এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একবার কৌতূহল বশত একটি সিগারেট পান করেছে তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুরাদস্তুর ধূমপায়ী হয়ে গেছেন। ধূমপান যে কত প্রকার ক্ষতি তা বলে শেষ করা যাবে না। নিম্নে কিছু ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ তুলে ধরা হল।
১. নেশাগ্রস্থ করে: সিগারেটের ধোঁয়াতে যে নিকোটিন থাকে তা হিরোইন অপেক্ষা শক্তিশালী। যা একজন সুস্থ ব্যাক্তিকে নেশাগ্রস্থ করে তুলে।
২. অপমৃত্যু ঘটায়: ধুমপান মানুষের অপমৃত্যু ঘটায়। আন্তর্জাতিক স্বাস্হ সংস্হা তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যে, সমগ্র পৃথীবিতে ধুমপানের কারনে যত বেশি অপমৃত্যুর ঘটন ঘটে অন্য কোন রোগ-ব্যধির কারনে তত বেশি অপমৃত্যু ঘটেনা। এর জন্য বিশ্বে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ। ১৯৫০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই মারা গেছে প্রায় ছয় কোটি লোক। আর এদের অর্ধেকই ছিল যুবক শ্রেণী।
৩. রোগপ্রতিরোধ কমায় : ধূমপানে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ধুমপানের কারনে ফুসফুসে ক্যান্সার, শরীরে তাপ, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী রোগব্যাধী দেখা যায়। ধুমপানের কারনে ফুসফুসে ক্যান্সার, শরীরে তাপ, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী রোগব্যাধী দেখা যায়।
৪. গৃহ হারা: ধূমপানকারী পরিবার, দেশে ও সমাজে সর্বমহলে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসাবেই বিবেচিত হয়। ধূমপানকারী পরিবার থেকে ধীরে ধীরে দূরে রাখে।
৫. অপচয়: ধূমপান নিঃসন্দেহে একটি অপচয়।
৬. শ্রবণশক্তি কময় : একজন ধূমপায়ীর শ্রবণশক্তি কম থাকে। সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭৫০ জন লোকের উপর এক সমীক্ষা চালায়। সেখানে লক্ষ্য করা যায় যে, অধূমপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ীদের শ্রবণশক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশী। এক গবেষকরা বলা হয়েছে যে, একজন ধূমপায়ীর ধূমপানকালীন সময়ে কোন অধূমপায়ী উপস্থিত থাকলে তারও একই সমস্যা দেখা দেবে।
৬. কন্ঠনালীতে ক্যান্সার: ধূমপান সরাসরি গলায় আক্রমণ করে। এজন্য কন্ঠনালীতে ক্ষতি হয়। ধুমপানের কারনে কন্ঠনালীতে ক্যান্সার হয়ে থাকে।
৭. রক্তনালীগুলো দুর্বল করে : ধূমপানের কারণে রক্ত নষ্ট হয়ে যায়। এর কারনে রক্তনালীগুলো দুর্বল হয় এবং অনেক সময় একজন ধুমপায়ীর রক্তের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ধূমপান উচ্চ রক্ত চাপের কারণ হয়।
৮. আদর্শহীন ব্যক্তিতে পরিণত: একজন ধূমপায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে ব্যার্থ হয়। ধূমপায়ীরা ছেলে-সন্তান এবং উত্তরসূরীদের জন্য একজন আদর্শহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়।
৯. রনশক্তি কমিয়ে দেয়: একজন ধূমপায়ী লক্ষে এগিয়ে যেতে পারে না কারণ এটি স্মরনশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মনোবল দুর্বল করে দেয়।
১০. ইন্দ্রিয় ক্ষমতা দুর্বল করে: ধূমপানের আরেকটি বড় সমস্যা হলো ইন্দ্রিয় ক্ষমতা দুর্বল করে; বিশেষ করে ঘ্রান নেয়া এবং স্বাদ গ্রহনের ক্ষমতা লোপ পায়।
১১. ক্যান্সার হয় : ধূমপানকারীর ফুসফুস, মুত্রথলি, ঠোঁট, মুখ, জিহবা ও কণ্ঠনালি, কিডনী ইত্যাদিতে ক্যান্সার হয়।
১২. দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়: অতিরিক্ত ধুমপানের কারনে দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়।
১৩. হার্টের সমস্যা বাড়ায় : হার্টের সাথে সম্পৃক্ত ধমনিগুলো ব্ল¬¬ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। এমনকি বক্ষ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৪. খারাপ লোক হতে সহায়তা : ধুমপান মানুষকে খারাপ মানুষের সাথে উঠা বসায় বাধ্য করে। ধীরে ধীরে সে খারাপ পথে চলে যায়। সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়।
১৫. পেটের সমস্যা বৃদ্ধি: ধূমপানের ফলে হজমশক্তি কমে যায়, ধারণক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর ঢিলে হয়ে যায়। ধূমপানের ফলে পাকস্থলী ক্ষত হ’তে থাকে এবং যকৃৎ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৬. মুত্রনালীতে বাধা : ধূমপানের ফলে মুত্রথলি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং প্রস্রাব বিষাক্ত হয়।
১৭. যৌনশক্তি বিলুপ্ত করে : ধুমপানের কারনে যকৃত শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধূমপানের ফলে যৌনশক্তি বিলুপ্ত হ’তে থাকে।
১৮. জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ: ধূমপান মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয় । কারণ সে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও সে তা পান করে। ধূমপায়ী সব সময় দুর্বলতা অনুভব করে এবং আতঙ্কগ্রস্ত থাকে।
- Dr. Afsana Begum