সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে এবং অনেক নতুন নতুন কারণ সামনে আসছে।আমি তেমনই একটি গবেষণা সম্পর্কে বলতে চাই।
২০১১ সালের ৮ আগষ্ট “cell metabolism” নামে একটি অনলাইন সাময়িকী তে এটি প্রকাশিত হয়েছে।এই গবেষণাটি করেছে “Columbia University Medical center” এর বিজ্ঞানীরা।
প্রথমেই জানতে হবে, আসলে ৪০ বছর পর আমাদের শরীরে কি কি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় যা শারীরিক দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কাজ করেঃ
- দুগ্ধ-শর্করা সহজে হজম করতে না পারাঃআমরা জানি, দুধে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আমাদের হাড়,পেশি ইত্যাদিকে শক্তিশালী করে।কিন্তু, ৪০ বছর পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুগ্ধ-শর্করা হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে।কারণ,৪০ বছর পর দুগ্ধ-শর্করা হজমকারী ল্যাক্টেজ এনজাইমের পরিমাণ হ্রাস পায়।
- বিপাক ক্রিয়া কমে যাওয়াঃএসময় আমাদের দেহের বিপাক ক্রিয়ার পরিমাণ যথেষ্টভাবে হ্রাস পেতে থাকে।ফলে, এসময় আমাদের পেশির শক্তিও কমে যেতে থাকে।
- দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়াঃএটি প্রায় সব চল্লিশউর্ধ্বো মানুষের বেলায় ঘটে থাকে।এসময় তাদের দৃষ্টিশক্তি আর শ্রবণশক্তি বয়স বাড়ার সাথে সাথে হ্রাস পায়।
- sleep-cycle এ পরিবর্তনঃ ৪০ বছরের পর আমাদের মস্তিষ্কের মেলাটনিন হরমোনের(এ হরমোনটি আমাদের ঘুমের উদ্রেক ঘটায়)ব্যাপক হারে হ্রাস পেতে থাকে ফলে sleep-cycle এ ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়।
- হাড় দূর্বল হয়ে পড়াঃএ বয়স থেকেই আমাদের দেহের হাড় দূর্বল হতে থাকে।ফলে, অস্টিওপোরেসিস সহ অন্যান্য রোগ দেখা দেয়।
তাহলে এবার শারীরিক দূর্বলতার কারণ জানা যাক
আমাদের হাড়ের পেশিগুলোর দূর্বলতা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়াটিকে সারকোপেনিয়া(Sarcopenia) বলে।এটি ৪০ বছর বয়সের পর থেকে শুরু হয়ে ৭৫ বছরের পরেও চলতে থাকে।
★সারকোপেনিয়া
আমাদের দেহে Ca2+ আয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।স্নায়ুজ উদ্দীপনা পরিবহনে Ca2+ আয়ন কাজ করে।অর্থাৎ,আমাদের দেহের পেশিগুলোর সংকোচন ও প্রসারণে এ আয়ন অপরিহার্য। এই Ca2+ আয়নের উৎস হলো কোষের এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম/সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম।
★এন্ডেপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা সারকোপ্লাজমিক রেটি.
আবার, আমাদের দেহের পেশিকোষের এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম/সারকোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর মেমব্রনে Ryanodine Receptor Channel Complex(রায়ানোডাইন রিসেপটর চ্যানেল কমপ্লেক্স,RYRS) নামক প্রোটিন গ্রুপ থাকে যাকে ৪০ বছর বয়সের পর আমাদের দেহের শারীরিক দূর্বলতা বৃদ্ধির মূল কান্ডারি বলে মনে করা হচ্ছে।কারণ,এটি Ca2+ আয়ন বর্জন করে বা হ্রাস করে।
★RYRS
এই Rynodine Receptor Channel(RYRS), হার্ট ফেলিউর ও মাসক্যুলার ডিসট্রফি(একধরনের জেনেটিক রোগ) এর সাথেও সম্পৃক্ত।তো, গবেষকরা মনে করছেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক দূর্বলতা বৃদ্ধির সাথেও এর সম্পর্কও রয়েছে।
আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ও জেনেটিক কোনো সমস্যার কারণে দেহে অক্সিজেন ফ্রি-রেডিকেল এর পরিমাণ বাড়তে থাকে।এই ফ্রি-রেডিকেলটি আমাদের দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর।এটি RYRS কে Ca2+ ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে।ফলে, Ca2+ কোষে ক্ষরিত হয় এবং কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াকে(এটি পেশির শক্তি উৎপাদনে কাজ করে;কোষের পাওয়ার হাউসও বলা হয়)বিষাক্ত করে তোলে।ফলে, আরও অক্সিজেন ফ্রি-রেডিকেল তৈরি হয় এবং আরও Ca2+ আয়নের লিকেজ ঘটে।
এভাবে, Ca2+ আয়নের পরিমাণ কমতে থাকে।ফলে, আমাদের পেশিতে আগে যে পরিমাণ Ca2+ আয়ন থাকত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে তার পরিমাণ কমতে থাকে।যেহেতু,এই Ca2+ পেশির সংকোচন-প্রসারণের সাথে সম্পৃক্ত,তাই পেশির সংকোচন-প্রসারণের হারও কমতে থাকে।
ফলে, আমরা শারীরিকভাবে দূর্বল হতে থাকি।
collected