বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে নানা ধরণের ছোটো ছোটো মহাকাশীয় বস্তু ভেসে বেড়ায়। এই বস্তুগুলো যখন কোন গ্রহ-নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আসে, তখন এদের আকর্ষণে বস্তুগুলো এদের দিকে চলে আসে। এই ঘটনা মহাকাশের সকল গ্রহ-নক্ষত্র এমন কি চাঁদের মতো উপগ্রহেও ঘটে থাকে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা অধিকাংশ উল্কাপিণ্ডের উৎস ধূমকেতু। পৃথিবী তার কক্ষপথে চলার সময়, বিভিন্ন ধূমকেতুর কক্ষপথের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তখন ওই সকল ধূমকেতুর ছোটো ছোটো অংশ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা এই বস্তুগুলো যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুমণ্ডলের সাথে এদের সংঘর্ষে এরা উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং একসময় তাতে আগুন ধরে যায়। রাতের আকাশে এই জ্বলন্তু বস্তুগুলোকেই উল্কা নামে অভিহিত করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিমি থেকে ১১৫ কিমি এর মধ্যে যে সকল উল্কা জ্বলতে জ্বলতে নিচে নেমে আসে, সেই উল্কাগুলোই ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখা যায়।
বেশীরভাগ উল্কাই আকাশেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু কিন্তু উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। প্রতি বছরই পৃথিবীতে উল্কাপাত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। ভূপৃষ্ঠ যে সকল উল্কাপণ্ডের অবশেষ পাওয়া যায়, তাদের বেশিরভাগের রঙ থাকে কালো। প্রচণ্ড উত্তাপে এদের বহির্ভাগ পুড়ে যাওয়ার কারণে এগুলোর রঙ কালো হয়।
উল্কাপাতের ঘটনা যে কোনো সময়ই হতে পারে। সারাবছর ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত দুই একটি উল্কা দেখা যায়। তবে উল্কাপাতের কিছু সুনির্দিষ্ট সময় আছে। এই সময় ঝাঁক বেধে উল্কাপতন ঘটে। এই উল্কাপাত যে নক্ষত্রমণ্ডল বরাবর হয়, তার নামেই উল্কাপাতের নামকরণ করা হয়। নিচে নিয়মিত উল্কাপাতের নাম ও সময়ের তালিকা দেওয়া হলো।
কোয়াড্রানটিডস্ (Quadrantids)। জানুয়ারি মাসে ৩-৪ তারিখে বুটিস (Bootes) নক্ষত্র মণ্ডলে এই উল্কা বৃষ্টি দেখা যায়। প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৪০টির বেশি বড় এবং উজ্জল ধূমকেতু দেখা যায়। এই উল্কা পিণ্ডগুলো সেকেন্ডে ২৫.৫ মাইল বেগে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এর মধ্যে কিছু উল্কা এতটাই উজ্জ্বল থাকে যে এগুলো নিভে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত আলোর রেখা আকাশে দেখা যায়।
vikaspedia