-Nishat Tasnim
মৃত্যুর পরেও মানুষের মস্তিষ্ক কিছুক্ষণ সক্রিয় থাকে। তবে হৃদস্পন্দন বন্ধ হলেই কাউকে মৃত বলে ধরে নেয়া হয়। শ্বাসযন্ত্র এবং রক্ত পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের দেহ ততক্ষণাৎ অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু হৃদপিণ্ড অচল থাকলেও মৃত্যুর পর কিছু সময় ধরে মস্তিষ্কে তড়িৎ প্রবাহ চলতে থাকে। বরং মস্তিষ্কই দেহের একমাত্র অঙ্গ যা সবার পরে নিষ্ক্রিয় হয়।
মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশটির নাম সেরেব্রাল কর্টেক্স। এই অংশটিই মানুষের চিন্তা-ভাবনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজটি করে থাকে। সেরেব্রাল কর্টেক্স অক্সিজেন ছাড়াও ২ থেকে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত সচল থাকে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরেও এই সময়টুকুতে মানুষের মস্তিষ্ক জাগ্রত থাকে। মৃত্যুর পর সব আত্মবাচক ও পেশী ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও অক্সিজেন এই সময়টা মস্তিষ্ক তার শেষ মুহূর্তগুলো অনুভব করতে থাকে। এই সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো শেষবারের মতো রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে যা তাদের অন্তিম মুহূর্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ঠিক এমন সময় লাইফ সাপোর্টের জন্য যদি কেউ সিপিআরের মাধ্যমে আপনার হার্ট চালু করতে সক্ষম হয়, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক আবার কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করা শুরু করবে। তবে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কও ধীরে ধীরে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশই মারা যেতে শুরু করে। তবে চুড়ান্ত মুহূর্তেও একটা অংশ সহজে হার মানতে চায় না। আর তা হলো স্মৃতি কেন্দ্র।
এই সময় মৃত ব্যক্তির জীবনের হাসি-কান্নার সবচেয়ে সংবেদনশীল স্মৃতিগুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেটিই মস্তিষ্কের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া। এরই সঙ্গে দেহের সর্বশেষ অঙ্গটিও নিশ্চুপ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা কিছু ক্লিনিকেল ডেড রোগীর লাইফ সাপোর্ট বন্ধ হওয়ার পর মস্তিষ্কের তথ্য সংগ্রহ করে স্ক্যান করে জানতে পারেন, মৃত্যুর পরও তাদের মস্তিষ্ক ১০ মিনিটের বেশি সময় পর্যন্ত সচল ছিল। অর্থাৎ প্রায় ১০ মিনিট ধরে তাদের অনুভূতি সক্রিয় ছিল।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কি জানেন? সবার রেকর্ডকৃত তথ্য একে অন্যের থেকে ভিন্ন ছিল। অর্থাৎ সবার মৃত্যুর অনুভূতি একে অপরের থেকে আলাদা। তাহলে একবার চিন্তা করুন তো, মৃত্যুর পরপরই যদি কারো ময়নাতদন্ত করা হয় বা অঙ্গ ডোনেট করার প্রস্তুতি নেয় হয়? তাদের অনুভূতিটা ঠিক কেমন হতে পারে?
©মোঃ সাইদ হাসান