কৌশিক রায়
স্বেচ্ছায় ঘটানো কোনও অঙ্গহানিকে ভ্যান গগ সিনড্রোম বলে। এই ধরনের স্ব-অঙ্গহানির মধ্যে পড়ে নিজের কোনও অঙ্গের ডগার দিক কেটে ফেলা, নিজের চোখ খুঁচিয়ে নষ্ট করা কিংবা নিজের গোপনাঙ্গ কাটা ইত্যাদি। এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে ডিসমর্ফিক ডিলিউশন কিংবা সাইকোসিসের মতো কোনও গভীর মনের অসুখও।
সাধারণত প্রাণঘাতি নয়
খুব বিরল ক্ষেত্রেই এই সব আত্মঘাতী আঘাত প্রাণনাশের কারণ হয়। সাধারণভাবে এগুলোকে আত্মহত্যার বহিঃপ্রকাশও বলা যায় না। দেখা গেছে, স্ব-অঙ্গহানি সেই সব মানুষরাই বেশি করেন, যাঁরা বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। অথবা এমনও হতে পারে তীব্র মানসিক চাপ, প্রচণ্ড রাগ কিংবা নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এই ধরনের কাজ করে থাকেন। এই স্ব-অঙ্গহানি রোগটির সঙ্গে অন্য যে ধরনের স্বভাব জড়িয়ে আছে তাকে উচ্চ মাত্রার আবেগপ্রবণতা বলা যেতে পারে।
বাস্তব একটি উদাহরণ
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতার একটি ঘটনা সভ্য সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই ঘটনার বিষয়ে যতটুকু জানা গিয়েছিল তা হল, এক প্রোমোটার তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে হত্যা করার পরেই তাঁর বিবাহ বর্হিভুত সম্পর্কের প্রেমিকা ও প্রেমিকার তিন বছরের কন্যাকেও হত্যা করেন। সবশেষে নিজের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলে এবং শরীরের নানা জায়গায় আঘাত করে আত্মঘাতী হন। জানা যাচ্ছে, জেট প্লেনের গতিতে উথ্থান হয়েছিল এই প্রোমোটারের। একদা ঘুঘনি বিক্রেতা এই মানুষটি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় নেমে খুব তাড়াতাড়ি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। তবে তাঁর আয় ও ব্যয়ের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য ছিল না। আর তাতে প্রচুর দেনার প্রবল অর্থনৈতিক চাপ তাঁকে পর্যুদস্ত করে দিচ্ছিল। সেই সঙ্গে দুই সংসারের প্রবল অশান্তিও তাঁকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। ছিল আরও কিছু অবৈধ যোগাযোগ। সম্ভবত সে কারণেই তাঁর মধ্যে ভ্যানগগ সিনড্রোম-এর এই বিরল প্রকারটি দেখা গিয়েছিল, যেখানে স্বেচ্ছায় নিজের গোপনাঙ্গ কেটে নেওয়ার পরেও তিনি আত্মঘাতী হন।