Li-Fi কী ?
বর্তমানে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৭০% ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে থাকে। জন্য ওয়াই-প্রযুক্তির থেকে, উন্নত প্রযুক্তি; লাই-ফাই (Li-fi) ভবিষ্যৎতে আসতে চলেছে ।
LiFi হচ্ছে, WI-FI এর মতোই একটি ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম, Li Fi (Light Fidelity) একটি দ্বিমুখী, উচ্চ গতির এবং ওয়াই ফাই অনুরূপ সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত বেতার যোগাযোগ প্রযুক্তি । যেটি কিনা ওয়াই-ফাই এর তুলনায়, ১০০গুন বেশি ফাস্টার হবে। Li-Fi হলো: Light Fidility ।
লাইফাই ( LiFi) হলো, একটি ওয়্যারলেস অপটিক্যাল নেটওয়াকিং প্রযুক্তি, যেটি LED লাইট এর সাহায্যে ডাটা ট্রান্সমিশণ করে থাকে।
অর্থাৎ লাই-ফাই অনেকটা ওয়াই-ফাই এর মতোই কাজ করে থাকে, ওয়াই-ফাই ডাটা ট্রান্সমিশন করে থাকে, রেডিও ওয়েভ এর সাহায্যে কিন্তু লাই-ফাই ডাটা ট্রান্সমিশন করে থাকে, লাইট এর গতিতে।
তো বুঝতেই পারছেন, যদি আলোর গতিতে ডাটা ট্রান্সমিশন হয় তবে , এর স্পিড কতো বেশি হবে। তাছাড়া আলোর ফ্রিকুয়েন্সি রেঞ্চ , রেডিও ওয়েব এর তুলনায় দশ হাজার গুন বেশি হয়ে থাকে।
আর যেহেতু, রেডিও ওয়েব ব্যবহার করা হয় না, তাই হাসপাতালে, বিমানে এটি ব্যবহার করলে, কোন সমস্যা হবে না । বর্তমানে , ওই প্রযুক্তিটি নিয়ে, পৃথিবীর অনেক গুলো বড়, বড় সংস্থা কাজ করছে ।
এই প্রযুক্তিটি কাজ করে, LED Light এর পাল্স (Puleses) অনুযায়ী , অর্থ্যাৎ. ওই লাইট এর পাল্স অনুযায়ী, ডাটা, আপনার ডিভাইস হতে,রিসিভার এর ডিভাইস পযর্ন্ত ,ট্রাভেল করবে যাকে বলা হয় আপ লিঙ্ক-ডাউন লিঙ্ক। আর ওই LED Ligth এর, পাল্স গুলো আপনি ,চোখে দেখতে পারবেন না। মানুষের পক্ষে ,খালি চোখে দেখা সম্ভব না।
লাই-ফাই এর ডাটা ট্রান্সমিশন স্পিড, 100 Gbps এর বেশি হয়ে থাকে। যা কিনা, WiGig এর থেকে, ১৪ গুন বেশি স্পিড. বলে রাখি, WiGig হলো. পৃথিবীর সব থেকে দ্রুত গতির ওয়াই-ফাই।
লাই-ফাই প্রযুক্তিটি, ডাটা ট্রান্সমিশণ এর ক্ষেত্রে, একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহন করেছে, যেটি লাইট পাল্স/বিম এর সহায্যে ডাটা ট্রান্সফার করে থাকে।
যেভাবে কাজ করে:
কোন (LED) লাইট এর থেকে, মডিউলেট আলো ফ্রিকোয়ন্সি গুলোতে, ডেটা ক্যাপচার করা হয়। এবং ডাটা গুলো ট্রান্সমিট ও রিসিভ করা হয়, LiFi- সাপোটের্ড ডিভাইসগুলির মাধ্যমে।
একটি আলোক সংবেদনশীল ডিটেক্টর (photosensitive detector) , আলোক ফ্রিকুয়েন্সি সংকেতকে ,ডি-মডিউলেট করে। এবং ইলেক্ট্রনিক ডাটা স্টিমে, রুপান্তর করে এর ফলে, এটি অনেক দ্রুতগতি সম্পন্ন, আরো সুরক্ষিত যোগাযোগ মাধ্যম ।
Wi-Fi Vs Li-Fi সুবিধা :
# ওয়াইফাই: ডাটা ট্রান্সিমিট করে থাকে, ওয়াই-ফাই রাউটার এর রেডিও ওভেব এর সাহায্যে।
** লাইফাই: ডাটা ট্রান্সমিট করে থাকে, LED bulbe এর, পাল্স/বিম অনুসারে।
# ওয়াই-ফাই এর , ব্যবহার করা হয়, শুধু মাত্র ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর জন্য।
** অন্যদিকে, লাই-ফাই. এর ব্যবহার করা হয়: হাই-স্পিড ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর পাশাপাশি, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে, সমুদ্রের তলে এক্সপ্লোরেশন, অফিস, বাসায় ব্যবহার করা হয়।
# ওয়াই-ফাই এ অনেক বেশি ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়, এটির সিগন্যাল জলে মধ্য দিয়ে যেতে পারে না, এটি কম কম ঘন অঞ্চলে কাজ করে।
* লাই-ফাই , এ কম ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়, এটি জলের নিচেও কাজ করবে, বেশি ঘনত্ব অঞ্চলেও এটি ভালো কাজ করবে।
# ওয়াই-ফাই এর ,কভারেজ ডিস্টেন্জ, ৩২ মিটার বার তার বেশি হয়ে থাকে, ওয়াই-ফাই রাউটার এর অ্যান্টেনার উপর ভিত্তি করে।
* অন্যদিকে, লাইফাই এদিক থেকে একটু পিছনে আছে, লাইফাই এর কভারেজ এরিয়া মাত্র ১০ মিটার।
# ওয়াই-ফাই , বেশি ঘনত্বের পরিবেশে ভালো ভাবে কাজ করতে পারে না। কারন, বিভিন্ন ইলেকট্রিক অবজেক্ট, রেডিও ওভেব কে বাধা প্রদান করে থাকে।
** অন্যদিকে, লাই-ফাই বেশি ঘনত্বের পরিবেশেও ভালো ভাবে কাজ করতে পারে, সহজেই।
# ওয়াই ফাই এর রেডিও সিগন্যালকে, অনেক ধরনের, ইলেকট্রিক অবজেক্ট, বাধা প্রদান করে থাকে, এই জন্য সিগন্যালের, ল্যাটেন্সি টাইম বেড়ে যায়।
** কিন্তু, লাইফায়ে এই ধরনের, কোন সমস্যা হয় না।
** সিকিউরিটি এর দিক থেকে, লাইফাই , ওয়াই ফাই এর তুলনায় , অনেক বেশি সিকিউর হয়ে থাকে।
লাই ফাই এর ইতিহাস:
ইডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের, মোবাইল যোগাযোগ বিভাগের , একজন প্রধান প্রফেসর হ্যারাল্ড হাশ কে, লাই-ফাই প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠাতা/ আবিষ্কারক বলা হয়ে থাকে।
২০১১ এর দিকে, তিনি, TED Global talk এর মঞ্চে , লাই-ফাই প্রযুক্তিটি সম্পর্কে সবাইকে পরিচিত করিয়ে দেয়।
এবং একটি কোম্পানির সাথে, ওই প্রযুক্তিটি ,ডেভলপ করতে কাজে লেগে যান। কোম্পানির নাম রাখা হয়: purelifi ।
বর্তমানে অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান লাইফাই নিকে কাজ করছে। PureLifi কোম্পানি, লাইফাই প্রযুক্তি সহ, লাইফাই ডিভাইজ নিয়ে গবেষণা করছে।
TED Talk অনুষ্ঠানে, তিনি এটিও বলেছিলেন, লাই-ফাই বা Light Fidility, প্রযুক্তিটি গাড়ির হেডলাইট ব্যবহার করে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন সিস্টেমে ও ব্যবহার করা যেতে পারে , তাছাড়া এটি, ক্যামিক্যাল ম্যানুফেকচারিং প্ল্যান্ট এ ও ব্যবহার করা সম্ভব, যেখানে , ওয়াই-ফাই এর রেডিও ওভেব ব্যবহার করা,সম্ভব নয়।
রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি, যেখানে পৌছাতে পারে না, সেখানে, লাইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করা সম্ভব।
>> ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, বিশ্বের প্রথম , লাইফাই প্রযুক্তিটি রিলিজ করা হয় ।
>> এরপর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, বিশ্বের প্রথম লাইফাই ডিভাইস ,রিলিজ করা হয়। যেটির সাহায্যে মোবাইলে ওয়্যারলেস ,লাইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
>> একবছর পর ২০১৬ সালে, PureLifi এবং Lucibel ,French Lighting Company , বিশ্বের প্রথম ইন্ড্রাসট্রিয়াল লাইফাই সলিউশন নিয়ে আসে।
এবং বিভিন্ন , প্রতিষ্ঠানে এটি ব্যবহার করা হয়, এমনটি, প্যারিস এর মাইক্রোসফট অফিসেও ব্যবহার করা হয়।
> ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে, LiFi-XC সিস্টেম রিলিজ করা হয়, এই টি, প্লাগ এবং প্লে সিস্টেম এর ন্যায় কাজে করে, এইটি USB Devices এর সাথে কাজ করে ।
Li-Fi কখন আসবে ?
>> যেহেতু, অনেক গুলো কোম্পানি, এই লাইফাই নিয়ে কাজ করছে, তাই একটি প্রথমিক ধারনা করা যায় ,২০২২ সালের প্রথম দিক, দিয়ে লাইফাই বাজারে আসতে পারে।
বিভিন্ন দেশের, কিছু অফিস,দোকানে এটির ব্যবহার হচ্ছে।অ্যাপেল এর মতো কিছু বড় বড় মোবাইল কোম্পানি, তাদের ভবিষ্যৎ ,মোবাইল গুলোকে, LiFi সক্ষম ,করে তৈরি করার কাজ করতেছে।
তাছাড়াও pureLiFi কোম্পানি, অনান্য কোম্পানির সাথে, এক যোগে কাজ করতেছে।
লাই-ফাই research এবং development করতে, অনেক অর্থ ব্যয় করছে। তো বলাই যেতে পারে, যে লাই-ফাই অতিশিঘ্রই আসছে।
লাই-ফাই এর ভবিষ্যৎ :
বর্তমানে, লাই-ফাই, পুরোপুরি ওয়াই-ফাই এর জায়গা নিতে পারবে না।
কিন্তু ,যেহেতু অনেক গুলো কোম্পানি, লাই-ফাই নিয়ে কাজ করছে, এবং এটি তাদের প্রাইমারি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি হিসাবে বিবেচনা করছে।
তাই বলা, যেতে পারে আরো কিছু বছর পর, লাইফাই সম্পূর্ন রুপে. ওয়াই-ফাইকে রিপ্লেস করতে সক্ষম হবে ।