নাক আমাদের শ্বসনতন্ত্রের অংশ। অক্সিজেন গ্রহণ করতে এবং শরীরের কোষে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করতে হলে শ্বাস-প্রশ্বাস জরুরি। কেউ যদি নাক-মুখ চেপে ধরে তাহলে কীভাবে একটা মানুষ মারা যাবে?
শ্বাসপ্রধান বন্ধ হলে অক্সিজেন নিতে পারবে না, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করতে পারবে না। অক্সিজেন না পেলে কোষ গ্লুকোজকে ভেঙ্গে শক্তি (ATP) উৎপন্ন করতে পারবে না। ফলে সবাত শ্বসন না ঘটে অবাত শ্বসন শুরু হবে। অবাত শ্বসনে প্রাণিকোষে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। দ্রুত ল্যাকটিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে কোষের পরিবেশ অম্লীয় (অ্যাসিডিক) হয়। আমরা জানি, এনজাইমরা বেশি কিংবা কম pH এ কাজ করতে পারে না। ফলে এনজাইম দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয় কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। কোষের সমস্ত বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
কোষের বিক্রিয়া বন্ধ মানেই কোষের সমস্ত কাজকর্ম থেমে যাওয়া। একসময় শক্তির অভাবে, অতিরিক্ত অ্যাসিডে কোষ মারা যেতে শুরু করে। সবার আগে মারা যায় আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনরা। নিউরন আর কোষের মৃত্যু মানেই জীবের বা মানুষের মৃত্যু। ভিন্নভাবেও ভাবা যাক, নাক-মুখ বন্ধ থাকলে কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীরে আটকা পড়ে। কার্বন ডাই-অক্সাইড রক্তরসে মিশে যায়। কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে ফেলে। রক্তের অ্যাসিডিটি দ্রুত বাড়ে। অ্যাসিডিটি বাড়লে এনজাইম কাজ বন্ধ করে দেয় বা নষ্ট হয়ে যায়। উপরের মতোই, একই প্রক্রিয়ায় একসময় প্রাণি বা মানুষ মারা যায়।
প্রশ্ন হতে পারে : যাদের (পরিফেরা, নিডারিয়া, প্লাটিহেলমিনথিস, নেমাটোডা) নাক নেই, শ্বসনতন্ত্র নেই তারা কীভাবে বেঁচে থাকে?
এদের আসলে আলাদা করে অক্সিজেন নেবার জন্য, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেবার জন্য নাক বা শ্বসনতন্ত্র লাগে না। এদের কোষ ব্যাপনের মাধ্যমে অক্সিজেন নেয়, ব্যাপনের মাধ্যমেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়। এদের মেরে ফেলতে হলে- বায়ুশূন্য জারের ভেতরে রাখতে হবে। কারণ এদের নাক নেই। তাই সারা শরীরকেই অক্সিজেনের আওতা থেকে দূরে রাখতে হবে। উন্নত প্রাণি হবার যেমন সুবিধা আছে অনেক, তেমনই কিছু অসুবিধাও আছে। আমরা প্রথম চারটি পর্বের হলে নাক-মুখ থাকতো না। কেউ চেপে ধরে মেরেও ফেলতো পারতো না। বায়োলজির মজা এখানেই।
লেখক : ডা. রাজীব হোসাইন সরকার