ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয়ের প্রধান হরমোন,এক ধরণের পলিপ্যাপটাইড, যা গ্লুকোজকে রক্ত থেকে কোষের মধ্যে প্রবেশ করা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো (আইল্যেটস অব ল্যাঙ্গারহেন্স-এর বিটা কোষ) থেকে নিঃসৃত হয়।
ইনসুলিন কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে তৈরি হয়..?
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কমানো জরুরি হয়ে পড়ে। একজন সুস্থ মানুষের দেহে এ কাজটি করে অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত এক ধরনের প্রাণরস বা হরমোন, এর নাম ইনসুলিন। কোষের গ্লুকোজ গ্রহণে ইনসুলিন এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিনকে কোষের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য প্রতিটি কোষের ঝিল্লিতে রয়েছে ইনসুলিন রিসেপটর (ইনসুলিন গ্রাহক)। রক্ত থেকে কোষের ভেতরে গ্লুকোজ প্রবেশের ক্ষেত্রে ইনসুলিন এবং ইনসুলিন রিসেপটর দুটিরই অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। ইনসুলিন এসে ইনসুলিন রিসেপটরকে সক্রিয় করলে কোষ একটি বার্তা পায়। তখন কোষের গ্লুকোজ ট্রান্সপোর্টারগুলো কোষঝিল্লির দিকে যায় এবং এদের মাধ্যমে গ্লুকোজ কোষের ভেতরে প্রবেশ করে। এই সংকেত না পেলে কোষের ভেতর গ্লুকোজ প্রবেশ করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় না। এক্ষেত্রে মূল সংকেতটিই দিয়ে থাকে ইনসুলিন। অর্থাৎ ইনসুলিন কোষের রিসেপটরে বিশেষ সংকেত প্রদান করলে রক্ত থেকে গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তা শেষ হয়।
কোষ যখন রক্তের সুগার নিতে বিলম্ব করে তখন রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাদের শরীরের কোষগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রক্ত থেকে গ্লুকোজ নিতে পারে না। ফলে তাদের রক্তে গ্লুুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। নানা কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের এই অস্বাভাবিক উপস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেমন- কারও কারও শরীরে হয়তো প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হয় না। আবার কারও ক্ষেত্রে শরীরে তৈরি হওয়া ইনসুলিন কোষঝিল্লিতে প্রয়োজনীয় গ্রাহকের অভাবে কাজ করতে পারে না।
আগে বিভিন্ন প্রাণীদেহ থেকে সংগৃহীত ইনসুলিন মানবদেহে ব্যবহƒত হতো। তা ছিল ব্যয়বহুল। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে তা ব্যবহারে নানা সমস্যা হতো। বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করা যায়, যার গুণাগুণ মানুষের দেহে উৎপন্ন ইনসুলিনের মতোই। এ প্রক্রিয়ায় মানুষের ডিএনএ থেকে ইনসুলিন জিনটিকে সংগ্রহ করে ব্যাকটেরিয়া এবং ঈস্টের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে সেখানে ইনসুলিন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আমরা জানি, ব্যাকটেরিয়া মাত্র ২০ মিনিটে বংশ বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ এ সময় পর একটি ব্যাকটেরিয়া পূর্ণাঙ্গ দুটি ব্যাকটেরিয়ায় পরিণত হয়। দুই থেকে চারটি হয়। এভাবে এটি দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। এভাবে লাখ লাখ কোষ অল্প সময়ের ব্যবধানে তৈরি করা যায় এবং এসব ব্যাকটেরিয়া হিউম্যান ইনসুলিন তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়। ল্যাবরেটরিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে ব্যাকটেরিয়ার ভেতর মানুষের ইনসুলিন জিন ঢোকানো হয় বলে ওই বিশেষ ব্যাকটেরিয়াগুলো হিউম্যান ইনসুলিন তৈরি করে থাকে। ওই ইনসুলিন পরিশোধন করেই বোতলজাত করে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়।
Answered by: Nazmus Sakib