Nishat Tasnim -আকাশ নীল দেখায় সূর্যের আলোর সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিশেষ ধরনের কারণে। সূর্যের আলো সহ সব সাদা আলোই অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন রঙের আলোর সমন্বয়ে গঠিত। আর প্রতিটি আলোরই নিজস্ব সংশ্লিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে। এই আলো যখন কোনো বস্তুতে প্রতিফলিত হয় তখন বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস ঘটতে পারে। উদাহরণত, সূর্যের আলো যদি পানি বা অন্য কোনো একটি স্বচ্ছ বস্তুর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে তখন আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের প্রতিসরণ ঘটতে পারে। বা আলোর গতিপথ বাঁকিয়ে যেতে পারে। কারণ আলো যখন এক মাধ্যম (বাতাস) থেকে অন্য মাধ্যমে (পানি) ভ্রমণ করে তখন এর গতিও পরিবর্তিত হয়। প্রিজম আলোকে ভেঙ্গে এর গাঠনিক উপাদানগত রঙগুলো প্রতিফলিত করে। কারণ প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আলোর ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন কোনে প্রতিসরিত হয় এবং ওই রঙগুলোও ভিন্ন ভিন্ন গতিতে ভ্রমণ করে। অন্যদিকে, আয়না একটি একক দিকে আলোর প্রতিসরণ ঘটায়। এছাড়া অন্যান্য বস্তু আলোকে অনেকগুলো দিকে বিক্ষিপ্ত করে প্রতিসরিত করেত পারে। আর আকাশ নীল দেখায় আলোর একটি বিশেষ ধরনের বিক্ষিপ্ততার কারণে। এই বিক্ষিপ্ততা ঘটে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের চেয়ে এক দশমাংশ কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কণায় আলো প্রতিফলিত হলে। আর এই বিক্ষিপ্ততা উচ্চমাত্রায় আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। নিম্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। নিম্ন বায়ুমণ্ডলে ক্ষুদ্র অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন অণু নিম্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিক্ষিপ্ত করে- যেমন নীল এবং বেগুলি আলো। এমনকি প্রকৃতপক্ষে ৪০০ ন্যানোমিটার আলো (বেগুনি) ৭০০ ন্যানোমিটার আলোর (লাল) বিক্ষিপ্ততার চেয়ে ৯.৪ গুন বেশি। যদিও বায়ুমণ্ডলের কণাগুলো নীল রশ্মির চেয়ে বেগুনি রশ্মিই বেশি প্রতিফলিত করে তথাপি আকাশ নীল দেখায়। কারণ আমাদের চোখ নীল আলোর প্রতিই বেশি সংবেদনশীল। আর বেগুনি আলোর কিছুটা উচ্চ বায়ুমণ্ডল শুষে নেয়। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় সূর্যের আলোকে বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ অতিক্রম করে আপনার চোখে এসে পৌঁছাতে হয়। এমনকি বেগুনি এবং নীল আলোর যত বেশি বিক্ষিপ্ত হয় ততই লাল এবং হলুদ আলো চকমক করে ওঠে।