জানলার ধারে বাসের সিট। মনে মনে বিশেষ মানুষটির কথা ভাবছিলেন। হঠাৎ বেজে উঠল ফোন। স্ক্রিনে কলারের নাম ভেসে উঠতে দেখেই নিশ্চয় হাঁ হয়ে গেলেন? কী করে সম্ভব? ফোন করেছে সেই বিশেষ পুরুষ বা নারীটি! অথচ তার ফোন করার কোনও সম্ভবনাই ছিল না! কীভাবে ঘটল এমন? তবে শুধু বিশেষ মানুষটি নয়, এমনকী প্রিয় বন্ধু, আত্মীয়ের মধ্যেও এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। এছাড়া খুব নিকট আত্মীয়ের বিপদে পড়ার মতো খারাপ স্বপ্ন দেখা ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে!
কেন এমন হয়?
কিছু কিছু মনোবিজ্ঞানী বলেন, এমন হয় মেন্টাল টেলিপ্যাথির কারণে। কেউ খুব নিবিড়ভাবে অপর ব্যক্তি সম্পর্কে ভাবলে, সেই চিন্তা স্পর্শ করে ওই ব্যক্তিকে। এভাবেই অদ্ভুত যোগাযোগ হয়ে যায় মাঝে মধ্যে।
প্রশ্ন হল কী এই মেন্টাল টেলিপ্যাথি?
মেন্টাল টেলিপ্যাথি: এই প্রক্রিয়ায় কোনও এক ব্যক্তি তার মানসিক অনুভূতি, ভাবনা, ছবি, কথা ইত্যাদি অপর এক ব্যক্তির চেতনায় প্রেরণ করে। অন্যপ্রান্তে থাকা অপর ব্যক্তি ওই চিন্তা, কথা, ভাবনা ও ছবি গ্রহণ করতে পারলে বা বুঝতে পারলে হয় টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ। এই প্রক্রিয়ায় ফোন, ইমেল, বা অন্য কোনও মাধ্যমের সাহায্য নেওয়া হয় না। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে মানসিক যোগাযোগ।
এই ধরনের মানসিক যোগাযোগ হতে পারে পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকা দুটি মানুষের সঙ্গে। আবার পাশাপাশি দুটি ঘরে থাকা ব্যক্তির মধ্যেও এমন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। মজার ব্যাপার হল, কিছু কিছু গবেষক বলছেন, মেন্টাল টেলিপ্যাথি হতে পারে দুজন পরিচিত লোকের মধ্যেই যেমন স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক প্রেমিকা, দুই বন্ধু, মা ও সন্তান। তবে সম্পূর্ণ অপরিচিত লোকের সঙ্গেও টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ হওয়াও অসম্ভব নয়।
অনেকেই মনে করেন করেন যে, প্রত্যেক মানুষেরই টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য দরকার তীব্র মনোসংযোগ।
যোগাযোগ স্থাপনের পদ্ধতি:
• মনকে একাগ্র করুন:
আগেই বলা হয়েছে, টেলিপ্যাথিক যোগাযোগের জন্য দরকার নিবিড় মনোনিবেশের। তাই আগে মনকে একাগ্র করতে জানতে হবে। মন শান্ত করার জন্য আগে নিরিবিলি জায়গা বাছুন। চোখ বন্ধ করুন। চোখের সামনে একটি আলোক বিন্দুকে কল্পনা করুন। মিনিক কুড়ি এভাবে ধ্যান করুন ও ওই আলোকবিন্দু ছাড়া মন থেকে বাকি সব ধরনের চিন্তা দূরে সরান। শ্বাস নিন লম্বা ও ধীরে। ধ্যান করার সময় আঁটসাঁট জামাকাপড় পরবেন না। শরীরে কষ্ট হলে মনকে একাগ্র করা সম্ভব নয়। ধ্যান করার একটাই কারণ— চিন্তাকে একমুখী করা। বলা হয়, যাঁরা প্রতিদিন ধ্যান করেন, তাঁরা সহজেই টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন। অবশ্য আপনার আগে থেকেই মন শান্ত থাকলে ধ্যান করতে নাও হতে পারে।
• যোগাযোগ স্থাপন:
যে ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন, তাকে কল্পনা করুন। মনে করুন, সে ঠিক আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে রয়েছে। মনের চোখ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন তাঁর চোখের রং, দেহের আকার, উচ্চতা, চুলের রং। আপনার বার্তার গ্রাহক যদি খুব দূরে থাকে, সেক্ষেত্রে তার ছবি চোখের সামনে রেখেও বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এবার কল্পনা করুন, আপনার বার্তা গ্রাহকের সঙ্গে যখন সামনা-সামনি কথা হয়, তখন মনের মধ্যে কেমন আবেগ কাজ করে। সেই অনভূতিগুলি ফের জাগিয়ে তুলুন। বিশ্বাস করতে শুরু করুন যে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সত্যিই আপনি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। সে আপনার যোগাযোগ করার চেষ্টায় সাড়া দিচ্ছে।
• বার্তা প্রেরণ:
এবার কোনও কথা বা বস্তুর সম্পর্কে ভাবুন। ধরা যাক আপনি বার্তা গ্রাহককে আপেলের ছবি পাঠাতে চান। মনে মনে আপেলের ছবি তৈরি করুন। আপেলের রং, তার আকার সম্পর্কে ভাবুন। চাইলে আপেলে কামড় বসিয়ে তার স্বাদও টের পেতে পারেন। এবার কল্পনা করুন আপেলটি সত্যি সত্যিই, আপনার মন থেকে তার মনে ভেসে যাচ্ছে। এই সময় মুখে ‘আপেল’ শব্দটিও বলতে পারেন। মনের চোখে দেখুন, ওই ব্যক্তি সত্যিসত্যিই আপনার পাঠানো ‘আপেলটি’ দেখতে পাচ্ছে। তার মুখের ভঙ্গিমায় সেকথা বোঝা যাচ্ছে। এই ভাবে নিজের মনের কথাও বার্তা গ্রাহককে পাঠাতে পারেন। এইভাবে নিজের বার্তা পাঠানো হয়ে গেলে শান্তভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। শরীর আলগা করে দিন। যেন বার্তাটি আপানার মন ও শরীর থেকে ভেসে তার কাছে পৌঁছে গিয়েছে। আর আপনার কোনও দায় নেই।
• অনুশীলন করুন:
বার্তা আদৌ পৌঁছেছে কি না তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমত বার্তা গ্রাহক কোন অবস্থায় রয়েছেন। তার মানসিক অবস্থা কেমন। গত কয়েকদিনের মধ্যে আপনার সঙ্গে তার মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটেছে কি না ইত্যাদি। তাছাড়া, আদৌ টেলিপ্যাথিক যোগাযোগে আপনি সফল হচ্ছেন কি না তাও জানা দরকার। তাই দূরে থাকা কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করার আগে, কাছাকাছি থাকা কোনও এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিষয়টি প্র্যাকটিস করুন। দু’জনে একই সময়ে, পাশাপাশি দুটি ঘরে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বসুন। আত্মীয়কে বার্তা প্রেরণ করুন। সে কোনও বার্তা বুঝতে পারলে খাতায় লিখে রাখতে বলুন। প্রথম দিকে হতাশ হতে পারেন। তবে খাতায় সে কী লিখেছে সেটিও দেখুন। যেমন আপনি লাল রঙের আপেলের কথা ভেবেছেন ও তাকে বার্তা পাঠিয়েছেন। আর সে খাতায় লিখেছে ‘লাল’। এমন হলে বুঝতে হবে, ফলাফল খারাপ নয় মোটেই। এইভাবে যোগাযোগ পোক্ত হতে শুরু করলে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে দু’জন আলাদা জায়গায় বসে কাটাকুটি খেলতে পারেন। সলভ করতে পারেন একই পাজল! এই ভাবে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব বুঝলে দূরে থাকা ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব।
• মনে রাখবেন:
মেন্টাল টেলিপ্যাথিতে, দুটি মানুষের মধ্যে মানসিক নৈকট্য থাকাটা খুব জরুরি। কারণ, নৈকট্য না থাকলে ফলাফল সম্পর্কে আপনি জানতেই পারবেন না। বলা হয়, টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কানে শুনতে পান না বা চোখে দেখতে পান না এমন মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব। এমনকী মনুষ্যেতর প্রাণীর সঙ্গেও টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ করা যায়। পোষা কুকুরের সঙ্গে এক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মালিক যেই মাত্র অফিস থেকে ঘরে ফেরার কথা ভাবছেন তখনই ঘরে বন্দী কুকুরটি উঠে দাঁড়াচ্ছে!
ক্রেডিট: চট্টগ্রাম সংবাদ প্রতিদিন