লাল চিনি হলো সরাসরি আখ থেকে তৈরি অপরিশোধিত চিনি। লাল চিনিতে থাকে আখের সব উপাদান। যেমনঃশর্করা,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্লবিন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
পরিশোধিত পদ্ধতিতে চিনি তৈরির সময় এই পুষ্টি উপাদানগুলো দূর হয়ে যায়। তাছাড়া বিদেশ থেকে আমদানীকৃত চিনি তৈরিতে সবসময় আখ ব্যবহার করা হয় না। আখের বিকল্প উপাদান দিয়েও চিনি তৈরি হয়। এই চিনিতে মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। পরিষ্কার বা সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সালফার, হাড়ের গুঁড়ো। ধবধবে সাদা চিনি ডায়াবেটিস, হার্ট এট্যাক ও লিভার বিকল করার মত স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
লাল চিনির উপকারী কিছু দিক হলো:
১) এতে অনেক ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে।
২) আখের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং শরীরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়।
৩) লিভার সুস্থ রাখে ফলে জন্ডিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
৪) কোষ্ঠ কাঠিন্য ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করে।
৫) শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে,যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সে সম্পর্কে ডঃ উইলিয়াম কোডা মার্টিন তার গবেষণাপত্রে বলেন-
"চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সাথে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়।"।
সাদা চিনির ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করলে:
১) প্রতিনিয়ত এর গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। নিউরন কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়। যা স্ট্রোক ঘটায়।
২) সাদা চিনিতে অতিরিক্ত পরিমাণে থাকা ফ্রুক্টোজ হজম করাতে সাহায্য করে লিভার বা কলিজা। কিন্তু অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভার হজম করাতে না পারায় তা ফ্যাট আকারে জমা হয়। এতে করে লিভার ড্যামেজ বা লিভার নষ্ট হয়ে যায়।
৩) চিনি পরিশোধনে ব্যবহার হয় সালফার আর হাড়ের গুঁড়ো যা কিডনি বিকলাঙ্গ করে দেয়।
৪) সালফার ইনসুলিন নিঃসরণে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস হয়।