বাটারফ্লাই ইফেক্ট (The Butterfly Effect)
আপনি কি জানেন, যে আপনি ভেনিজুয়েলা তে বসবাসরত নিকোলাস মাদুরোর সাথে সম্পর্কযুক্ত? অথবা, ব্রাজিলের নেইমারের পার্ফরমেন্স এর উপর আপনার বাবার প্রভাব রয়েছে?
আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। উপরের ঘটনাগুলো কাল্পনিক। কিন্তু এ কথা ১০০ ভাগ সত্য যে এই পৃথিবীর সব মানুষ একে অপরের কাজ দ্বারা কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত। এই তত্ত্বটি হলো,
“বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব” বা
“Theory of Chaos” , যার একটি ফল হল
বাটারফ্লাই ইফেক্ট (The Butterfly Effect). এই তত্ত্বটির ভিত্তি হল: যে কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ, কোন ঘটনার শেষ পরিনতিকে বা ফলাফলকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করতে পারে। “বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব” বা “Theory of Chaos” নিয়ে ১৮৮০-র দশকে প্রথম কোন ধারনা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেন মার্কিন গণিতবিদ এডওয়ার্ড নর্টন লরেঞ্জ (Edward Norton Lorenz).
উনি গাণিতিকভাবে দেখান যে, বিশ্বের যে কোন তরঙ্গকে সামান্য পরিবর্তন করা হলে সেই পরিবর্তন বিশ্বের অন্য সকল তরঙ্গ কে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করে। এ বিষয়টি তরঙ্গের উপরিপাতন (Superposition of wave) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন যে, ব্রাজিলে কোন প্রজাপতি পাখা ঝাপটালে তার ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে হারিকেন হতে পারে! তিনি প্রকৃতভাবে বোঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন ক্ষুদ্র কাজের পরিণতি অনেক বড়ও হতে পারে।
বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ছোট ছোট বা আপাতভাবে গুরুত্বহীন মনে হওয়া কাজ ও কোন ফলাফলকে বিশেষভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে।
১. ভুল দয়া (Wrong Mercy)
বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর সবচয়ে জনপ্রিয় উদাহরন এটি। ২৮ সেপ্টেম্বর,১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। সেদিন জার্মানি ও ব্রিটেনের মুখোমুখি যুদ্ধের এক পর্যায়ে হেনরি টেন্ডেন নামের এক ব্রিটিশ সেনার বন্দুকের নিশানায় এক আহত জার্মান সৈনিক এসে পড়ে। হেনরি চাইলে সেই সৈন্যকে গুলি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি দয়া করেন সেই সৈন্যের উপর। সেই দয়াগ্রস্থ সৈন্যটিকে আজ আমরা এডলফ হিটলার নামে জানি! সেই ব্রিটিশ সৈন্য সেদিন দয়া না দেখালে কি হত কেউ জানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি হত? পারমানবিক বোমা কি আবিষ্কার হত? কোন প্রশ্নের ই উত্তর পাওয়া যায় না, যাবেও না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই পুরো বিশ্বে অনেক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনীতি মুখ থুবরে পড়ে। ব্রিটেন ও এর ব্যতিক্রম নয়। এই অর্থনৈতিক টানাপোড়ের ফলে দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ব্রিটিশ সরকার পূর্বের মত সামলাতে পারছিল না। যার ফলে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের;পরবর্তীতে বাংলাদেশের। এখন প্রশ্ন হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে কি উপমহাদেশ স্বাধীন হত? বাংলাদেশের জন্ম হত? হলেও কি ঘটনাক্রম একই থাকত?
২. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!
অবাক হলেও সত্যি যে, বাটারফ্লাই ইফেক্ট দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাতেও। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই যেত, যদি না শেষ মুহূর্তে সঠিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ না করা হত। সেই সময় এক বিশেষ ভুল বোঝাবুঝির জন্য সোভিয়েত সাবমেরিন টর্পেডো লঞ্চ করতে প্রস্তুত ছিল মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উদ্দেশ্যে। সোভিয়েন নিয়মের অনুসারে, সাবমেরিন টর্পেডো লঞ্চের জন্য ক্যাপ্টেন, পলিটিকাল অফিসার এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসারে- এই তিন পদস্থ প্রত্যেক ব্যাক্তির সম্মতির প্রয়োজন। কিন্তু বাকি দুইজন সম্মতি দিলেও সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসার সম্মতি দেন নি।
এখানে মনে রাখা দরকার, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই পারমানবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ ছিল। সে সময় এই দুই পরাশক্তি যুদ্ধে নেমে গেলে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার অনিবার্য ছিল। যার ফল হত ভয়াবহ। এমন কি পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন ও হতে পারত!
এভাবেই অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ আমাদের ভবিষ্যৎ এবং সভ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এরকম আরো অনেক উদাহরন আছে বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর। তাই, পরবর্তীতে যদি কোন আকস্মিক ঘটনা যদি আপনার সাথে ঘটে, মনে রাখবেন তা নিছক ঘটনা নয়। কারো না কারো করা কোন কাজের ফলাফল!