আমরা অনেকেই "বাটারফ্লাই ইফেক্ট" টার্ম টার সাথেপরিচিত।আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটা মহুর্তের প্রতিটা কাজের মধ্যে বাটারফ্লাই ইফেক্ট জড়িত।আপনি যেটা করছেন তার প্রভাবে আশেপাশে কি পরিবর্তন হচ্ছে সেটাই হল 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট'
এটা একটা ক্যাওস থিওরি(Chaos Theory). ক্যাওস থিওরি হল বিস্ময়, অরৈখিক ও অনিশ্চিতের বিজ্ঞান। অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে প্রত্যাশা করতে শেখায় এটা। ফলে জীবনে চলার পথে আমরা আরেকটু সাবধান হই। উদাহরণ, গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্বক আহত হওয়া একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাকেই ঘটার আশঙ্কা করে আমরা গাড়িতে এয়ারব্যাগ(Air Bag), সিটবেল্ট ব্যবহার করি।
উপরের ঘটনাটির প্রভাব বিস্তৃতি খুব কম। বাটারফ্লাই এফেক্ট এমনই একটি ক্যাওস থিওরি যার প্রভাব অনেক বিস্তৃত।
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে একটা প্রজাপতি পাখা নাড়ানোর ফলে বাতাসে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তা অন্য প্রান্তে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করতে পারে যদি প্রজাপতিটির পাখা নাড়ানোর স্থানকাল ঠিক বিন্দুতে হয়। অর্থাৎ, প্রজাপতিটি যদি ঠিক সেই সময়ে ঠিক সেই জায়গায় পাখা না নাড়াতো তাহলে ওই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হত না।
বাস্তব জীবনেও অনেক ছোট ছোট ঘটনাগুলো কত বড় প্রভাব ফেলতে পারে তার অনেকগুলো উদাহরণ দেয়া যায় এবং এগুলোকে বাটারফ্লাই এফেক্টের সাথে তুলনা করা যায়। যেমনঃ
১. ম্যাক্স ইথার এর উদাহরণঃ ধরুন আজ শুক্রবার ছুটির দিনে আমি আপনাকে ফোন করে আমার বাসায় দাওয়াত দিলাম। আমার গৃহের উদ্দেশে আপনি যাত্রা শুরু করার প্রয়াসে ড্রাইভারকে গাড়ী বের করতে বললেন । ছুটির দিন বিধায় আপনার ড্রাইভারকে অনুরোধ করতে হল, আপনার ড্রাইভার তার পূর্ব পরিকল্পিত প্ল্যান পরিবর্তন করতে বাধ্য হলো। আপনার স্ত্রীকে বললেন আজ আপনি বাসায় খাবেন না। আপনার স্ত্রী রান্নায় তার প্ল্যান পরিবর্তন করলো। আমার বাসায় আপনাকে দাওয়াত করার পর আমার গিন্নিও তার রান্নায় পরিবর্তন আনলেন। আপনার গাড়ীটি রাস্তায় বেরোবার পর আপনার গাড়ীর গতিপ্রকৃতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আরও অনেক গাড়ীর গতিপ্রকৃতি পাল্টে গেলো।
চতুর্মাত্রিক ভাবে এদের সবার অবস্থানের পরিবর্তনের জন্যও কিন্তু আপনার অবস্থান দায়ী। আর তাদের চতুর্মাত্রিক অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাদের সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলেরও চতুর্মাত্রিক স্থানিক পরিবর্তন ঘটলো। আপনার সাপেক্ষে এই পরিবর্তন পরোক্ষ। কিন্ত আপনার গাড়ীর একটা ছোট্ট মুভই হয়তো বাঁচিয়ে দিতে পারে কারও জীবন অথবা মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। আপনি যদি আজ গাড়ী না বের করতেন তাহলে আপনার গাড়ী রাস্তায় কোন চতুর্মাত্রিক স্থানকাল দখল করতনা। তাতে আপনার গাড়ী রাস্তায় থাকলে অন্য গাড়ীগুলোর যে গতিবিধি হতো আপনার গাড়ী না থাকাতে ভিন্ন গতিবিধি হবে। আর এই ভিন্ন গতিবিধি রাস্তায় থাকা সব গাড়ীর গতিবিধিতেই কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনবে। আর হয়তো এই কিঞ্চিৎ পরিবর্তনের উপরেই হয়তো কারও বাচা মরা নির্ভর করে।
২. আরেকটি মজার উদাহরণঃ বখতিয়ার খিলজির ছেলে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ যখন তার অশ্বারোহীদের নিয়ে বঙ্গ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করলেন, তখন সীমান্ত ঘাটির আস্তাবলে ছিলনা নাল লাগানোর পেরেক। সেই পেরেকের অভাবে রাজদূতের ঘোড়ার খুরে নাল লাগানো গেলনা, নাল লাগানো হলনা বলে নালবিহীন ঘোড়াও দ্রুত চলতে গিয়ে পথিমধ্যে রাজদূত সমেত বারংবার আছড়ে পড়ল।
পথের প্রতিবন্ধকতায় রাজদূত সময়মত সংবাদ দিতে পারলনা, সঠিক তথ্যের অভাবে রাজা লক্ষনসেন আর তার সভাসদেরা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কনফিউজড থাকলেন। কনফিউশনের কারনেই সম্ভবত তারা ঔর্স্ট কেইস সিনারিটাই আগে কনসিডার করলেন, আর ভাবলেন ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদের ঘোড়সওয়াররা নিশ্চয় বিশাল কোন এক এক্সপিডিশনারি ফোর্সের দুর্ধর্ষ ভ্যানগার্ডই হবে।
সতরঞ্জ বা দাবার মতই যেকোন যুদ্ধে রাজা হলেন রাস্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক, আধুনিক সমরবিদ্যায় যাকে বলে সেন্টার অব গ্রাভিটি। রাজার পতন মানেই যুদ্ধ শেষ। তাই সভাসদের পরামর্শে রাজা লক্ষন সেন প্রাসাদ ত্যাগ করলেন, আর ইতিহাসের পাতায় লিখা হল, "...অতঃপর ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ সাকুল্যে ১৭ জন ঘোড়সওয়ার লইয়া বঙ্গ বিজয় করিয়া ফেলিলেন।" তারপর, দীর্ঘঃশ্বাস!
আমরা দেখতে পাচ্ছি সামান্য গাফিলতির ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।এবার আপনি নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তা করুন, আপনার কর্মকান্ড নির্ধারন করবে জীবনে ভাল না খারাপ বাটারফ্লাই ইফেক্ট কাজ করবে।