না।
ব্যাখ্যাঃ
মহাবিশ্ব কিভাবে শূন্য থেকে আসতে পারে তা স্টিফেন হকিং একটা খুব সুন্দর উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
মনে করুন আপনি একটি সমতল জমিতে একটি মাটির ঢিপি বানাতে চান। কি করবেন? আপনাকে ওই জমি থেকে মাটি খুঁড়ে তা স্তুপ করতে হবে।
এখন মাটি খুঁড়ে আপনি একটা স্তুপ বানালেন। এর সাথে সাথে যে জায়গায় স্তুপ করেছেন তার সাথে একটা গর্তও তৈরি হয়ে গেল। সুতরাং আপনাকে ঢিপি বানাতে গিয়ে একটা গর্তও বানানো লাগছে।
এখানে,
গর্ত হচ্ছে -1
ঢিপি হচ্ছে +1
উভয়ে মিলে হচ্ছে 0
একই ভাবে মহাবিশ্বের শুরুতেও পজিটিভ ও নেগেটিভ এনার্জি উৎপাদিত হয়েছে। আমরা আসে পাশে যা দেখি (আপনি, পৃথিবী, গ্রহ, তারা) সবই পজিটিভ এনার্জি। আর "স্পেস" হচ্ছে নেগেটিভ এনার্জি।
উভয়ে মিলে শূন্য।
আমাদের বাস্তব জীবনে শূন্য থেকে কোন কিছুই হঠাৎ করে এসে যায় না। আপনি ইচ্ছা করলেই তুড়ি মেরে এক কাপ কফি শূন্য থেকে এনে ফেলতে পারেন না। তাই হয়ত আমাদের জন্য এটা উপলব্ধি করতে একটু কষ্ট হবে।
কিন্তু কোয়ান্টাম স্কেল এ এটা অহরহই ঘটছে। প্রোটন শূন্য থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে এবং কিছুক্ষন থাকছে তারপর মিলিয়ে যাচ্ছে। এখানে কোন বহিঃশক্তির দরকার পড়ছে না।
আমরা জানি যে মহাবিশ্ব অনেক ক্ষুদ্র একটা জায়গা থেকে শুরু হয়েছে। যেটার মানে এই যে ইউনিভার্সও সেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ল মেনে চলেছে। ধীরে ধীরে বিশাল মহাবিশ্বের অস্তিত্ব এসেছে যেটাকে ব্যালেন্স করতে একই সাথে নেগেটিভ এনার্জি স্পেস কে ধারণ করতে হচ্ছে। এবার হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে যে এই ল কে শুরু করল? বা এই ল তৈরি করায় অন্য কিছুর হাত থাকতে পারে কিনা?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব কিছু হতে দেখি তার সবই হচ্ছে এর আগে কিছু ঘটে যাওয়ার ফলাফল মাত্র। কিন্তু যখন আমরা পুরো ইউনিভার্স এর কথা বলছি তখন এখানে এটা খাটে না। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
ধরুন, একটি পাহাড়ের পাশ দিয়ে একটা ঝর্ণা আছে। এটা কেমন করে আসল?? হয়ত কিছুক্ষন আগে পাহাড়ের উপর পড়া বৃষ্টির কারণে। কিন্তু বৃষ্টি কিভাবে হল? এর ভাল উত্তর হতে পারে সূর্যের জন্য। যেটি সমুদ্রের পানিকে বাষ্পীভূত করে মেঘে রূপ দিয়েছে। আর তাতেই বৃষ্টি হয়। এবার সূর্যের আলো ও তাপের কারণ কি?? আমরা সূর্যের ভিতরে দেখতে পাই এটার কারণ হচ্ছে হাইড্রোজেন এর ফিউশন। যার কারণে আলো ও তাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এবার প্রশ্ন আসতে পারে হাইড্রোজেন কোথা থেকে আসল? এই হাইড্রোজেন এসেছে বিগ ব্যাং এর ফলে। এখানেই হচ্ছে ইম্পরট্যান্ট ব্যাপারটা। ল অব নেচার আমাদের বলে ইউনিভার্স শুধু যে প্রোটন এর মত শূন্য থেকে কোন প্রকার সাহায্য ছাড়াই আসতে পারে তা নয় এতে কোন আলাদা এনার্জিরও দরকার নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক যে বিগ ব্যাং এর কারণ কিছুই ছিল না। একেবারেই কিছু না। এবং এটা কোন ফিজিক্স এর ল কেও ভায়োলেট করছে না।
এই ব্যাখ্যাটা আইনস্টাইন এর থিওরির সাথেও সম্পর্কযুক্ত। তিনিই দেখিয়েছিলেন কিভাবে স্পেস ও টাইম এক সাথে বিজড়িত। বিগ ব্যাং এ চমৎকার একটা জিনিসের শুরু হয়েছিল, সেটা হচ্ছে "Time" বা "কাল" বা "সময়"।
এই বিষয়টি আরেকটি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়। একটা সাধারণ কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে এমন একটি তারা যেটি নিজের গ্রাভিটির কারণে নিজের মধ্যেই কলাপ্স করেছে। এটির গ্রাভিটি এতই শক্তিশালী যে এটি থেকে আলোও বাইরে যেতে পারে না। এবং এটি শুধু স্পেস নয়, সময়কেও বাকিয়ে দিতে সক্ষম। যার দরুন এটি সম্পূর্ণরূপে কালো অথবা কৃষ্ণ। এবার মনে করুন একটা চলন্ত ঘড়ি একটি কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে পড়ছে। এটি যতই এর কাছে যাচ্ছে ততই ধীরগতির হচ্ছে। সময় নিজেই ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। তারপর ঘড়িটি কৃষ্ণগহ্বরের প্রবেশ করল (ধরে নিন, ঘড়িটি শক্তিশালী মহাকর্ষ সহ্য করতে সক্ষম)। এবার কি হবে বলতে পারবেন?? ঘড়ির কাঁটাটি স্থির হয়ে যাবে। এর মানে কিন্তু ঘড়িটি যে নষ্ট হয়ে গেছে তা নয়। এর কারণ হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে সময় বলতেই কিছু নেই।
ঠিক এই ব্যাপারটাই মহাবিশ্বের শুরুতে ঘটেছিল। তাই যেখানে সময় বলতে কিছুই ছিল না যেখানে আপনি বিগ ব্যাং এর আগের সময় কেমন করে পাবেন? এটাই ছিল মূল কারণ। এর আগে কোন কার্যকারণ ছিল না। কারণ কার্যকারণ, সময় এগুলোর অস্তিত্বই ছিল না। সুতরাং এই প্রশ্নটিরই কোন অর্থ নেই।