শিকারি পাখি চিল, বাজ কিংবা ঈগলের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর, তারা বহুদূরের জিনিসও বেশ পরিষ্কারভাবে দেখতে পারে। খাবারের সন্ধানে যখন উড়তে উড়তে বেশ উঁচুতে উঠে যায় এরা, তখন ভূমিতে বেশ বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে খাবার খুঁজতে পারে তারা।
মানুষের ক্ষেত্রে দৃষ্টিসীমা হলো, একদম স্থির হয়ে মাথা বা চোখ না নড়িয়ে জগতের যতটুকু জায়গা এক বারে দেখতে পারি, তা–ই। এই দৃষ্টিসীমার মাঝেও পুরোটুকু আমরা ঝকঝকে দেখতে পাই না। চোখের সামনে অল্প একটু জায়গা জুড়েই কেবল সুস্পষ্ট দেখি আমরা, ডানে-বামে ঝাপসা হয়ে আসে আমাদের দৃষ্টি। আমাদের চোখে ফোবিয়াস সেন্ট্রালিস একটিই।
চিলের মতো শিকারি পাখিদের প্রতিটি চোখে দুটি করে ফোবিয়াস সেন্ট্রালিস থাকে: একটি গভীর ফোবিয়াস সেন্ট্রালিস, অন্যটি অগভীর ফোবিয়াস সেন্ট্রালিস। দুই ফোবিয়াসই তীক্ষ্ণ ছবি গঠনে সাহায্য করে, তবে দ্বিতীয়টির তুলনায় প্রথমটির গঠনকৃত ছবি বহুগুণে স্পষ্ট।
কাজেই অনেক উঁচুতে উড়ার সময় চিল যখন কোনো শিকার খুঁজে পেয়ে তাকে টার্গেট করে, শিকারটিকে সে সব সময় তার প্রথম ফোবিয়াস সেন্ট্রালিসের (গভীর প্রতিবিম্ব গঠনকারীর) আওতায় রাখার চেষ্টা করে, যেন সে তা হারিয়ে না ফেলে। আর চিলের চোখের গঠনের ক্ষেত্রে মজার একটি বিষয় হচ্ছে, চিলের দৃষ্টিপথ কার্যত একটু বাঁকা। গভীর ফোবিয়াস সেন্ট্রালিস তার রেটিনার এমন জায়গায় গঠিত, যেখানে কোনো বস্তুর ছবি ফেলতে হলে, বস্তুটিকে চিলের চোখের সোজা সামনে হলে চলবে না। বরং চিলের ঠোঁট বরাবর একটি সোজা রেখা কল্পনা করলে, তার প্রায় ৪০ ডিগ্রি ডানে বা বামে বস্তুটির অবস্থান হতে হবে।
পাখিদের আকাশে ওড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ভারসাম্য। সেজন্য বায়ুতে ভারসাম্য রক্ষার্থে পাখির দেহকে রাখতে হয় টানটান সোজা। এর ফলে তারা উড়ার সময় বায়ুর বাঁধা অতিক্রম করতে ও দেহের উপর বায়ুর টান সর্বনিম্ন রাখতে সক্ষম হয়। চিলের চোখের ৪০ ডিগ্রি বক্রতার এই বিষয়টির জন্য চিল সোজা সরলরেখায় শিকারের দিকে নামে না। বরং বক্রপথে এমনভাবে নামে যেন তার মাথাটি সোজা থাকে কিন্তু চোখের গভীর ফোবিয়াসের দিক সব সময় ৪০ ডিগ্রি কোণে শিকারের দিকে থাকে। এটাই হল চিলের সর্পিলাকার গতিপথের নেপথ্য রহস্য।
কিন্তু হ্যাঁ, প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তারা মাথা বাঁকিয়ে উড়ে সোজা শিকারের দিকে যায়না কেন? উত্তরটা সহজ, কারণ মাথা বাঁকিয়ে উড়তে গেলে দেহ, মাথা, ডানা সোজা থাকবেনা, তাই উড়তে যেয়ে অতিরিক্ত বায়ুর বাঁধা মোকাবেলা করতে হবে। যা তাদের সময়, শক্তি উভয়েরই ক্ষয়ের কারণ। তাই চিল সোজা না উড়ে অনেক উঁচু থেকে বক্রপথে উড়ে এসে শিকার করে।
তথ্যসূত্র: বিজ্ঞানবাংলা, উইকিপিডিয়া, গুগল।