জগদীশ চন্দ্র বসুঃ
সবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী এবং বাংলার গর্ব আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু।
বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পযার্য়ে তার মনে হলো, বিদ্যূত প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে। সাড়া দেবার মতো ক্ষমতা শুধু প্রানীর আছে এ কথাটি সত্য নয়, উদ্ভিদও সাড়া দিতে পারে। অর্থ্যাৎ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।
১৯০১ সালের ৬ জুন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু রয়েল সোসাইটির এক সেমিনারে বক্তৃতা দেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু,- অজৈব বস্তুর বৈদ্যুতিক সাড়া’(Electric Response of Inorganic Substances)। পরের বছর ২০ মার্চ তিনি লিনিয়াস সোসাইটির এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। এবারে সরাসরি উদ্ভিদের কথা বলা হয়।
ডাক্তার শাহ এম ফারুকঃ
ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে কিভাবে মারাত্মক কলেরা হয় তার কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি`র আণবিক জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাহ এম ফারুক ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেছেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর দিয়েছে।
ডঃ আনিসুর রাহমানঃ
মানুষের শরীরের বিস্ফুরক জাতীয় কোন উপাদান সনাক্ত করার যন্ত্র স্পেকট্রোমিটার। এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে এতদিন এই পরীক্ষা করা হত। এই স্পেকট্রোমিটারের সাহায্যে এখন আরও সহজে এই বিস্ফুরক জাতীয় কোন উপাদান সনাক্ত করা যাবে। এই স্পেকট্রোমিটারের আবিস্কারক বাংলাদেশের একজন সফল বিজ্ঞানী ডঃ আনিসুর রাহমান।
ড. জামালউদ্দিনঃ
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন।
মেঘনাদ সাহাঃ
মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেন। তাপীয় আয়নবাদ (Thermal Ionization) সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
আজম আলীঃ
আজম আলী উলের প্রোটিন থেকে এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন, যার মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ ও রাসায়নিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর ত্বক ও মাংশপেশীর আরোগ্য সম্ভব। আগুনে মানুষের শরীরের ত্বক ও মাংস উভয়ই ঝলসে যায়।
২০১০ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার বেয়ার ইনোভেটর পুরস্কার পান।
আবেদ চৌধুরীঃ
আবেদ চৌধুরী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়লজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে।
১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়।
তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন,যার মাধ্যমে এই জিনবিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়।
আব্দুস সাত্তার খানঃ
তিনি নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে। তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
পি সি রায়ঃ
নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিলপায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার।
তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবন এবং ৫ টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।
ড. মাকসুদুল আলমঃ
২০০৮ সালে দেশের ৪২ জন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরি ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণার সূত্রপাত। পরে ২০১০ সালে নতুন উদ্যোমে আবারও গবেষণাটি শুরু হয়।
ড. মাকসুদুল আলম একজন বাংলাদেশী জিনতত্ত্ববিদ। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা।
২০১০ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই ও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স মালয়েশিয়ার কাছ থেকে। গবেষণার বিভিন্ন স্তরে প্রায় দুই কোটি তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ড.কুদরাত-এ-খুদাঃ
গবেষণার প্রথম দিকে স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ। বিজ্ঞানী হিসাবে তার ও তার সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত।
দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষ্ণামূলক পত্রিকায় তার রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ডঃ আতাউল করিমঃ
ট্রেন চলবে কিন্তু ট্রেনের চাকা লাইন বা ট্রাক স্পর্শ করবে না। চুম্বকের সাহায্যে এটি এগিয়ে চলবে এবং গন্তব্যে পৌঁছবে চোখের পলকে। বিশ্বের পরিবহন সেক্টরে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবং বাস্তব এটি। আর এর পুরো কৃতিত্ব একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী।
তিনি হলেন ডঃ আতাউল করিম। বিশ্বের সেরা ১০০জন বিজ্ঞানীর একজন। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) ডঃ আতাউল করিমের এ সাফল্যের কাহিনি মার্কিন মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
অধ্যাপক আবুল হুসসামঃ
অধ্যাপক আবুল হুসসাম একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে কম খরচে ভূ-গর্ভস্থ আর্সনিকযুক্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তিনি এবং তার ছোট ভাই ডক্টর আবুল মুনির দু`জনে মিলে তৈরি করেন `সোনো ফিল্টার` নামে এই খাবার পানি থেকে আর্সেনিক নিষ্কাশন করার যন্ত্র।
তাদের তৈরি এই যন্ত্র টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে নির্বাচিত হয়েছে ২০০৭ সালের পরিবেশ বিষয়ক অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে। প্রথমদিকে ডক্টর হুসসাম তৈরি করেন বেশ কিছু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রোকেমিক্যাল এনালাইজার, অটোমেটেড টাইট্রেশন সিস্টেম এবং বেশ মূল্যবান এক ধরনের গ্লাস ক্রোমাটোগ্রাফ যার মাধ্যমে তিনি জটিল কোন ধরনের মিডিয়াতে প্রবাহিত পদার্থের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এই আবিষ্কারটিই তাকে সূযোগ করে দেয় ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার। বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ডক্টর হুসসামের তবে তার বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এসেছে এই আর্সেনিক ফিল্টার আবিষ্কারের পর।
রেজাউল করিমঃ
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করে সারা বিশ্বে চিকিৎসা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। তার এ নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবনের ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় যে মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ওষুধ উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হচ্ছে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ড. মো. আব্দুল আহাদঃ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এর কীটতত্ত্ব বিভাগের ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আহাদ আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণালদ্ধ তথ্য দ্বারা তিনি জীববিজ্ঞানের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর থিওরী যথা, Oparin Theory (প্রথম এককোষী জীবের উৎপত্তি প্রসঙ্গে রাশিয়া ও ব্রিটেন বিজ্ঞানীর থিওরী), Neo-Darwinism, Lamarck Theory (সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের উৎপত্তি বা বিবর্তন প্রসঙ্গে থিওরী) ভুল প্রমাণ করেছেন।
তার গবেষণা প্রবন্ধ দুটি ভারত থেকে প্রকাশিত The International Journal of Bio-Resource and Stress management এ যথাক্রমে মার্চ ও জুন, ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টিতে বাংলাদেশ ও ভারত এর বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
শুভ রায়ঃ
বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায় বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক অসামান্য কীর্তি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় ১০ বছর আগে তার সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দলটি ঘোষণা দেয়, তারা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরো ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রাণীতে প্রতিস্থাপন করে পরীক্ষার পর এটি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন শুভ রায়।
ড. মুশফিক আহমদ ও ড. অধ্যাপক ওসমান গনি তালুকদারঃ
আলোর চেয়ে বেশি গতি নিউট্রিনোর। নিউট্রোনো হচ্ছে ক্ষুদ্রতম কণা পরমাণু বিভাজনের পর ইলেকট্রন নিউট্রন- পজিট্রনের মতো অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আরো একটি বস্তু কণা।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুঃ
পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে নামকরণ করা হিগস-বোসন কণাটি ‘ঈশ্বর কণা’ হিসেবেও পরিচিত। বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়।