"সেরোটোনিন" হরমোনের সাহায্যে ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়। অতিরিক্ত ঘুম সেরোটোনিনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, নিউরোট্রান্সমিটারকেও বাধা দেয়, সেজন্য অনেকেই সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার পরে মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় ঘুমানোর পর হঠাৎ ক্ষুধা এবং তীব্র তৃষ্ণা বোধ হয়, যার কারণে মাথাব্যথা শুরু হয়।
#.বিভিন্ন বয়সের জন্য ঘুমের আদর্শ সংখ্যা তালিকাভুক্ত :
নবজাতক শিশু: 14-17 ঘন্টা
শিশু: 12-15 ঘন্টা
বাচ্চারা: 11-14 ঘন্টা
কিন্ডারগার্টেন শিশু: 10-12 ঘন্টা
স্কুলের বাচ্চারা: 9-11 ঘন্টা
কিশোর: 8-10 ঘন্টা
প্রাপ্তবয়স্ক বা প্রাপ্তবয়স্ক: 7-9 ঘন্টা
65 এবং তার বেশি বয়সী বা বয়স্ক ব্যক্তিরা: 7-8 ঘন্টা
শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক উভয় ক্ষেত্রেই অনেকগুলি খারাপ প্রভাব রয়েছে যা একজন ব্যক্তির শরীরে হাইপারসোমনিয়া হতে পারে। এখানে কয়েকটি আছে:
#.অতিরিক্ত ঘুমে শরীরের উপর নিম্নলিখিত প্রভাব রয়েছে:
শারীরিক প্রভাব:
এটি ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
এটি স্থূলতার কারণ হতে পারে।
এটি মাথাব্যথা প্ররোচিত করতে পারে।
এর ফলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
এটি উর্বরতা গণনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
মানসিক প্রভাব:
অত্যধিক ঘুমের কারণে নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলি সমাধান করা প্রয়োজন:
এটি আপনাকে উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে।
এটি সেরোটোনিনের মাত্রা প্রভাবিত করে বিষণ্নতা আনতে পারে।
এটি নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে স্মৃতির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এটি ঘুমের হ্যাংওভারের কারণ হতে পারে, যা আপনাকে মূর্খ বা অস্থির করে তোলে।
এটি বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সাথে একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।
এটি বিরক্তি এবং খটকা লাগাতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য সাধারণত একটি নিষিদ্ধ বিষয় এবং তবুও এটি প্রাপ্তবয়স্কদের আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং অন্য কোন মানসিক সমস্যা সম্পর্কে কথা বলা অপরিহার্য। আপনি যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অত্যধিক হাইপারসোমনিয়া লক্ষ্য করেন তবে আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
পরীক্ষায় দেখা যায়, যারা ১০ ঘণ্টা ও তার বেশি সময় ঘুমান, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ ৪৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
গবেষণা অনুযায়ী, যারা অতিরিক্ত ঘুমান বা দিনের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটান এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় নন, তাদের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা চারগুণ বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত ঘুমের সঙ্গে যদি শরীরচর্চার অভাব যোগ করা হয়, তাহলে হতে পারে ত্রিমাত্রিক সর্বনাশ।
হতে পারে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো রোগ, যা বিশ্বব্যাপী কেড়ে নিচ্ছে ৪ কোটিরও বেশি প্রাণ এবং এ মৃত্যুহার সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুহারের চেয়েও বেশি।
#.জেনে নিন বেশি ঘুমানোর ফলে কী কী শারীরিক ক্ষতি হতে পারে:-
১.ডিপ্রেশন বাড়ে:
দীর্ঘ সময়ের ঘুম মেজাজকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি হতাশার দিকেও নিয়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘ ঘুম শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে হ্রাস করে। নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়ানোর জন্য আরও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনার মেজাজও ঠিক রাখবে।
২. ক্লান্তি:
স্লিপিং সাইকেল নষ্ট হয়ে গেলে উৎকণ্ঠা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। অত্যধিক ঘুমে দেহঘড়ির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত বিশ্রামের কারণে পেশী এবং স্নায়ু শক্ত হয়ে যায়। ফলে শারীরিক চাপ নিতে সমস্যা হয়।
৪. হরমোন:
বিশেষ করে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলো এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। বেশি ক্লান্ত বোধ করার কারণে শরীরে খুব কম শক্তি থাকে, যার কারণে মানুষ সাধারণত জাঙ্ক ফুড বা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। এই সব কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. নারীদের ফার্টিলিটি:
গবেষণায় দেখা গেছে ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন থেরাপিতে থাকা নারীরা যারা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান তারা তাদের সন্তান ধারণের সম্ভাবনা ৪৬ শতাংশ এবং যারা ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমান তাদের সন্তান ধারণের সম্ভাবনা থাকে ৪৩ শতাংশ।
৬.ডায়বেটিসের আশঙ্কা বাড়ে:
দীর্ঘ সময় ঘুমানোর ফলে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কম হয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। কয়েক বছর আগে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টিরও বেশি এই নিয়ে গবেষণা করা হয়। যেখানে বলা হয়, ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় এমন ব্যক্তির শরীরে ডায়বেটিসের ঝুঁকি বেশি।
৭.হৃদরোগ দেখা দেয়:
আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ঘুম বাম ভেন্ট্রিকুলারের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘ সময় ঘুমানোর কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যেসব মহিলা ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমান তাদের হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
৮.পিঠে ব্যথা হতে পারে:
যারা চেয়ারে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন, তারা যদি দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমান, তাহলে তাদের পিঠ, ঘাড়, কাঁধে ব্যথার সমস্যা হতে পারে।
৯.স্থূলতা দেখা দেয়:
অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরে মেদ জমে। ফলে শরীর মোটা হয়ে যায়। আবার শরীর মোটা হলে ঘুম আরও বেশি জেঁকে ধরে।
১০.ওজন বৃদ্ধি পায়:
বেশি ঘুমের কারণে দেহের ওজন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। এসব মানুষের ওজন বৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ বেশি থাকে।
১১.হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়:
নয় ঘণ্টার বেশি সময় নিয়মিত ঘুমালে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত ঘুমান- এমন তিন হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, অন্যদের অপেক্ষা দ্বিগুণ পরিমাণে করোনারি আর্টারি (হৃদরোগ) রোগের ঝুঁকিতে ভোগেন তারা।
১২.আয়ু কমতে পারে:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা বেশি ঘুমান তাদের দ্রুত মৃত্যুর আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি থাকে। ওই গবেষণাগুলো প্রায় ১৪ লাখ মানুষের ওপর করা হয়েছে।
১৩.মানসিক বিকাশে বাধা দেয়:
অতিরিক্ত ঘুমের কারণে মানসিক বিকাশ খুবই স্বল্প হয়। এতে কাজের অগ্রগতি লোপ পায় ও মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
সংগৃহীত - BBC, BanglaNews24.com, Jugantor.com,NewsBangla24.com, United we care.