ক্রোমোসোম বংশগতির ধারক ও বাহক। বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণির সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় ক্রোমোসোমের ভিত্তিতে। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে, যার মাঝে এক জোড়া হলো সেক্স ক্রোমোসোম। এই সেক্স ক্রোমোসোমের X–ক্রোমোসোম দিয়ে মেয়ে ও Y–ক্রোমোসোম দিয়ে ছেলে সন্তান নির্ধারিত হয়। নিষেকের সম মা ও বাবা থেকে আগত কোন ক্রোমোসোম গুলো মিলিত হচ্ছে তার উপরেই সন্তানের লিঙ্গ নির্ভর করে।
প্রায় সব প্রাণির ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি সত্য হলেও ব্যতিক্রম দেখা যায় কিছু প্রজাতির কচ্ছপ ও সব ধরণের কুমির প্রজাতির প্রাণির ক্ষেত্রে। এদের ক্ষেত্রে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় ডিম ফোটানোর সময়কালীন তাপমাত্রার উপর। একে বলা হয় Temperature Dependent Sex Determination (TSD)। এমন প্রাণিঃ
কুমিরঃ
কুমির সাধারণত উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ায় পাওয়া যায়। এদের স্বাদু ও লবণাক্ত উভয় প্রকার পানিতেই পাওয়া যায়। কুমির মাত্র ৮-১০ বছর বয়সে প্রজননের জন্য উপযোগী হয়। সাধারণত জুলাই অথবা আগস্ট মাস এদের প্রজননের উত্তম সময়। এদের স্ত্রী-পুরুষ সাধারণত পানিতে মিলিত হয়। মিলনের সময় স্ত্রী-পুরুষ কুমির কয়েকদিন পর্যন্ত একইসাথে অবস্থান করে। সে সময়ে তারা বেশ কয়েকবার মিলিত হয় ও ডিমের নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সাধারণত মিলনের পর ডিম পাড়ার জন্য স্ত্রী কুমির প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে। সেখানে সে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ১০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিমগুলোর মধ্য থেকে শতকরা মাত্র ২০ ভাগ ফুটে বাচ্চা হয়। তন্মধ্যে শতকরা মাত্র ২ ভাগ বাচ্চা বেঁচে থেকে পূর্ণবয়স্ক হয়।
ডিম পাড়ার পর স্ত্রী কুমিরটি গর্তের প্রবেশমুখের পাশে লুকিয়ে থেকে ডিমগুলো পাহারা দেয়, যাতে কোনো শিকারী পশুপাখী ডিমগুলো নষ্ট করতে না পারে। বাচ্চার ক্ষেত্রে যত্নশীলতার দিক থেকে অল্প কিছু সরীসৃপের মাঝে কুমির অন্যতম।
ডিমগুলো পরিবেশের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফোটে।
কুমিরের অনেক অদ্ভুত বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে তাপমাত্রার প্রভাবে বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়া! স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গের বাচ্চা হওয়ার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোনো ক্রোমোসোম নেই। সাধারণত ডিম ফোটানোর সময় পরিবেশের তাপমাত্রা ৩১.৭˚ সেলসিয়াস এর নিচে হলে বাচ্চাগুলো হবে স্ত্রী লিঙ্গের। অপরদিকে ৩১.৭˚-৩৪.৫˚ সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ফোটা বাচ্চাগুলো পুরুষ লিঙ্গের অধিকারী হয়। আবার তাপমাত্রা ৩৪.৫˚ সেলসিয়াসের অধিক হলে স্ত্রী লিঙ্গের বাচ্চা জন্মায়।
কচ্ছপ:
কুমিরের মতো কচ্ছপের কিছু প্রজাতিতে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ তাপমাত্রার উপরে নির্ভরশীল, যেমন সী–গ্রীন কচ্ছপের ক্ষেত্রে স্ত্রী কচ্ছপ প্রজননের পর সমুদ্রসৈকতে বালিতে গর্ত করে ৭০–১৯০ টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে ও এরপর ডিম গুলো বালি দিয়ে ঢেকে রাখে। বালির তাপমাত্রার উপরে নির্ভর করে ডিমগুলো থেকে কোন লিঙ্গের সন্তান জন্ম নেবে। বালির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির কম হলে বাচ্চাটি ছেলে ও এর বেশি হলে বাচ্চাটি মেয়ে হয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমশই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এর ফলে এই প্রজাতির কচ্ছপের বেশিরভাগই মেয়ে কচ্ছপ জন্ম নেওয়ায় প্রজননের অভাবে প্রজাতিটি বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও টিকটিকির কিছু প্রজাতিতে এই বিষয়টি দেখা যায়।
তথ্যসূত্র: রোর, এই সময়।