কম্পিউটারের প্রজন্ম বিন্যাস নিয়ে কিছুটা মতান্তর রয়েছে। নিচে বিভিন্ন প্রজন্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
প্রথম প্রজন্ম (First Generation):
১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম বলা হয়। এ সময়ে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন অধ্যাপক ১৯৪৬ সালে ENIAC নামের একটি কম্পিউটার তৈরি করেন।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
১. আকার ও আয়তনের দিক থেকে বিশাল ও তাই সহজে বহনযোগ্য ছিল না।
২. তুলনামূলকভাবে ধীর গতিসম্পন্ন প্রসেসিং।
৩. সীমিত তথ্য ধারণক্ষমতা।
৪. মেশিন ভাষার মাধ্যমে প্রোগামিং কোডের ব্যবহার।
৫. অত্যাধিক বিদ্যুৎ শক্তির খরচ, ইত্যাদি।
উদাহরণঃ ENIAC, EDSAC, BINAC, UNIVAC-1, MARK, IBM-650 ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation):
১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটার দ্বিতীয় প্রজন্ম বলা হয়।১৯৫৮ সালে Jack Cent Clear নামক একজন বিজ্ঞানী Transistor, Registor এবং Capacitor সমন্বিত করে একটি সার্কিট তৈরি করেন যা Integrated Circuit বা IC নামে পরিচিতি লাভ করে। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রধান পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টারের ব্যবহার ।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
১. ট্রানজিস্টার ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার।
২. কম্পিউটারের আকৃতি ও আয়তনের সংকোচন।
৩. উচ্চতর প্রোগামিং ভাষার উদ্ভব ও ব্যবহার।
৪. কার্য সম্পাদন গতির উন্নতি।
৫. তাপমাত্রা সমস্যার সমাধান,ইত্যাদি।
উদাহরণঃ IBM-1401,RCA-501, NCR-300, Honeywell 200, IBM-1620, IBM-1600 ইত্যাদি।
তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation):
১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের তৃতীয় প্রজন্ম বলা হয়। ১৯৬৪ সালে কম্পিউটারে Small Scale Integrated (SSI) সার্কিট এবং Medium Scale Integrated (MSI) সার্কিট ব্যবহৃত হয় বলে এদেরকে ট্রানজিস্টারাইড কম্পিউটারের পরিবর্তে তৃতীয় জেনারেশন বা Integrated Circuit Computer বলা হয়।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে বৈশিষ্ট্য
১. ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) এর ব্যাপক প্রচলন।
২. আকৃতির সংকোচন।
৩. প্রসেসিং স্পীডের ব্যাপক বৃদ্ধি।
৪. উচ্চতর ভাষার উন্নয়ন ও ব্যবহার।
৫. ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট, লাইন প্রিন্টার,মাউস ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইস প্রচলন,ইত্যাদি।
চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation):
১৯৭৩ সাল থেকে চতুর্থ প্রজন্ম শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয়।এ প্রজন্মেই কম্পিউটারের স্মৃতি সমৃদ্ধ হতে থাকে। ROM (Read Only Memory), PROM (Programmable Read Only Memory), EPROM (Erasable Programmable Read Only Memory) এ প্রজন্মে আবিষ্কৃত হয়। উইন্ডােজ, ডস (DOS) অপারেটিং সিস্টেম দু'টি ব্যবহার এ প্রজন্মে শুরু হয়েছে।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ
১. মাইক্রোপ্রসেসর এর উদ্ভব ও ব্যবহার।
২. তথ্য ধারণক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি।
৩. বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার।
৪. এ্যাপ্লিকেশন প্রােগ্রামের ব্যবহার।
৫. হাইপার থ্রেডিং প্রযুক্তির উদ্ভব ও প্রসেসরের গতি বৃদ্ধিতে ব্যবহার,ইত্যাদি।
উদাহরণঃ IBM-3033, HP-3000, IBM-4341, TRS-40, IBM PC ইত্যাদি এ প্রজন্মের কম্পিউটার।
পঞ্চম প্রজন্ম (5th Generation): (২০০১-বর্তমান)
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উল্লেখযােগ্য আর একটি দিক হচ্ছে নেটওয়ার্কের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সেই সাথে single-user workstations এর প্রচলন। প্যারালাল প্রসেসিং এর Sequent Balance 8000 প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০টি প্রসেসরকে একত্রিত করে কাজ চালানাে যায়। DEC VAX-780 একটি সাধারণ ব্যবহার কার্যের জন্য ইউনিক্স সিস্টেম যেখানে Sequent Balance 8000 ব্যবহৃত হয়েছে। Intel iPSC-1 হচ্ছে আর একটি কম্পিউটারের উদাহরণ তবে এখানে ইন্টেলের distributed memory architecture ব্যবহার করা হয়েছে। Intel iPSC-1 এর সর্ববৃহৎ মডেলে ১২৮টি প্রসেসর যুক্ত আছে। ধারণা করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতেই এ প্রযুক্তির উন্নয়নের দ্বারা হাজার হাজার প্রসেসরকে ক্ষুদ্র চিপের মধ্যে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে। এ কম্পিউটারগুলাে খুব শীগগিরই বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ
১. প্যারালাল প্রসেসর এর ব্যবহার।
২. প্রসেসরের গতি বৃদ্ধি।
৩. অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়ন।
৪. ওপেন সোর্স বিভিন্ন প্রোগ্রামের অনেক ব্যবহার।
৫. নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণের দ্বারা কম্পিউটার ব্যবহার।
উদাহরণঃ DEV VAX-780, Intel iPSC-1 ইত্যাদি।
৬ষ্ঠ প্রজন্মের কম্পিউটার (এখনও সাল গণনা শুরু হয় নি)
১. বহু মাইক্রোপ্রসেসরবিশিষ্ট একীভূত বর্তনী,
২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন,
৩. মৌখিক ভাষা ব্যবহার করে কম্পিউটার চালনা,
৪. কম্পিউটার বর্তনীতে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার,
৫. চৌম্বক বাবল মেমােরির ব্যবহার,
৬. মেমােরি ও ডেটা ধারণক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি, ইত্যাদি।
© Rayhan Hossain
#Collected From Youtube And Wikipedia.