যা হতে পারে: শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে গেলে হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্য অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু না করলে তাই একসময় হার্ট ফেলিওর ঘটে এবং শ্বসনতন্ত্র ঠিকমতো চলতে না পারায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
যা করতে হবে: এই অবস্থার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ফিরিয়ে আনতে শরীরকে গরম করার ব্যবস্থা করতে হয়।
হাইপোথার্মিয়ার উপসর্গ: যে মুহূর্তে শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে সেই সময়েই কাঁপুনি শুরু হয়। এটাই হাইপোথার্মিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ। ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এটি একটা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা।
মৃদু হাইপোথার্মিয়া: মৃদু হাইপোথার্মিয়াতে যে ধরনের লক্ষণ হতে পারে।
1.কাঁপুনি
2.মাথা ঘোরা
3.খিদে
4.বমি বমি ভাব
5.দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস
6.কথা বলার ক্ষেত্রে অসুবিধে
7.সামান্য বিহ্বলতা
8.সমন্বয়ের অভাব
9.ক্লান্তি
10.হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
মাঝারি থেকে মারাত্মক হাইপোথার্মিয়া: শরীরের তাপমাত্রা আরও কমে গেলে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যাবে।
কাঁপুনি, যদিও হাইপোথার্মিয়া খুব বেড়ে গেলে কাঁপুনি থেমে যায়
1.বিচক্ষণতার অভাব বা সমন্বয়ের অভাব
2.ভুল বকা বা বিড়বিড় করা
3.ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া। যেমন, গরম পোশাক খুলে ফেলার চেষ্টা করা
4.তন্দ্রাচ্ছন্নতা অথবা চটপটে ভাব কমে যাওয়া
5.ধীরে ধীরে সচেতনতার অভাব ঘটতে থাকা
6.দুর্বল পালস্
7.ধীর ও কম গভীর শ্বাস
হাইপোথার্মিয়া হলে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত চট করে তাঁর বাহ্যিক অবস্থা অনুভব করতে পারেন না কারণ, উপসর্গগুলি ধীরে ধীরে শুরু হয়। এছাড়া হাইপোথার্মিয়া-সহ চিন্তার বিচ্ছিন্নতার ফলে মানুষের আত্মসচেতনতার দিকটি প্রতিহত হয়। সে কারণেই এই অবস্থায় মানুষ ভুল বকতে শুরু করেন।
শিশুদের হাইপোথার্মিয়া: শিশুদেরও হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। যে লক্ষণগুলি দেখতে পাওয়া যায়–
1.উজ্জ্বল লাল ত্বক
2.আচ্ছন্ন ভাব
3.দুর্বল ভঙ্গির কান্না
হাইপোথার্মিয়ার কারণ: আপনার শরীর যে পরিমান তাপ উৎপাদন করছে তার চেয়ে দ্রুত হারে যদি সেটি হারাতে থাকে তাহলে হাইপোথার্মিয়া হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই ঘটনা ঘটার মূল কারণ ঠান্ডা পরিবেশ কিংবা ঠান্ডা জল। তবে ঠিকমতো শীত-পোশাক না পরে শরীরের চেয়ে কম তাপমাত্রা আছে এমন যে কোনও পরিবেশে অনেকক্ষণ ধরে থাকলেও হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। তাই শীতের সময় শীত-পোশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্দিষ্ট কারণ: হাইপোথার্মিয়ার নির্দিষ্ট কারণগুলি হল,
1.পরিবেশের তুলনায় যথেষ্ট গরম পোশাক না পড়া
2.অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডায় থাকা
3.ভেজা কাপড় ছেড়ে ফেলতে অসমর্থ হওয়া, অথবা কোনও উষ্ণতর ও শুকনো জায়গায় না যেতে পারা
4.খুব ঠান্ডায় হঠাৎ করে জলে পড়ে যাওয়া। যেমন, নৌকো দুর্ঘটনা
5.শিশু ও বৃদ্ধ আছে এমন ঘরে খুব ঠান্ডা করে এয়ারকন্ডিশান চালানো
ঘরের ভেতরেও হাইপোথার্মিয়া হতে পারে: বাইরের ঠান্ডা পরিবশেই শুধু হাইপোথার্মিয়া হবে এমন নয়, কোনও কোনও বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ঘরের ভেতরেও মৃদু পর্যায়ের এই সমস্যা হতে পারে। এটা ঠিক যে, ওই একই ঘরে একজন কমবয়সী প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে হয়ত এমনটা হবে না। এই ধরনের হাইপোথার্মিয়ার উপসর্গ ও লক্ষণ স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা আলাদা।
ঝুঁকি: হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকিকে উসকে দিতে পারে এমন বেশ কয়েকটি শর্ত আছে। যেমন,
বেশি বয়স: বেশ কিছু কারণে বেশি বয়সী মানুষেরা হাইপোথার্মিয়া হওয়ার পক্ষে অনুকুল। আসলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও শীত অনুভবের ক্ষমতা কমতে থাকে। এছাড়া অনেক বৃদ্ধ মানুষ অসুস্থতার কারণে এই ক্ষমতা হারান।
খুব কম বয়স: প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা দ্রুত শরীরের তাপ হারায়। আসলে শিশুদের শরীরের উপরিতল ও ওজনের অনুপাত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে শিশুদের তাপমাত্রা হারানোর পরিমানটাও বেশি। এছাড়া ঠান্ডা লাগা সত্ত্বেও শিশুরা খেলাধূলার মজা পেতে তা উপেক্ষা করে। ঠিক মতো শীত-পোশাক পড়ার জন্য যে বিচারক্ষমতা দরকার তাও তাদের থাকে না। আর একটি ব্যাপার হল, একেবারে ছোটদের শরীরে তাপ তৈরির মেকানিজম তেমন উন্নত থাকে না।
মানসিক সমস্যা: মানসিক সমস্যা, ডিমেনশিয়া অথবা অন্য কোনও কারণে যাঁদের বিচার ক্ষমতা থাকে না তাঁরা পরিবেশের উপযোগী শীত-পোশাক পরেন না। তাছাড়া ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষ বাড়ি ছেড়ে বাইরে ঘুরে ঠান্ডা লাগিয়ে হাইপোথার্মিয়ার শিকার হতে পারেন।
মদ ও ড্রাগের ব্যবহার: মদ খেলে একজনের গরম বোধ হতে পারে ঠিকই, কিন্তু মদের প্রভাবে শরীরের রক্তবাহ প্রসারিত হয়ে গেলে ত্বকের উপরিভাগ থেকে শরীর দ্রুত হারে তাপ হারাতে শুরু করে। মদ্যপানের ফলে শরীরের স্বাভাবিক কাঁপুনির যে প্রতিক্রিয়া তাও কমতে শুরু করে। এছাড়া মদ বা ড্রাগের ব্যবহারে মানুষ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শীত-পোশাক পরার বিচার বোধ হারিয়ে ফেলেন। সে কারণেই নেশাগ্রস্ত অবস্থার কোনও মানুষ ঠান্ডা আবাহাওয়ায় হাইপোথার্মিয়াতে আক্রান্ত হতে পারেন।
হাইপারথার্মিয়া
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে কোনও ব্যক্তির শরীরে যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তবে তাকে হাইপারথার্মিয়া বলে। এই সময় মানুষটির শরীর যতটা তাপ অপচয় করে তার চেয়ে বেশি তাপ উত্পাদিত বা শোষিত হয়। যখন তাপমাত্রা চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছায় তখন সমস্যাটা জরুরি ভাবে সামাল দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তো বটেই মৃত্যুও ঘটতে পারে।
কারণ
হাইপোথার্মিয়া মূলত হিট স্ট্রোক অথবা ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে। অত্যধিক তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসে অথবা তাপ ও আদ্রতার সম্মিলিত প্রভাবে শরীরে তাপ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ছাপিয়ে গেলে হিট স্ট্রোক ঘটে। তবে খুব বিরল ক্ষেত্রেই ওষুধের বিরূপ প্রভাব তাপ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। ওষুধ বলতে এখানে মূলত সেই সব ওষুধের কথা বলা হচ্ছে যারা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপরে কাজ করে।
কখন হাইপোথারমিয়া
মানুষের ক্ষেত্রে ৩৭.৫-৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৯.৫-১০০.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট)-এর বেশি তাপমাত্রাকে হাইপোথারমিয়া বলে ধরা হয়। এই সময় শরীরের টেমপারেচার সেট পয়েন্ট অবিকৃত থাকে। মনে রাখতে হবে, শরীরের তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়া বিপজ্জনক ও জীবন হানিকর।
হাইপোথারমিয়ার উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে-
1.অত্যধিক ঘাম
2.দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস
3.দ্রুত ও দুর্বল গতির নাড়ি (পালস)
4.বমি বমি ভাব কিংবা বমি
5.মাথাব্যথা
6.রক্তচাপ কমে যাওয়া
7.মাথাঘোরা
যদি অবস্থা হিট স্ট্রোক পর্যায়ে চলে যায় তাহলে চামড়া গরম ও শুষ্ক হয়ে উঠবে কারণ, বেশি করে তাপমাত্রা হ্রাসের জন্য রক্তবাহগুলি প্রসারিত হয়ে থাকবে। তবে স্নায়ুতন্ত্রজনিত সমস্যার কারণে হাইপোথারমিয়া ঘটলে কম ঘাম বা আদৌ ঘাম না হতে পারে।
তথ্যসূত্র : rs71health , emergency-live , Priyo , wikipedia