ডানহাত এবং বামহাত উভয়কে সমানভাবে ব্যবহার করার দক্ষতাকে অ্যাম্বিডেক্সটারিটি বলে। যাদের এই দুহাত সমানভাবে ব্যবহারের ক্ষমতা আছে তাদেরকে বলা হয় ambidextrous বা ambidextral। কেবলমাত্র ১% মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই অ্যাম্বিডেক্সট্রাস। অর্থাৎ, প্রতি একশত জনের ভিতর মাত্র একজন অ্যাম্বিডেক্সট্রাস দেখা যায়।
দুই হাত দিয়ে লিখতে পারা এই মানুষদের মস্তিষ্কে রয়েছে পার্থক্য। সাধারণত ৯৫% ডানহাতি এবং প্রায় ২০% বামহাতি মানুষের মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ার অপ্রতিসম থাকে। কিন্তু সব অ্যাম্বিডেক্সট্রাস মানুষদের মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ার প্রতিসম এবং তাদের হেমিস্ফিয়ার এর ভিতরের আন্তঃসংযোগ অনেক বেশি থাকে। এই আন্তঃসংযোগ এর জন্য তাদের মেজাজ অনেক সময় খিটখিটে হয় এবং তারা অনেকটা আনাড়ি প্রকৃতির হন। ডানহাতি মানুষদের তুলনায় বামহাতি এবং অ্যাম্বিডেক্সট্রাস মানুষদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া ও অন্যান্য মানসিক রোগ এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
বামহাতি এবং অ্যাম্বিডেক্সট্রাস মানুষদের মধ্যে ক্রোমোজোম-২ এ LRRTM1 জিন থাকে, যা সাধারণত ডানহাতি মানুষদের থাকেনা। তবে এই জিনটি দ্বীহাতি হওয়ার পিছনে ভূমিকা রাখে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। বেশিরভাগ অ্যাম্বিডেক্সট্রাস মানুষরা সাধারণত আইকিউ টেস্টে কম স্কোর করেন। তাদের গণিতিক দক্ষতা এবং স্মৃতিশক্তি কম থাকে। অ্যাম্বিডেক্সট্রাস মানুষদের সাধারণত খেলাধুলা, সংগীত, শিল্পকলা এবং অন্যান্য ক্রিয়েটিভ কাজে বেশি আগ্রহ থাকে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হচ্ছেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, নিকোলা টেসলা। নিকোলা টেসলা প্রথমে বামহাতি ছিলেন, তারপর তিনি অনুশীলন এর মাধ্যমে অ্যাম্বিডেক্সট্রাস হয়েছেন।
অ্যাম্বিডেক্সট্রাস হওয়ার জন্য প্রথমে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো অন্য হাত দিয়ে করার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ডানহাতি হন তবে বামহাত দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে, আবার আপনি যদি বামহাতি হন তবে ডানহাত দিয়ে কাজ করতে চেষ্টা করতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে অন্য হাত দিয়ে লিখার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের হাত ঘুরিয়ে লিখা শেখার বইগুলো ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। সাধারণত ২-৩ মাসের ভিতর এভাবে দুই হাত দিয়ে লিখা শিখে ফেলা যায়। তবে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে জোর করে অ্যাম্বিডেক্সট্রাস হওয়ার চেষ্টা করলে স্নায়বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
লিখেছেন: নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)