বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, হরর সিনেমার কল্যাণে "জম্বি মানব" পরিচিত সবার কাছে।
বাস্তবে মানুষ জম্বি নেই তবে কিছু প্রাণীর মাঝে জম্বি দেখা যায়। জম্বি মানব না থাকলেও জম্বি ফাঙ্গাস এর অস্তিত্ব আছে। Ophiocordyceps unilateralis নামক একটি ছত্রাক আছে যা 'জম্বি অ্যান্ট ফাঙ্গাস' নামেও পরিচিত। এদেরকে সাধারণত থাইল্যান্ড, ব্রাজিলের রেইনফরেস্টসহ আরো নানা স্থানে পাওয়া যায়। এই জম্বি ফাঙ্গাস পিঁপড়াদের আক্রমণ করে তাদের পুরো কলোনিকে জম্বি বানিয়ে দিতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলে Behavioral Manipulation। তবে ভয় নেই, এরা মানুষকে আক্রমণ করে না।
জম্বি ফাঙ্গাস বংশবিস্তার করে স্পোর এর মাধ্যমে। এরা নিজেদের স্পোর নানা স্থানে ছড়িয়ে রাখে এবং পিঁপড়া সেই স্পোরের সংস্পর্শের আসার পর স্পোরটি ধীরে ধীরে দেহের অভ্যন্তরীণ কোষ ও পেশী দখলে নিয়ে নেয়। তারপর এরা পিঁপড়ার দেহে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা হিমোসিল (পিঁপড়ার রক্ত সংবহনতন্ত্র) এর মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ফাঙ্গাস পিঁপড়ার পেশিতন্তু এবং সমস্ত দেহকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এরপর ফাঙ্গাস পিঁপড়াকে কিছু কামড়ে ধরতে বাধ্য করে এবং কামড়ে ধরার সাথে সাথে এরা পিঁপড়ার সব পেশী অকেজো করে দেয়। একে বলে Death Grip।
ডেথ গ্রিপের পর পিঁপড়া মারা যায় এবং ফাঙ্গাসটি বেঁচে থাকার জন্য পিঁপড়াকে ব্যবহার করে সেখানেই বেড়ে উঠতে থাকে। যার ফলে পিঁপড়ার দেহে ফাঙ্গাস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা। প্রায় ৪ থেকে ১০ দিন পর পিঁপড়ার মাথা ভেদ করে ফাঙ্গাসের ফ্রুট বডি বেরিয়ে আসে। তারপর এই পিঁপড়া স্পোর ছড়াতে থাকে এবং অন্যান্য পিঁপড়ারাও আক্রান্ত হয়। এরা সাধারণত carpenter পিঁপড়াদের আক্রমণ করে। একেক প্রজাতির পিঁপড়ার জন্য জম্বি ফাঙ্গাস একেক ধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ করে যা থেকে বুঝা যায় যে এরা আলাদা আলাদা প্রজাতির পিঁপড়াকে চিনতে পারে।
জম্বি ফাঙ্গাস এর বিরুদ্ধে কাজ করে "এন্টি জম্বি ফাঙ্গাস" যা জম্বি পিঁপড়াকে আক্রমণ করলে তার দেহে জম্বি ফাঙ্গাস এর ক্রিয়া কমে আসে। তবে জম্বি ফাঙ্গাস মানুষকে আক্রমণ করতে পারেনা, কারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মেটেবলিজম অনেক উন্নত।
লিখেছেন: নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)