এক কথায় বলতে গেলে আরথ্রাইটিস হল জয়েন্টের প্রদাহ। এ রোগ হলে জয়েন্ট ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। প্রায় সময় বিশেষ করে বয়স্কদের হাত পায়ের গিটে গিটে এরকম ব্যথা হলে আমরা ভাবি ক্যালসিয়ামের অভাবে হয়েছে, নিজে নিজে ভিটামিন খাই কিংবা ব্যথার ওষুধ খেয়ে সেরে যাবে বলে বসে থাকি। আরথ্রাইটিস নিজে থেকে সেরে যাবার অসুখ নয়। এর যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে তবেই ভালো থাকা সম্ভব।
আরথ্রাইটিসের নানা প্রকারভেদ রয়েছে। একটি হল অষ্টিও আরথ্রাইটিস যেখানে আমাদের অস্থিসন্ধিতে যে নরম হাড়ের মত আবরণ বা কার্টিলেজ থাকে সেটি ক্ষয়ে যায়। কার্টিলেজের কাজ হল জয়েন্টের প্রতিনিয়ত নড়াচড়ায় যেন হাড়ে সরাসরি আঘাত না লাগে তা নিশ্চিত করা। এটি ক্ষয় হয়ে গেলেই হাড়ে হাড়ে ঘষা খেতে শুরু করে, প্রদাহ হয়, তার থেকেই আরথ্রাইটিসের ব্যথার সূচনা। আরেক ধরণের আরথ্রাইটিস হল রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস। এটি একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার অর্থাৎ দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অস্বাভাবিক আচরণের দরুণ এই সমস্যা দেখা দেয়। জয়েন্টের ভেতর একধরণের কোষকলার আস্তরণ থাকে যার নাম সাইনোভিয়াম। এটি তরল পদার্থ নিঃসরণের মাধ্যমে কার্টিলেজকে পিচ্ছিল রাখে, হাড় মসৃণভাবে নড়াচড়া করতে পারে। দেহের ইমিউন সিস্টেম এই সাইনোভিয়ামকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে শুরু করলেই দেখা দেয় রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস। এ থেকে পরবর্তীতে হাড়েরও ক্ষতি হতে পারে।
যে ধরণের আরথ্রাইটিসই হোক না কেন, প্রধান লক্ষণগুলো একই। জয়েন্টে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, আড়ষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া লালচে হয়ে যেতে পারে। একসময় হাত পা নাড়ানোই কষ্টকর হয়ে পড়ে। সঠিক চিকিৎসার জন্য আরথ্রাইটিসের প্রকার নির্ধারণ করা জরুরী। কিছু বিশেষ রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে এটি নির্ণয় করা হয়।
এবার জেনে নিন কাদের আরথ্রাইটিস হবার ঝুঁকি বেশী-
♦ আরথ্রাইটিস বংশগতভাবে হতে পারে। কারো পরিবারে বাত-ব্যথার ইতিহাস থাকলে সতর্ক হোন, আপনি সহজেই আরথ্রাইটিসের শিকারে পরিণত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
♦ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরথ্রাইটিস হবার সম্ভাবনা বাড়ে।
♦ শারীরবৃত্তিক এবং হরমোনগত কারণে পুরুষদের চেয়ে নারীরা এই রোগে বেশী আক্রান্ত হন। বিশেষ করে মেনোপজের সময় বা পরে এ ঝুঁকি আরো বেশী।
♦ অতিরিক্ত ওজন আরথ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
♦ কখনো জয়েন্টে আঘাত বা অন্য রোগ হয়ে থাকলে পরবর্তীতে আরথ্রাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
সুস্থ থাকতে হলে আসলে রোগ হবার পর চিকিৎসা করাই যথেষ্ট নয়। আগে থেকে যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিতে হয়, কোন রোগের ঝুঁকি কেমন, কিভাবে চললে কি করলে ভালো থাকা যাবে তা জানতে হয়। আরথ্রাইটিসের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হোন আজই।