Nishat Tasnim
ইরেজার মূলত তৈরি হয় রাবার, ভিনাইল, প্লাস্টিক বা বিভিন্ন আঠালো পদার্থ থেকে। এছাড়া বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে বানানো হয় বিভিন্ন রঙয়ের ইরেজার। মূলত পেন্সিলের লেখাতে কোন ভুল হলে আমরা সেটি মোছার কাজে ইরেজার ব্যবহার করি। অনেক প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে পেন্সিল বা এ জাতীয় লেখার সামগ্রীর ব্যবহারের কথা আমরা জানতে পারি। রোমানরা প্যাপিরাসের (কাগজের আদি সংস্করণ) উপর সীসার দণ্ড দিয়ে লেখালেখির কাজ করতো। এই সীসার দণ্ডের নাম ছিল স্টাইলাস। যেহেতু সীসা খুবই নরম ধাতু, তাই প্যাপিরাসের উপর দিয়ে এটি খুব চমৎকার লেখার কাজ করতো। ১৫২৪ সালে ইংল্যান্ডের কাছেই বিশাল এক গ্রাফাইট খনি আবিষ্কৃত হয়। গ্রাফাইট দিয়ে সীসার চেয়েও গাঢ় রঙয়ের লেখা লেখা সম্ভব ছিল। আর সীসা একটি বিষাক্ত পদার্থ। তাই লেখার উপকরণ হিসেবে গ্রাফাইট সীসার জায়গা দখল করে নেয়। আর তখন থেকেই পেন্সিলের যাত্রা শুরু হয়।
তো গ্রাফাইট দিয়ে লেখার সময় লেখাতে কোন ভুল হয়ে গেলে প্রথম দিকে হাত দিয়ে ঘষেই লেখা মোছার কাজ করা হত। এরপরে এক ধরণের সাদা রুটি ব্যবহার করা হতো লেখা মোছার জন্য। কিন্তু এতে কাগজ ও লেখার– উভয়ের সৌন্দর্যই নষ্ট হতো। ১৭৭০ সালে এডওয়ার্ড নেইম নামে এক প্রকৌশলী ইরেজার বা রাবার উদ্ভাবন করেন। ১৮৩৯ সালে চার্লস গুড ইয়ার নামে এক ভদ্রলোক ‘ভালকানাইজেশন’ পদ্ধতির মাধ্যমে সালফার আর রাবারকে তাপের মাধ্যমে মিশিয়ে উন্নত ইরেজার তৈরি করেন, যা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর পেন্সিলের মাথায় ইরেজার বা রাবার লাগানোর আইডিয়া আসে ১৮৫৮ সালে লিপ হাইম্যান নামে এক ভদ্রলোকের মাথায়। ইরেজার যেভাবে কাজ করে আগেই বলা হয়েছে, পেন্সিলের ভেতরে থাকা গ্রাফাইটের ছোট একটি দণ্ড, যাকে আমরা সাধারণভাবে ‘শিষ’ বলি। পেন্সিল দিয়ে কাগজের উপর যা লেখা হয় তাতে থাকে গ্রাফাইট কণা। ইরেজার কাগজের উপর থেকে এই গ্রাফাইট কণাগুলোকে সরিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে, কাগজের চেয়ে ইরেজারের উপাদানগুলো বেশি আঠালো হয়ে থাকে। তাই কাগজের উপর পেন্সিলের দাগের মধ্যে থাকা গ্রাফাইট কণাগুলো ইরেজারের সাথে লেগে যায়। ইরেজার পেন্সিলের লেখার গ্রাফাইট কণাগুলোকে শোষণ করে নেয় এবং এবং কাগজের উপর এক ধরণের অবশিষ্ট অংশ ফেলে রাখে, যেটা আমরা পরিষ্কার করে নিয়ে আবার লিখতে শুরু করি। কিছু ইরেজার আছে যেগুলো দিয়ে পেনিসিলের লেখা বা দাগ মোছার সময় সেটি কাগজের উপরের স্তরও তুলে ফেলে। এজন্য ভিনাইল দিয়ে তৈরি ইরেজারই সবচেয়ে ভালো।
©প্রিয় ওয়েব