মেহেদীর রঞ্জক : মেহেদী পাতায় কমলা রং এর এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ থাকে যাকে লসোন (Lawsone/Hennotannic acid) বলে। একমাত্র ল্যাব টেষ্টেই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব মেহেদীতে কোন কোন কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে। আসল মেহেদী চেনার উপায়ও আছে:
খাঁটি মেহেদী কখনোই কালো রং এর হয়না। সকল কালো মেহেদীই ভেজাল বা কেমিক্যাল মিশ্রিত।
প্রাকৃতিক মেহেদী কখনোই ৫ মিনিটে গাঢ় টুকটুকে রং দেয়না। মেহেদীর রং হাতে ঢুকতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে এবং পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘন্টায় তা অক্সিডাইজড (বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে) হয়ে গাঢ় রং হয়।
মেহেদীর রসের স্বাভাবিক রং ন্যাচারাল কমলা (CI-75480)। মেহেদী হাত দিয়ে ধরা মাত্রই যদি হাত লাল বা খয়েরী লাল হয়ে যায় না।
মেহেদীতে কী কী ভেজাল মেশানো হয়ঃ
- কার্বোলিক এসিড : এটা ফেনল বা সাপ তাড়ানোর ঔষধ হিসাবে বেশী পরিচিত। এটা ত্বকের কোষগুলোকে মেরে ফেলে এবং এর প্রতিরোধক ক্ষমতাকে ধ্বংস করে;ফলে মেহেদীর রং সহজেই ত্বকে প্রবেশ করে ও দ্রুত রং দেয়।
- পিপিডি : Para-Phenylene-Diamine এটা কালির রং।সকল কালো রং এর মেহেদীতে পিপিডি আছে। ন্যাচারাল মেহেদী কখনোই কালো রং এর হয়না। পিপিডি মারাত্মক অ্যালার্জি তৈরী করতে পারে।
- রেড অক্সাইড : এটা ফার্নিচারের রং করার কাজে ব্যবহৃত লালচে খয়েরী রং এর পাউডার।
- ক্ষতিকর দ্রাবক : কেরোসিন, গ্যাসোলিন, তার্পিন তেল, কর্পুর... ইত্যাদি। এসব দ্রাবক মেহেদীর রঞ্জক লসোনের ঘনত্ব বাড়ায়, ফলে মেহেদীর রং গাঢ় হয়।
- কেমিক্যাল ডাই : মেহেদীর রং গাঢ় ও দ্রুত করার জন্য কাল,লাল বা খয়েরী লাল রং এর ডাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব কেমিক্যালের ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী?-
- ত্বকের অ্যালার্জি : এই ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশী দেখা যায়।এতে ত্বক চুলকায়,লাল হয়,ফুলে উঠে,চামড়া উঠে যায় বা ফোস্কা পড়ে (contact dermatitis)। পরবর্তীতে ত্বকে কালো দাগ (post inflammatory hyperpigmentation) ও scarring হতে পারে।অনেক সময় তাৎক্ষণিক কোন সমস্যা না হলেও ১-৬ সপ্তাহ পরও সমস্যা হতে পারে (delayed hypersensitivity reaction)। এমনকি প্রথমবার লাগিয়ে কিছু না হলেও দ্বিতীয়বার লাগানোর পরে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে (sensitization)।
- ত্বক পুড়ে যাওয়া : ফেনল ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারে।কম ঘনত্বের ফেনল ত্বক না পুড়ালেও ত্বকের কোষকে মেরে ফেলতে পারে।
- ফেনল, কেরোসিন, তারপিন, পিপিডি ইত্যাদি ত্বক থেকে দ্রুত শোষিত হয়ে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত কিডনী ও লিভারের জন্য এরা মারাত্মক ক্ষতিকর।
- কর্পুরের ঘ্রাণ তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করে। বমিও হতে পারে।
- টেক্সটাইল ডাই ক্যান্সারসহ নানারকম অসুখ তৈরী করে বলে খাদ্য ও প্রসাধনীতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
- মৃত্যু : Anaphylactic reaction বা তীব্র মাত্রার অ্যালার্জি হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ মারা য়েতে পারে।পিপিডির কারণে এভাবে রোগী মারা যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
হাতে মেহেদী লাগানো একটা শৈল্পিকচর্চ্চা। ধৈর্যধারণ ও নির্ভেজাল হওয়া শিল্পচর্চ্চার পূর্ব শর্ত। আসুন আমরা তাজা মেহেদী হাতে লাগাই আর কেমিক্যালযুক্ত মেহেদী বর্জন করি।
সংগৃহীত