ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের নানা দেশে কুকুরের মাংস সেবনের রেকর্ড আছে। একবিংশ শতাব্দীতে চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, সুইজারল্যান্ড, কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশে কুকুরের মাংস সেবন করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কুকুরের মাংসে আছে ২৬২ ক্যালরি, ২০.২ গ্রাম ফ্যাট, ০.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৯ গ্রাম প্রোটিন। ভিটামিনের মধ্যে আছে ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩, ভিটামিন সি। এছাড়াও কুকুরের মাংসে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, পানি আছে।
নানা দেশে কুকুরের মাংসের উপকারিতা নিয়ে কুসংস্কার প্রচলিত আছে যা ভুল। এগুলো হলো:-
"কুকুরের মাংস রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে এবং মানুষ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে। কুকুরের মাংস অন্যান্য প্রাণীর মাংসের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর কারণ এতে কোন অ্যান্টিবায়োটিক নেই। গর্ভবতী নারীদের জন্য কুকুরের মাংস সেবন লাভদায়ক। কুকুরের মাংস দেহ গরম রাখে এবং অধিক পুরুষালী করে।" - এইসব বক্তব্যের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
কুকুরের মাংস সেবনে স্বাস্থ্যঝুঁকি :
কুকুর ধরে আনা, জবাই করা, কুকুরের মাংস সেবন ইত্যাদি ফলে র‍্যাবিস বা জালাতঙ্ক হওয়ার ঝুঁকি আছে। Trichinella parasite সংক্রমিত কুকুরের মাংস খেলে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে, যেমন: রক্তনালীতে প্রদাহ, মাংসপেশীতে দুর্বলতা, চোখ ও নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, এমনকি মৃত্যুও। গণহারে কুকুর জবাই, সেবনের ফলে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে কলেরা হতে পারে। এছাড়াও কুকুরের মাংসের সাথে নানা ধরনের রোগ ও ইনফেকশন জড়িত।
ই-কোলি ও সালমোনেলা নামক জীবাণু কুকুরের দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে, এর থেকে প্যারাসাইট ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়াও যেসব ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে : anthrax, brucellosis, hepatitis এবং leptospirosis। এছাড়াও কুকুরের ফার্মগুলোতে তাদের রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যাপকহারে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়, এই মাংস সেবন করলে আপনার দেহে কোন অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবেনা। অর্থাৎ, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স!
কুকুর সেবন করা মানবদেহের জন্য নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। মানবতা বিচার করলে, অবলা পশুকে হত্যা করে সেবন করার কোন অধিকার মানুষের নেই। ধর্মীয় দিক থেকে বিচার করলে, কুকুরের মাংস সেবন করা বহু সংস্কৃতিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- নিশাত তাসনিম (সাইন্স বী)
রেফারেন্সঃ- ১.
https://www.ar-cambodia.com/dog-meat-myths-and-health-risks/
২.
https://www.onegreenplanet.org/animalsandnature/major-human-health-concerns-associated-with-the-dog-meat-trade/