সাধারণত অ্যালার্মের শব্দেই সকালের ঘুম ভাঙে আমাদের। তবে অনেকেই আছেন যাদের অ্যালার্ম ছাড়াও ঠিক সময়েই ঘুম ভাঙে। এর কারণ পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও ধারণা করা হয়, এটি আমাদের 'ইন্টার্নাল ক্লক' বা দেহঘড়ির সাথে সম্পৃক্ত। কখন জেগে উঠতে হবে, কখন ঘুমিয়ে থাকতে থাকবে, কখন ঘুমোতে যেতে হবে, এমনকি কখন সক্রিয় থাকতে হবে- তার সবই এর সাথে জড়িত।
মানুষের দেহঘড়ি মূলত আলো দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাকৃতিক আলো আছে কিনা এবং থাকলে কতটা আলো আছে সে সম্পর্কে তথ্য চোখ দিয়ে প্রবেশ করে এবং আমাদের সুপ্রাকায়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াসে যায়; এটিই মস্তিষ্কের সার্কাডিয়ান ছন্দকে নিয়ন্ত্রণকারী মূল কেন্দ্র। এর মাধ্যমেই শরীরে ঘুমিয়ে থাকা বা জেগে ওঠার সংকেত পৌঁছায়।
আলো ছাড়াও আরো কিছু উদ্দীপনা রয়েছে যা দেহঘড়িকে প্রভাবিত করে। যেমন, খাবার খাওয়ার সময়। যদি খাবার খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট থাকে, তাহলে সেটি অনুযায়ী চলে দেহঘড়ি।
একইসাথে, যদি আমরা নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাই এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জাগি, তাহলে ঘুমের মধ্যেও আমাদের শরীর বুঝতে পারে যে কখন জেগে উঠতে হবে।
অর্থাৎ, কেউ যদি নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী মেনে চলেন, তাহলে তার জন্য সকালে অ্যালার্ম ছাড়া ঘুম থেকে জাগা অস্বাভাবিক নয়। যেমন, কেউ যদি প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমাতে যান এবং সকাল ৭টায় উঠেন, তাহলে তার দেহঘড়িও সেভাবে নিয়ম মেনেই চলবে।
দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমালে ঘুমের যে ৩-৪টি ধাপ রয়েছে [হালকা নিদ্রা, গভীর নিদ্রা, রেম স্লিপ] তার সবই পূরণ হয়। সবগুলো ধাপ পূরণ হলে দেহঘড়িই সংকেত পাঠায় যে এখন ওঠার সময় হয়েছে। এতে করে অ্যালার্ম বেজে ওঠার আগেই ঘুম ভেঙে যায়।
বিশেষ করে যাদের কর্মক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকতে হয়, তাদের বেলায় দেখা যায় এমনটি। এ কারণে দেখা যায়, ছুটির দিনেও সেই একই সময়ে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। কারণ আমাদের মস্তিষ্কে ওই সময়ে জেগে ওঠার তথ্য জমা করা আছে।
মানুষের দেহঘড়ি কর্টিসল ও মেলাটোনিনের মতো কিছু হরমোনের সাথেও সম্পৃক্ত। এই হরমোনগুলোই আমাদের জেগে থাকা কিংবা ঘুমিয়ে থাকা নিয়ন্ত্রণ করে।
এক্ষেত্রে অবশ্য আরেকটি বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত, আর তা হলো- একজন ব্যক্তির আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা। অনেকেই আছে যারা আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল। এ কারণে সকালে সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথে তাদেরও ঘুম ভেঙে যায়। আবার অনেকে আছেন যারা এর কিছুই টের পান না।
মানুষের শরীরে দেহঘড়ি কিভাবে কাজ করে তার উপর ভিত্তি করে আমরা দুই ধরনের মানুষকে আলাদা করতে পারি। 'আর্লি স্লিপার', বা যারা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায়। এ ধরনের মানুষ সকালেও আগেভাগে ঘুম থেকে উঠতে পারেন। অ্যালার্ম ছাড়া ঘুম ভেঙে যাওয়া ব্যক্তিরা এই দলভুক্ত।
আরেকদল আছেন যারা ডিলেয়েড স্লিপ ফেজ ডিসঅর্ডারে ভুগেন। দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার কারণে তাদের দেহঘড়িও অন্যদের তুলনায় দেরিতে চলে; এতে করে সকালে তাদের দেহে বাকি ঘুমটা পুষিয়ে নেওয়ার চাপ থাকে। এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য সকালে অ্যালার্ম ছাড়া ঘুম থেকে ওঠা কষ্টসাধ্য। অনেকসময় দেখা যায়, অ্যালার্ম বাজলেও সেটি বারবার বন্ধ করে শেষে উঠতে বেশ দেরি হয়ে যায় তাদের।
[THE BUSINESS STANDARD]