চন্দ্রগ্রহণ:
পৃথিবীর নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর একপাশে পড়ে তখন পৃথিবীর অন্যপাশে ছায়া পড়ে।
এই ছায়াকে বলে প্রচ্ছায়া (Umbra)। যখন প্রচ্ছায়ার মধ্য দিয়ে চাঁদ চলাচল করে তখন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করে। পৃথিবী থাকে এ তিনটির মধ্যস্থানে, সূর্যের আলো চাঁদে পড়ে না ও চাঁদের পৃষ্ঠ অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। কারণ, পৃথিবী থেকে দেখতে সূর্যকে চাকতির মতো লাগে।
প্রচ্ছায়া একটি ছায়া অঞ্চল দিয়ে ঘেরা যার নাম Penumbra। এ ব্যাপারটাও সেসময় চাঁদের অনুজ্জ্বলতার জন্য দায়ী। চাঁদ যখন প্রচ্ছায়ার ভেতর দিয়ে যায় সূর্যের সরাসরি আলো আর চাঁদে পড়ে না। তবে সূর্যের কিছু রশ্মি এতে তখনও পৌঁছে। পৃথিবীর বায়ুর মাধ্যমে তা বেঁকে যায়।
এই বেঁকে যাওয়া রশ্মির কিছু চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছে, যদিও চাঁদ তখন পৃথিবীর পেছনে। এই প্রক্রিয়ার ফলে চাঁদ তামাটে রং ধারণ করে। এ ঘটনা চন্দ্রগ্রহণের মাঝামাঝি সময়ে দেখা। যায় । চন্দ্রগ্রহণ প্রতিবার পূর্ণচন্দ্রে ঘটে না কারণ চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবীর দিকে কিছুটা হেলানো। একবার চন্দ্রগ্রহণ ঘটতে পূর্ণচন্দ্রের আবির্ভাব থাকতে হয়। যদি সংযোগস্থলের আগে বা পরে পূর্ণচন্দ্রের উপস্থিতি হয়, তাহলে প্রচ্ছায়া অঞ্চলের চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়। ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী থেলিস চন্দ্রগ্রহণের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আরও অনেক জটিল পদ্ধতির মাধ্যমে। তিনি জানতেন যে সূর্য ও চাঁদ প্রতি ১৮ বছর ১০ দিনে একই অবস্থানে একবার আসে। যেটি তথাকথিত Saros’ নামে পরিচিত। অতএব পরের সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণও ১৮ বছর ১০ দিনে হবে (যা প্রতি পাঁচটি লিপ ইয়ার পরে হয়)। প্রাকৃতিকভাবে এদের অবস্থানগুলো পুরোপুরি একই হয় না ও পরের চন্দ্রগ্রহণটি অবিকল হুবহু ঘটে না। তবে ক্যালডিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পদ্ধতি ব্যাবহার করে থেলিস চন্দ্রগ্রহণের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও তিনি জানতেন না গ্রহণের কারণ কী?