ব্যাঙ হলাে এক উভয়চর প্রাণী। সাধারণত পুকুর, ডােবা, নর্দমা ও নদীর তীরে ভিজে ভিজে ঘাসের মধ্যে এদেরকে দেখা যায়। বর্ষাকালে এসব জায়গা থেকে ব্যাঙের ডাক শােনা যায়। কারণ বর্ষাকালটা তাদের পক্ষে বিশেষ উপযােগী। কিন্তু অক্টোবর মাসে শেষে দিকটা যতােই এগিয়ে আসে এরা ততোই অদৃশ্য হওয়া আরম্ভ করে। আর ফেব্রুয়ারীর শেষ অব্ধি এদেরকে দেখতে পাওয়া যায় না।
ব্যাঙ ঠান্ডা রক্তের প্রাণীর অন্তর্ভূক্ত। ঠান্ডা রক্তের অন্যান্য প্রাণীর মতাে এরও শরীরে তাপমাত্রা স্থির থাকে না। পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের শরীরের তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয়। শীতের শুরুতে যখন তাপমাত্রা কমতে আরম্ভ করে তখন এদের শরীরের তাপমাত্রাও নিচের দিকে নামতে থাকে। তার ফলে এর শরীরবৃত্তিয় ক্রিয়াকলাপের গতি মন্দিত হয়। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে তখন সে পুকুরের তলদেশে নতুন মাটিতে প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার গভীরে চলে যায়। এ রকম অসাড়, অবশ অবস্থায় পুরো শীতকালটাই এরা বিশ্রমে কাটায়। এ সময়টাকে এদের "শীতকালীন ঘুম" বা "হাইবারমেশন পিরিয়ড" বলে। এ সময় এদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্রিয়াকলাপ ধীর গতিতে চলে। চোখ, মুখ ও কান বন্ধ থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় নাক অংশগ্রহণ করে না। গায়ের ভিজে চামড়ার মধ্য দিয়ে তখন এদের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চলে। এ সময় বেঁচে থাকার জন্যে এনে শরীরে সঞ্চিত চর্বি ও গ্লাইকোজেন এরা কাজে লাগায়। এ সময়টাতে এরা ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে মারা যায় না।
ফেব্রুয়ারী মাসে আবহাওয়া মণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তাতে এদের শারীরিক প্ৰক্রিয়ায় অনুকুল্য এনে দেয়। শীতের ঘুম ভেঙে তখন এরা মাটির বাইরে বেরিয়ে আসে।
মাস পরে, মে মাসে আবহাওয়া মন্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে আরম্ভ করে এবং জলাশয় শুকিয়ে যায়। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে আবার সেই ভিজে মাটির নিচে যাওয়া ছাড়া আর কোনাে উপায় থাকে না। এই অবস্থাকে "গ্রীষ্মকালীন ঘুম" বা "অ্যাসটিভেশন পিরিয়ড" বলে। জুলাই মাসে বর্ষা আরম্ভ হলে ওরা আবার বাইরে বেরিয়ে আসে।
ক্রেডিট: খায়রুল আলম মনির