রাত জেগে দিনে ঘুমালে আমাদের "সারকাডিয়ান রিদম" বা "বায়োলজিক্যাল ক্লক" বা দেহঘড়ির স্বাভাবিকতায় ছন্দপতন ঘটে। দেহঘড়ি একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা যা আমাদের দিনের বেলায় জেগে থাকা বা রাতের বেলায় ঘুমানোর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ধকারে ঘুম আবার আলোতে জেগে উঠা। অনেকটা সুইচ অন-অফ সিস্টেম৷ দেহঘড়ির স্বাভাবিকতায় ছন্দপতন ঘটলে আমাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি এবং অপূরনীয় ক্ষতি হয়।
দিনের বেলায় ঘন্টার পর ঘুম টাইপ-২ ডায়বেটিস এর আশংকা অন্তত ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, পার্কিনসন্স, এমনকি ক্যান্সার এর ও ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। রাত জাগার ফলে হরমোন পরিবর্তন, দেহের তাপমাত্রার রদবদল, মেজাজ ও মস্তিষ্কের কাজকর্মে ব্যপক প্রভাব পড়তে দেখা যায়। কেউ যদি রাতের বেলা টিভি দেখে, কম্পিউটার/ মোবাইলে কাজ করে ঘুমাতে যায়, তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে। ফলে রাতে ভালো ঘুম হয় না, ফলস্বরূপ বদমেজাজ, ক্ষুধামান্দ্য, বিষণ্নতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে রাত জাগার ফলে মানুষের জিনের ৬ শতাংশ পরিবর্তন হতে পারে। অনিয়মিতভাবে রাত জেগে কাজ করলে দেহঘড়ির ছন্দ রক্ষাকারী জিন ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
আপনি যদি রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমান তবে আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনে বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে পারে যেগুলোর অধিকাংশই রক্তের জন্য এবং দেহের প্রতিরক্ষার জন্য দরকার। তাই রাতের বেলা কমপক্ষে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ।
তবে দিনের বেলা ৩০ মিনিট থেকে ১.৫ ঘন্টা ঘুমানো শরীরের জন্য ভালো(কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা নয়), এতে আপনার ব্রেইন এর কার্যকারিতা বাড়বে এবং স্মৃতিশক্তি ভালো থাকবে। তাই যারা রাত জেগে না ঘুমিয়ে অকারণে আড্ডা দিয়ে, টিভি, সিনেমা দেখে কিংবা মোবাইল ফোন এ গেমস খেলে রাতের সময়টুকু কাটিয়ে দেহঘড়ির স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন, তারা সময় থাকতে সাবধান এবং সচেতন হন।