সবকিছুর একটি ব্যালেন্স থাকা চাই । কম ঘুমালে যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি বেশি ঘুমালেও শরীরের ক্ষতি হয় ।
ক দিন আগে লিখেছিলাম - কি করে বুঝবেন কম ঘুমান ! লেখাটি শেয়ার হওয়ার পর কেউ কেউ প্রশ্ন করলেন - বেশি ঘুমের জ্বালায় বাঁচে না হায় ! জানতে চেয়েছেন - কি করে কম ঘুমানো যায় !
প্রাপ্তবয়স্ক সবার কম বেশি সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন । কারো কারো ক্ষেত্রে মাত্রাটি নয় ঘন্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা যায় । নিচের দিকেও অনেকে পাঁচ-ছয় ঘন্টা ঘুমিয়ে ভালো থাকেন । গড়ে পাঁচ ঘন্টার নিচে ঘুম হলে শরীর যেমন খারাপ করে, তেমনি গড়ে নয় ঘন্টার বেশি ঘুম হলে শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
এটি শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । বাচ্চাদের গড়ে পনেরো ষোলো ঘন্টা ঘুমের দরকার হয় । কিশোর কিশোরীদের দশ থেকে বারো ঘন্টা ।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘুম হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে- Hypersomnia।
ডিপ্রেশন, ডায়াবেটিস, ব্রেইন টিউমার, হার্ট প্রব্লেম, বাইপোলার সিনড্রোম, কোনো মেটাবলিক ডিজিজ, বেশি মোটা হয়ে গেলে, থাইরয়েড সমস্যা, কিডনি সমস্যা, ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম, ড্র্যাগ অথবা কোনো মেডিসিনের প্রভাবে, অতিরিক্ত এলকোহল পান, এমনসব অনেক কারণে অতিরিক্ত ঘুম, বিশেষ করে দিনের বেলা ঘুমের পরিমান বেড়ে যেতে পারে । Hypersomnia কে কেউ কেউ তাই excessive daytime sleepiness বা EDS বলে ।
আবার কারো কারো ঘুম জনিত কিছু সমস্যা থাকে, সেগুলোর কারণেও এমন অতিরিক্ত ঘুম কিংবা দিবানিদ্রা বেড়ে যেতে পারে । যেমন : sleep apnoea বা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা সমস্যা; narcolepsy - যখন তখন যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়া, restless legs syndrome - রাতে ঘুমের সময় কোনো কারণ ছাড়াই পায়ে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করা । এসব কারণেও অতিরিক্ত ঘুম পায় ।
গবেষণায় দেখা গেছে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশি হয় এটি । যারা নিয়মিত ধূমপান এবং মদ্যপান করেন, তারা Hypersomnia র ঝুঁকিতে থাকেন ।
অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছেন - কি করে বুঝবেন ?
অযথা দুর্বল লাগবে, এমনকি দিনভর ঘুমালেও । ঘুম থেকে উঠে মাথা যন্ত্রনা করতে পারে । মেজাজ কারণ ছাড়াই খিটখিটে হচ্ছে , অল্পতে কোনো বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবেন, ক্ষুধা কম লাগছে, সহজে অনেক কিছু ভুলে যাবেন, ঘুম থেকে উঠলে অস্থিরতা বেড়ে যায়, শার্প চিন্তা ক্ষমতা হ্রাস পাবে ।
অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছেন কিনা তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে গেলে Epworth Sleepiness Scal নামক একটি স্কোরিং পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয় । এর বাহিরে ঘুম জনিত কোনো রোগে ভুগলে polysomnogram নামক একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে ব্রেইনের একটিভিটি এবং শরীরের আরো কিছু একটিভিটি পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় করা যায় ।
কি করে অতিরিক্ত ঘুমের হাত থেকে বের হতে পারেন !
➼ শারীরিক কোনো রোগের কারণে হলে রোগটি চিহ্নিত এবং চিকিৎসা শুরু করতে হবে ।
➼ একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমানোর ডায়রি মেনে চলতে হবে ।
➼ ঘুমের দুই তিন ঘন্টা আগে থেকে কম লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হবে ঘরে ।
➼ কোনো ধরনের ঘুমের মেডিসিন, ড্র্যাগ, এলকোহল ছাড়তে হবে ।
➼ খাবারে মেগনেসিয়াম পরিমান বাড়ানো যেতে পারে ।
➼ ঘুমের মাঝখানে উঠে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকি ঝুঁকি দেয়া বন্ধ করতে হবে।যেটুকু ঘুমানো, তা যেন ক্রমাগত হয়।
ক্রেডিট : অপূর্ব চৌধুরী । চিকিৎসক এবং লেখক । জন্ম বাংলাদেশ, বসবাস ইংল্যান্ড । গ্রন্থ ৭ । উল্লেখযোগ্য বই : অনুকথা, জীবন গদ্য, বৃত্ত ।