পশু-প্রাণী মূলত একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, সতর্কবার্তা, হুমকি, আধিপত্য বিস্তার, সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য আওয়াজ সৃষ্টি করে। পশু-প্রাণীরা দুই ধরনের শব্দ করে মূলত, ভোকাল এবং মেকানিকাল। অর্থাৎ, স্বরযুক্ত আওয়াজ এবং যান্ত্রিক আওয়াজ। মেরুদন্ডী প্রাণীরা ভোকাল এবং মেকানিকাল উভয় ধরনের আওয়াজ সৃষ্টি করতে পারে। মেরুদন্ডী প্রানীরা মূলত শ্বাসযন্ত্রের সাহাযে আওয়াজ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, অমেরুদন্ডী প্রাণীরা শুধুমাত্র যান্ত্রিক আওয়াজ সৃষ্টি করতে পারে। যান্ত্রিক আওয়াজ সৃষ্টি হয় মূলত শরীরের অঙ্গ একসাথে ঘর্ষণের ফলে অথবা কোন বস্তুর সংস্পর্শে।
মানুষের মতো বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ভোকাল কর্ড থাকে। শব্দ সৃষ্টি হয় যখন বাতাস ভোকাল কর্ডের মাঝে দিয়ে কম্পন সৃষ্টি করে। কিছু তিমি মাছ মানুষের মতো শব্দ তৈরি করতে পারে কারণ তাদের ভোকাল ফোল্ড মানুষের মতো। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা টিক টিক শব্দ বা শিস দিয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। খরগোশ এবং শশক ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ সৃষ্টি করে নিজেদের অস্বস্তি বুঝানোর জন্য৷ আবার কিছু কিছু প্রানী যেমন কুকুর ভিন্ন ভিন্ন শব্দ তৈরি করতে পারে। যেমন : ঘেউ ঘেউ, গোঁ গোঁ, গর্জন, কান্নার শব্দ ইত্যাদি।
অমেরুদন্ডী প্রাণীরা স্বরযুক্ত আওয়াজ সৃষ্টি করতে না পারায় তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে শব্দ সৃষ্টি অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে। যেমন : ঘাসফড়িং এবং ঝিঝি পোকা তাদের পা ঘষে শব্দ সৃষ্টি করে। সিকাডা তার পেটের মেমব্রেন ব্যবহার করে। মেমব্রেন সংকুচিত হলে তা ক্লিক ক্লিক শব্দ সৃষ্টি করে। যখন মেমব্রেন রিল্যাক্স হয় তখন সেটি আবার মৃদু ক্লিক শব্দ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ব্যাঙ প্রবল কর্কক শব্দ সৃষ্টি করে। ব্যাঙ জোরপূর্বক তার স্বরযন্ত্রের ভিতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করে, ব্যাঙের চিবুকের নিচে থাকা বায়ুথলীর স্পিকার এর মতো কাজ করে যা তীব্র শব্দ সৃষ্টি করে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙকে আকৃষ্ট করার জন্য স্বরযুক্ত আওয়াজ সৃষ্টি করে।
অতএব, উপরের আলোচনার সারমর্ম থেকে ব্যাখ্যা করা যায় যে বিভিন্ন প্রাণী ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করায় তাদের সৃষ্টি আওয়াজও ভিন্ন হয়। যাদের ভোকাল কর্ড প্রায় মানুষের মতো তাদের সৃষ্টি আওয়াজও অনেকটা মানুষের মতো।
© নিশাত তাসনিম
রেফারেন্স : https://northamericannature.com/why-do-animals-make-sound/