আমলকী কে অমৃত ফল বলা হয় কেন?
আগে আমাদের জানা উচিত অমৃত আসলে কি?
আমরা অমৃত কথা, অমৃত বাণী, অমৃত বচন, অমৃত সুধা ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে থাকি। অমৃত আসলে কি বা এর স্বাদই কেমন এর উত্তর কেউ দিতে না পারলেও খাবারের স্বাদের সঙ্গে অমৃত বিশেষণটি অনেক সময় অজান্তেই লেগে যায়। অমৃতের মতো বা অমৃত লাগছে এমন শব্দে ভোজন রসিকরা অনেক সময় কোনো খাবার বা রান্নার প্রশংসা করে থাকেন।
ভাষাগত ভাবে অমৃত শব্দের অর্থঃ যাহা পান করিলে মৃর্তু্য হয় না, সুধা, পীযূষ, জীবন-বারি, অতিশয় সুস্বাদু খাদ্য ইত্যাদি। অমৃত একটি কাল্পনিক মহামূল্যবান পানীয়। এটি অত্যন্ত পবিত্র, সুস্বাদু এবং বহুগুণধারী তরল পানীয় যা সমুদ্র মন্থন (ঘোঁটা, দলন) থেকে উৎপন্ন হয়েছিল। হিন্দু ধর্মবিশ্বাস মতে, অমৃত সুধা পান করলে অমর হওয়া যায় এবং এটি পান করেই দেবতারা অমর হয়েছেন।
তারমানে, কিছুটা বুঝতে পারছেন যে, অমৃত হলো এমন কোন পানীয় যা পান করলে বহুব্যধি নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই ক্ষেত্রে যদিও আমরা কেউ অমৃতের সন্ধান না জানলেও এর কাছাকাছি কিছু একটা পেলেই তাকে আমরা অমৃত বলে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই।
এবার আমরা জানবো আমলকির রসের উপকারিতা
আমলকির অনেক গুণ:
শরীর এবং ত্বক দূষণমুক্ত করে।
রক্ত পরিশ্রুত করে
এছাড়া আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন থাকায় ত্বক-চুল পুষ্ট হয়। সৌন্দর্যে ঝলমলিয়ে ওঠে।
আরও অনেক গুণের নিধি আমলকি! সেগুলো কী কী? জানতে গেলে চোখ রাখুন বিস্তারিত বিবরণে:
১. রোজ একটা করে দিন যাচ্ছে আর তাপমাত্রা হুড়মুড়িয়ে নামছে। বাচ্চা থেকে বড় সব্বাই কাবু জ্বর-সর্দি-কাশিতে। ঘরে কত ওষুধ মজুত রাখবেন? আবার ওষুধের তো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে! তাই ডায়েটিসিয়ানদের মতে, ঠান্ডার রোগ যাদের আছে তাঁরা রোজ এক চামচ আমলকির রসে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই মিলবে।
২. অনেকের ভিটামিনের অভাব বা হজমের সমস্যা থেকে মুখে ঘা হয়। সে ভয়ানক কষ্টের। একমাত্র মিষ্টি আর থাবড়া খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেলেই মুখের ভিতর জ্বালা করে। নিয়ম করে আমলকির রস খেলে মুখের আলসার বা ঘা কমবে।
৩. আমলকি মানেই প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড আর anti-oxidant! এই উপাদান দু’টি হৃদপিন্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। হৃদ-পেশি মজবুত করে।
৪. আমলকির রসের টক স্বাদ শরীরে জমে থাকা বাড়তি শর্করা নষ্ট করে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারনিয়ন্ত্রণে রাখতে আমলকির সত্যি বিকল্প নেই।
৫. শুধু কি তাই? আমলকির রস রোজ খেলে সর্দি-কাশি কমে যায় বলে হাঁপানির রোগীরাও শীতে তুলনায় সুস্থ থাকেন। তাই ইনহেলারের বদলে আজ থেকে আপন করে নিন আমলকিকে।
৬. আয়ুর্বেদ আরও বলছে, আমলকির রস হজম ক্ষমতা বাড়ায়। বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। আগের দিনে মা-মাসিরা তাই খাওয়ার পর আমলকির টুকরো চিবোতেন। আমলিকর মধ্যে থাকা এনজাইম গ্যাস-অম্বল কমায়। এতে খাবার সহজে হজম হয়। সরাসরি আমলকির রস খেতে না পারলে রোজ নুন মাখানো আমলকির টুকরো দুপুরে খাওয়ার পর খেয়ে নিন। একই ফল পাবেন। না হলে আমলকির হজমি তো আছেই। তবে এর টক ভাবের জন্য রাতে আমলকি না খাওয়াই ভালো।
৭. শুরুতেই বলা হয়েছে, আমলকির রসে প্রচুর anti-oxidant উপাদান আছে। এই উপাদান শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে গেলে শরীর সুস্থ থাকে। তার জন্য ত্বক-চুল-এ আসে বাড়তি জেল্লা। একই সঙ্গে লিভার ভালো রাখে| তাহলে আজ থেকে আমলকির রস খাচ্ছেন তো?
৮. চোখ ভালো রাখতে আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা ফসফরাস চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ছোট থেকে রোজ আমলকির রস খেলে বাচ্চদের চট করে নাকের ডগায় চশমা উঠবে না।
এছাড়াও, নিয়মিত আমলকির রস খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই রোজ খালি পেটে ছোট এক কাপ আমলকির রসে অল্প নুন মিশিয়ে খেয়ে নিন। নিজেই তফাত বুঝতে পারবেন।
এবার জেনে নিন আমলকিতে কী কী ভিটামিন থাকে:
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ছাড়াও এতে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। ভিটামিন সি ত্বক-চুলে পুষ্টি জোগায়। ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে। আয়রন রক্তাল্পতা কমিয়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। অর্থাৎ, এটি পরিপূর্ণ পুষ্টিকর পানীয়!
সূত্র: কোরা