মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার জন্য ঘুমের কোনো বিকল্প নেই- এটা আমরা জানি। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন সারা দিনে জমা হওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলো পরিষ্কার হয়। এতে ঘুম থেকে ওঠার পর মস্তিষ্ক আবার ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমের অভাব খুব বেশি হলে মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে। এর অর্থ হলো, মস্তিষ্কের কোষগুলোর বর্জ্য ধ্বংস করে যেসব কোষ, তারা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্ককে পরিষ্কার রাখার এই কাজের একটি অংশ হলো মাইক্রোগ্লিয়া কোষগুচ্ছ, যারা স্নায়ুতন্ত্রের বর্জ্য, ক্লান্ত এবং মৃত কোষের বর্জ্য পরিষ্কার করে। আরও এক ধরণের কোষ, অ্যাস্ট্রোসাইট মস্তিষ্কের বেশ কিছু কাজ একসাথে করে। এদের অনেকেগুলো কাজের মাঝে একটি হলো মস্তিষ্কের অপ্রয়োজনীয় সিন্যাপ্সগুলোকে ছেঁটে ফেলা।
আমাদের মস্তিষ্ক একটি ছোট অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও শরীরের প্রায় ২০% অক্সিজেন ব্যবহার করে। এর কারণে আমাদের মস্তিষ্কে প্রচুর ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয় এবং সেলুলার স্ট্রেস বাড়ে। মস্তিষ্ক ঘুমানোর সময় কিছু নিউরোপ্রটেক্টিভ হরমোন ক্ষরণ করে (যেমনঃ মেলাটনিন, সেরোটোনিন) যারা ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও "গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম" নামক একটি প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক ঘুমের মধ্যে ব্রেইনের বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে। অনিয়মিত ও কম ঘুমের ফলে আমাদের ব্রেইনে বেশি অক্সিডেটিভ ড্যামেজ হয় ও নিউরোডিজেনারেশন ঘটে। অতিরিক্ত ঘুমের অভাবের ফলে সক্রিয় হয় আমাদের মস্তিষ্কে থাকা মাইক্রোগ্লিয়া ও অ্যাস্ট্রোসাইটস। ফলে তারা মস্তিষ্কের বর্জ্যের অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় সিন্যাপ্স গুলোর পাশাপাশি অন্যান্য কোষ গুলোও ফ্যাগোসাইটোসিস এর মাধ্যমে খেয়ে ফেলতে থাকে। এতে আমাদের মেমরি, চলাফেরা, নিয়ন্ত্রণ, মেজাজ ইত্যাদিতে প্রভাব পড়তে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের ঘুম কম হয় তাদের বৃদ্ধ বয়সে আলঝাইমার'স ডিজিস হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
সবচাইতে জটিল অঙ্গ, মস্তিষ্ক প্রতিনিয়তই নতুন করে নিজেকে তৈরি করছে, শক্তিশালী হচ্ছে আর ভাঙ্গাগড়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এটা একটি অসীম প্রক্রিয়া, যেখানে কিছু কাঠামো ভাঙ্গে আর কিছু নতুন করে তৈরি হয়। এ নিয়ে আরো গবেষণা হলে বোঝা যাবে এই অ্যাস্ট্রোসাইট এবং মাইক্রোগ্লিয়ার সক্রিয়তা মস্তিষ্কের ওপর আসলে কী প্রভাব রাখে। আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দৈহিক প্রায় সকল কার্যকলাপই ঘুমের ওপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। তবে যদি নিয়মিত স্বাভাবিকভাবে ঘুম না আসে, তাহলে ইচ্ছেমতো ওষুধ না খেয়ে চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
তথ্যসূত্রঃ জিনিউজ, প্রিয়ওয়েব