বেশ কিছু বছর ধরেই অনলাইন পারসোনালিটি টেস্টগুলো বেশ জনপ্রিয়। বর্তমান সময়ে এমন মানুষ পাওয়া বেশ কঠিন যারা একবারও এমন পারসোনালিটি টেস্টগুলো ব্যবহার করে জানতে চায়নি সে আসলে মানুষ হিসেবে কেমন! আপনার মানসিক বয়স কত, মানুষ হিসেবে আপনি কেমন বা কোন টাইপের, আপনি ব্যতিক্রম কিনা এরকম টেস্টগুলোতে লাখো মানুষের উপস্থিতি মিলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অনলাইন পারসোনালিটি টেস্টগুলো আসলে কতটা নির্ভর যোগ্য? নাকি পুরোটাই বানোয়াট?
প্রথমে আসি এর উৎস কোথা থেকে তা নিয়ে। এই পারসোনালিটি টেস্টগুলো মুলত তৈরী করা হয় আর্মফোর্সের মিলিটারিদের জন্য। উদ্দেশ্য ছিলো খুবই সাধারণ, একজন আর্মি তার পারসোনালিটি নিয়ে জানবে এবং তার মধ্যে কি কি পরিবর্তন আনতে হবে সে সম্পর্কে অবহত হবে। তার পাশাপাশি সে আসলেই ফোর্সের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে দক্ষ কিনা তাও বের করা এই টেস্টের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো। এরপর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি বা উন্নতি ট্র‍্যাকিংয়ের জন্য সাইক্রিয়াটিস্টরাও এমন পারসোনালিটি টেস্টগুলো ব্যবহার শুরু করেন। যেগুলো আসলেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে কার্যকর। এভাবে আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হতে শুরু করে এইসব পারসোনালিটি টেস্টগুলো, পরবর্তীতে অনলাইনের এই যুগে এসে উন্মুক্ত হয় বেশ কিছু পারসোনালিটি টেস্ট ওয়েবসাইট ও লিংক এবং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগুলো বেড়েই চলেছে।
এবার আসল প্রসঙ্গে আসি, এইসকল অনলাইন পারসোনালিটি টেস্টগুলো সম্পর্কে ডেভিসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ব্যক্তিত্ব গবেষক সিমিন ভাজির বলেছেন, এই সকল পারসোনালিটি টেস্ট এর ক্ষেত্রে আপনাদের আরও বুদ্ধি খাটানো উচিত! এগুলো বোকা বানানো ছাড়া আর কিছু না। কোনো বিশেষজ্ঞ আপনার ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা করে না দিলে 'এইসব টেস্ট' আর জ্যোতিষী বিদ্যার মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।
বর্তমান সময়ে,অনেক জনপ্রিয় একটি কমার্শিয়াল পার্সোনালিটি টেস্ট এর উদাহরণ হলো, 'মায়ার্স-ব্রিগস টাইপ ইন্ডিকেটর'। এই টেস্ট সিস্টেমটি ১৬টি ভিন্ন "প্রকার"-এ বিভক্ত করে এবং প্রায়ই মানুষদের তাদের জন্য নির্ভরযোগ্য পেশা,আচর-আচরণ পরিবর্তন এবং রোমান্টিক জীবনের জন্য উপদেশ দিয়ে থাকে। যা পেতে একজনকে ১৫-৪০ ডলার খরচ করতে হয়!(বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ১,৫২০.৮৬-৪,০৫৫.৬২টাকা)। কিন্তু, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর অ্যাডাম গ্র‍্যান্ট এর মতে, এটি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। তার মতে,কতিপয় গবেষণা পদ্ধতির ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা নির্ভর করে পুনরাবৃত্ত ফলাফলের সাদৃশ্যের উপর। কিন্তু MBTI তে একই ব্যাক্তি একাধিক বার চেষ্টা করলে একাধিক রকম ফলাফল আসতে পারে। যেমনঃ প্রথমবারে আপনাকে ইন্ট্রোভার্ট দেখালেও পরের বার এক্সট্রোভার্ট দেখাতে পারে। তাই এর উপরও পুরোপুরি ভরসা করা ঠিক হবে না।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমেরিটাস মনোবিজ্ঞানী জিম বুচার এ সম্পর্কে বলেছেন, ব্যক্তিত্বের প্রশ্নাবলী প্রায় এক শতাব্দী আগে বিবর্তিত হতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিকদের ব্যক্তিত্ব এবং তাদের উপযুক্ততার জন্য প্রথম এটির ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমান সময়ে এটি বিবর্তিত হয়ে আসতে আসতে এর কার্যকারিতা হারাতে শুরু করেছে। বেশ কিছু মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসা ছাড়া বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ অমূলক ও অযৌক্তিক।
মুল কথা বর্তমানের কোন গবেষকই এইসকল টেস্টকে সম্পুর্ন স্বীকৃতি দিতে বা আসলেই কার্যকর বলতে নারাজ।
নাদিয়া ইসলাম || সায়েন্স বী
সোর্সঃ
https://www.psychologicalscience.org/news/how-accurate-are-personality-tests.html
https://www.vox.com/2014/7/15/5881947/myers-briggs-personality-test-meaningless
https://www.livescience.com/65513-does-myers-briggs-personality-test-work.html
https://www.scientificamerican.com/article/how-accurate-are-personality-tests/