খোলসের ভেতরেই বিস্ফোরিত হওয়া এবং রং ছড়ানোর উপাদানগুলো থাকে। এককথায় বললে পুরোটাই আসলে রাসায়নিক উপাদানের খেল।
আতশবাজি সাধারণত সিলিন্ডার বা গোলাকৃতির হয়। এর সঙ্গে ফিউজটি তৈরি হয় সুতা ও বারুদের সাহায্যে। আতশবাজির নিচের অংশেও থাকে একধরনের বারুদ, যা কাঠকয়লা, সালফার আর পটাশিয়াম নাইট্রেটের মিশ্রণে তৈরি। ফিউজের সাহায্যে আগুন যখন এই বারুদে পৌঁছে, তখন রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে প্রবল গ্যাসের চাপ তৈরি হয়, যেটা আতশবাজিকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। সাধারণ আতশবাজির ভেতরে সাধারণত দুই ধাপে বারুদ থাকে। প্রথম ধাপের বারুদের কারণে এটি উড়ে যায় এবং দ্বিতীয় ধাপে বিস্ফোরিত হয়। দুটি ধাপকে সংযুক্ত করার জন্য ফিউজ ব্যবহার করা হয়।
রং ছড়ানোর জন্য আতশবাজির ভেতরে কতগুলো গোলক সাজানো থাকে। বারুদ আর নানা রকম রাসায়নিক দিয়ে এই গোলকগুলো তৈরি। একটি আতশবাজির ভেতরে কয়েক শ গোলকও থাকতে পারে। একেক ধরনের রাসায়নিক একেক রং তৈরি করে। যেমন স্ট্রনটিয়াম ও লিথিয়াম থেকে হয় লাল, ক্যালসিয়াম থেকে কমলা, সোডিয়াম থেকে হলুদ আর ম্যাগনেশিয়াম বা অ্যালুমিনিয়াম তৈরি করে সাদা রং। যখন আকাশে আতশবাজির সাহায্যে হার্ট, হাসি মুখ বা এ ধরনের কোনো আকৃতি ফুটিয়ে তুলতে হয়, তখন সেই অনুসারে ভেতরে বারুদ ও রাসায়নিকের গোলকগুলো সাজানো থাকে।
আতশবাজি উদ্ভাবিত হয়েছিল চীনে, একরকম আকস্মিকভাবেই। বনের মধ্যে বাঁশগাছ পোড়াতে গিয়ে চীনারা দেখল, বাঁশগুলো বিকট শব্দে ফেটে পড়ে। আসলে বাঁশের খোলসের ভেতর অক্সিজেন জমে থাকত, আগুনের স্পর্শে তা বিস্ফোরিত হতো। এ ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে পরে বারুদ ও অন্যান্য রাসায়নিক যোগ করে চীনারাই প্রথম আতশবাজি তৈরি করে।
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস