গত ২৮ নভেম্বর, ২০২২ এ Proceedings of the National Academy of Science (PNAS) জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার [১] পর এই টপিকটা আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গবেষণাটি বিবর্তনের ফলে এক ধরণের ইঁদুরে কীভাবে Y ক্রোমোজোমের পরিবর্তে নতুন পুরুষ-নির্ধারক জিন তৈরি হয়েছে, সেসব দেখানো হয়েছে। Y ক্রোমোজোম যে হারিয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নতুন কিছু না। এখন এটা মানুষের ক্ষেত্র কতটা সত্য?
১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে যখন প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী বিবর্তিত হয়েছিল, তখন তাদের মধ্যে কোনো সেক্স ক্রোমোজোম ছিল না। পরিবর্তে, X এবং Y ক্রোমোজোম অন্যান্য ক্রোমোজোম সেটের মতোই অনুরূপ কাঠামোর সাথে আকারে অভিন্ন ছিল। তখন পুরুষ না নারী হবে তা নির্ভর করতো অন্যকিছুর ওপর। বর্তমানে Y ক্রোমোজোমের একমাত্র বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল একটি জিন, SRY, যা শুক্রাশয় বা টেস্টিসের বিকাশের জন্য একটি অন-অফ সুইচ হিসাবে কাজ করে। অন থাকলে সন্তান পুরুষ (XY), না থাকলে নারী (XX)। তো একটা সময়ে আমাদের কোনো এক পূর্বপুরুষদের মধ্যে একটি সাধারণ, নন-সেক্স ক্রোমোজোম এইরকম একটি অন-অফ সুইচ সহ একটি জিন তৈরি হয়েছিলো মিউটেশনের ফলে। এবং তখন থেকে হটাৎ করেই প্রজননের ফলে পুরুষ তৈরি করার জন্য Y-এর প্রয়োজন শুরু হলো।
কিন্তু যখনই Y ক্রোমোজোমের অস্তিত্ব আসলো তখন থেকেই এটি ক্ষয় হতে শুরু করলো। কেন ক্ষয় হতে শুরু হলো তা সংক্ষেপে বলি, সময়ের সাথে সাথে, জিন মিউটেশন মাধ্যমে বিকাশ ঘটায়, যার মধ্যে অনেকগুলি ক্ষতিকারক ঠিক আছে। তবে ক্রোমোজোম একে অপরের সাথে পুনরায় সংযুক্ত হয়ে এই ক্ষতিকারক মিউটেশনকে এড়াতে পারে। মিয়োসিসের সময়, যখন আমাদের শরীর শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু তৈরি করে, তখন পিতৃ ও মাতৃত্বের ক্রোমোজোমগুলি এলোমেলোভাবে মিশে যায়। এই জেনেটিক প্রক্রিয়াটি জিনের বিভিন্ন রূপকে ভেঙে দেয় — একইভাবে ক্ষতিকারক এবং উপকারী — এবং তখন এটা কেবল কার্যকরী কপি/অনুলিপি পাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি করে তোলে। সমস্ত ক্রোমোজোম এটি করে: মায়ের কাছ থেকে ক্রোমোজোম ১, বাবার ক্রোমোজোম ১ এর সাথে বাহু অদলবদল হয়, ইত্যাদি। কিন্তু Y-এর অদলবদল করার সহচর নেই। যেখানে X ক্রোমোজোম একে অপরের সাথে পুনঃসংযোজন করতে পারে, সেখানে Y ক্রোমোজোম সেটা পারে না, একে তো আর কোনো Y নেই আর অন্যদিকে X থেকে Y ক্রোমোজোম বেশ ছোটো। এবং যেহেতু একজন ব্যক্তির মধ্যে ২টি Y ক্রোমোজোম থাকে না (খুব রেয়ারলি থাকে) তাই ক্ষতিকর মিউটেশন হলেও Y সেটা রিকভার করতে পারে না। ফলে ক্ষতিকর মিউটেশনো Y এর ক্ষয় হবার সম্ভবনা থাকে।
সেক্স ক্রোমোজোম সিস্টেমের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আস্তে-আস্তে ক্ষয় হতে থাকে। তো আমরা যদি আমাদের বিবর্তনের সময় Y ক্রোমোজোমের দিকে তাকাই তবে সেটার ক্ষয়ও দেখতে পারবো। Y ক্রোমোজোমে এখন খুব কম সংখ্যক জিন আছে; সম্ভবত ৫৫ টা, এবং এর মধ্যে শুধুমাত্র ২৭টা Y-এর পুরুষ-নির্ধারক জিন। একসময় X এবং Y ক্রোমোজোমে জিনের সংখ্যা সমান ছিলো। ২০০৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা [২] বলছে, গত ১৬৬ মিলিয়ন বছরের মধ্যে মানুষ তার Y ক্রোমোজোমের ১,৬০০ অড জিনের বেশিরভাগই হারিয়েছে, প্রতি মিলিয়ন বছরে প্রায় ১০ টা করে। সে হিসাব তো একদিন সবটুকি হারিয়ে যাবার কথা আর সেটা ৫ মিলিয়ন বছরের মতো [৩]। কিন্তু সত্যিই কি একদিন Y সম্পূর্ণরূপে বিলীন হবে [৪]? - উত্তরটা একটু জটিল তবে গবেষণায় দেখা গেছে [৫ এবং ৬] যে Y এর ক্ষয় স্টেবল হচ্ছে।
২০১২ সালের এক গবেষণায় [৭] গবেষকরা রিসাস বানরের Y ক্রোমোজোমকে সিকোয়েন্স করে। এর সাথে মানুষের সিকোয়েন্স করা Y ক্রোমোজোমের সাথে তুলনা করে গবেষকরা দেখেছেন যে ২৫ মিলিয়ন বছর আগে মানুষ এবং রিসাস বানর বিবর্তনগতভাবে আলাদা হওয়ার পর থেকে মানুষের Y ক্রোমোজোম শুধুমাত্র একটা জিন হারিয়েছে। এবং ৬ মিলিয়ন বছর আগে শিম্পাঞ্জি থেকে আলাদা হবার পর কোনো জিন হারায়নি। এই ফলাফল ইঙ্গিত করে যে প্রতি মিলিয়ন বছরে প্রায় ১০ টা করে জিন হারানো ব্যাপারটিতে লিনিয়ারে কোনো ক্ষয় ঘটেনি, স্টেবল হয়েছে।
এর আগেও দুটি ইঁদুর প্রজাতি তাদের সম্পূর্ণ Y ক্রোমোজোম হারিয়েছে [৮]। Y-এর জিনগুলি হয় অন্য ক্রোমোজোমে শান্ট হয়েছে, বা প্রতিস্থাপিত হয়েছে, এবং শান্ট বা প্রতিস্থাপিত হওয়া জিন পুরুষ-নির্ধারক হিসাবে কাজ করেছে। তো উপরে যেই নতুন গবেষণার কথা বললাম সেটাই কিন্তু এই ফিল্ডে একদম নতুন না। তবে নতুন গবেষণায় এর পেছনে দায়ী জিন বিস্তারিত ভাবে খোঁজ করার চেষ্ট করা হয়েছে, অর্থাৎ Y ক্রোমোজোমের কোনো জিন ছাড়া কোন জিন পুরুষ-নির্ধারক জিন হতে পারে, সেসব।
এখন কথা হচ্ছে মানুষের ক্ষেত্রে কী হতে পারে? অনেক সাপের প্রজাতি “ফিমেল অনলি” এবং নিজেরাই বাচ্চা উৎপাদন করে, সেরকম কি হতে পারে? - না, মানুষের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব না আসলে। কারণ আমাদের বংশবৃদ্ধির কমপক্ষে ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ জিন রয়েছে যেগুলি কেবল তখনই কাজ করে যদি তারা শুক্রাণুর মাধ্যমে পিতার কাছ থেকে আসে। তো Y ক্রোমোজোমের প্রয়োজন টিকে থাকতে। কিন্তু নতুন গবেষণাটি এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে Y ক্রোমোসোজ ছাড়াও নতুন পুং লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন বিবর্তনের মাধ্যমেও মানুষ হয়তো টিকে থাকতে পারবে, বিলুপ্ত না হয়ে।
এখন এর বাস্তবতা নিয়ে যদি বলি তাহলেও উত্তরটা একটু যৌগিক। কারণ পুরুষের Y ক্রোমোজোমের ক্ষয় স্টেবল হয়েছে কিন্তু একদম থেমে থাকে নি। ৫ মিলিয়ন বছর না হলেও কোনোদিন হয়তো Y বিলুপ্ত হবে। কিন্তু এর মধ্যে ইঁদুরের মতো Y কে অন্য কোনো ক্রোমোসোজ দিয়ে প্রতিস্থাপিতও হতে পারে। যদিও এর আউটকাম কী হতে পারে সে ব্যাপারে বহু জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। [মনস্টার মানুষ?]
তো সারসংক্ষেপ হচ্ছে কী?
Y ক্রোমোসোজ বিলুপ্ত হলে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে?
- হতে পারে, কিন্তু না হবার সম্ভবনা বেশি, কারণ বেশ কিছু গবেষণ সেসবই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মানুষের মধ্যে Y ক্রোমোজোম ছাড়াও নতুন ধরণের পুরুষ-নির্ধারক ক্রোমোজোম বা জিন বিবর্তনীত হওয়া সম্ভব?
- হ্যা, কিন্তু আমি আপনি তা দেখে যেতে পারবো না, এটা নিশ্চিত থাকে।
রেফারেন্সঃ
১. https://doi.org/10.1073/pnas.2211574119
২. https://www.cell.com/fulltext/S0092-8674(06)00241-8
৩. https://link.springer.com/article/10.1007/s10577-011-9252-1
৪. http://www.nature.com/nature/journal/v415/n6875/full/415963a.html
৫. http://www.nature.com/nature/journal/v508/n7497/full/nature13206.html
৬. https://www.cell.com/cell/fulltext/S0092-8674(18)30116-8
৭. https://www.nature.com/articles/nature04101
৮. http://www.annualreviews.org/doi/abs/10.1146/annurev.genet.42.110807.091714?journalCode=genet
লেখা : Sabrina Badhon